Saturday, May 23, 2020

সুলাইমান সাদির কয়েকটি কবিতা

আপনাদের বলছি

আপনারা মানে আমাদের শত্রু নন

আপনারা মানে আমরাই

আমরাই ঘৃণাদের জন্ম দিচ্ছি প্রতিদিন

আমরা দম্ভ ও অহমিকারও দুধর্ষ জনক

আমাদের পায়ের পাতায় পিষ্ট হয় আপানাদেরই প্রেম পৌরুষ;

 

আমাদের ওপর ঘৃণার শাস্তি নেমে এলে আমরা দুর্গের ফটক খুলে ছেড়ে দেই মরণজয়ী সৈনিকদের

আমাদের সৈনিক আমাদের হৃদয়ের ব্যাকুল প্রার্থনারা

আপনাদের ঘৃণার শাস্তিরা আমাদের ঘিরে নেয়

আমরা জাস্ট প্রর্থনা করি আপনাদের জন্য

আমাদের প্রার্থনারা আপনাদের শাস্তিদের থেকে বাঁচাতে প্রাণপণ লড়ে যায়

আমাদের দুর্বল প্রার্থনাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়

আপনাদের ঘৃণাদের হত্যা করে আমাদের প্রার্থনারা আকাশে উঠে যায়

আমারা আপনাদের ঘৃণা থেকে বেঁচে যাই

আপনারা উপহাসে ফেটে পড়েন আমাদের জীবনের ভাঙাচোরা নতুন অধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে;

 

এভাবেই যুগের পর যুগ আমাদের কান্নার ঢেউয়ে ভেসে যায় আপনাদের ঘৃণারা

আপনাদের দাম্ভিক প্রতিভা তবু শোধায় আর প্রশ্ন করে, যে তোকে সৃষ্টি করেছে তার স্রষ্টা কি তিনিই?

 

মুক্তি ও মৃত্যুর বাণী শোনাতে শোনাতে গড়িয়ে এলো অন্ধকার

 

মানুষ ও মৃত্তিকার গল্পে এভাবে যেসব সভ্যতা ঢুকে যায়, কোদালের মতো খুঁড়তে থাকে কবর, করোনা।

বেদনার বিউগল ফেলে আসি মাঝপথে

না শিক্ষার্থী না ঈসা মসিহ

দুরবীন সময় ঝাপটা খায় বদনসিবের পর্দাব্যাপী;

 

একেকটা কানাগলি সিরাতুল মুসতাকিম বানিয়ে ফেলেন মহামতিগণ

শূন্যতার সবগুলো দরোজা খুলে দিয়ে প্রবেশ করতে থাকেন মুদিগণ, হাতুরে ডাক্তারগণ, ফেরিঅলাগণ

এমন ঘন ঘন আসা-যাওয়া আমাদের ক্লান্ত করে

লকডাউন নামিয়ে আনে পিঙ্ক কালারের চাঁদ, বিপর্যস্ত জোছনা

 

সরকারি প্রেমিকারা চাল-ডাল-নুন-তরকারি থলেয় থলেয় ঝুলিয়ে যান জানালায় জানালায়

তখন তোমাকে মনে মনে পড়ি, জপের মালা গলায় ঝুলিয়ে ঘুমিয়ে যাই সন্ধেবেলা

 

ও ছায়া ও চতুর জোছনা,

ভোরের আজান শুনতে শুনতে মিলিয়ে নিও সমস্ত হিসেব

ও করুণ কাকুতি,

তরুণীর বুকের স্পন্দনে রেখে যেয়ো একমুঠো প্রেম পূর্ণতা

 

শহরের সব জানালা খিল এঁটে দিলে ভূমিকাহীন হয়ে পড়ে দূরের ল্যাম্পপোস্ট

স্টেডিয়ামের কুকুরগুলো হাঁফাতে থাকে একজোড়া টিকিটের খোঁজে

আস্তাকুঁড়ের ইঁদুরগুলো মাসগুজার শুকনো জুটা সরাতে সরাতে হতাশাগ্রস্ত

এ গ্রীস্মে শহুরে ছারপোকারা রক্তহীন হয়ে পড়বে সদ্য ছুটি নেয়া শীতের দিনের মতো

শুধু কিছু ভয়ঙ্কর কঙ্কাল কান পেতে থাকবে তালা ভাঙার শব্দে

 

এমন সাইলেন্ট সময়ে কিছু কবিতা ছাড়া কারো গায়ে অলঙ্কার থাকবে না

নতুন প্রেমিকা ছাড়া কারো চোখে জ্বলবে না আশা ও সম্ভাবনার আলো।

 

পুস্করিনী থেকে

জানি

আমারে আপনারা খেলতে নিবেন না

দলভুক্ত করবেন না

শামিল করবেন না

পাঠ করতে দিবেন না গোষ্ঠীনামটাও

সামুদ্রিক কিড়ার মতো তলানিতে ঠেলতে ঠেলতে বিচ্ছিরি দৃশ্যের সাক্ষী হওয়ার চেয়ে ভনভন মাছি হওয়াই বেটার।

আপনাদের দায় আমার কাঁধে কোমরে প্যাঁচায়া রাইখা কী লাভ বলেন। আপনাদের ডরাই তো? থোরাই করি কেয়ার। আপনারা বাজুবন্ধে লুকায়া রাখেন সতত মায়া মরীচিকা। আপনাদের পাড়াপড়শি হতে পেরে আমার দমফুটা লাগছে। আমার সৌভাগ্যও প্রেসে যাবে। ষোলো পেইজের ফর্মার মতো কেটে যাবে বুকবরাবর।

আমার এই বরাবরটানের খাসলত বহুতদিনের।

আমি কি হুতুমপেঁচা, ভেঙচি দেখায়া ভাইঙা দিব স্মরণসভা?

 

চিৎকার

কতদিন সূর্যোদয় দেখি না

মেঘের ক্যানভাসে তুলির রঙের মতো ছড়িয়ে পড়তে দেখি না রোদ

পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্যগুলো ম্লান হয়ে পড়ছে পৃথিবীর বয়সের মতো

মানুষের হৃদয়ের একেকটি খিলান ঠিক যেভাবে ধসে পড়ছে কিসরার সিংহাসনের মতো

 

এই বুড়ো পৃথিবীর জন্য মাঝেমধ্যে মায়া হয়

মাঝেমধ্যে মনে হয় আমিও উত্তরাধিকার আদমের, নুহের, মুসার, ঈসার

আমার রক্তে বয়ে বেড়াচ্ছে ইউসুফের প্রেম, মহানবীর করুণাধারা

 

আমার কাঁধে হাজার বছরের আমানত

এক শতাব্দী ঘৃণার বিজয়োল্লাস আমাকে ধ্বসাতে পারে না

এক শতাব্দী বর্বরতা আমাকে ভাসিয়ে নিতে পারে না যে কোনো অন্ধকারে

যে কোনো মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াতে পারি এই নষ্ট সভ্যতার বিরুদ্ধে

শব্দে শব্দে গড়ে তুলতে পারি মহাদূর্গ সত্যের সুন্দরের

 

এইখানে জমে আছে কতগুলো চিৎকার

সেকেলে শব্দে বুনে রেখেছি দ্রোহ হাহাকার

আত্মার সবগুলো তার বেজে উঠতে ছড়িয়ে পড়বে খানখান মিউজিক

ধ্বংসের লেলিহান শিখায় একবার শুধু ভেসে উঠুক অনুতপ্ত পৃথিবীর মুখ।

The post সুলাইমান সাদির কয়েকটি কবিতা appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/2TwCtcy

No comments:

Post a Comment