Saturday, October 28, 2023

কেমন আছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘দারুল আরকাম মাদরাসা’

|| তাসনিফ আবীদ ||

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে ২০১৭ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প’(৬ষ্ঠ পর্যায়)-এর আওতায় দেশের প্রতি উপজেলায় যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই, সেখানে ‘দারুল আরকাম’ নামে ১০১০টি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৮ সালে ১০১০জন কওমি ও ১০১০জন আলিয়া মাদরাসার সনদধারী আলেম নিয়োগের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

শুরুতেই ছিল শঙ্কা-
কিন্তু একটি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা দেখভাল করার মতো লোকবল, সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ছিলো না। যে কারণে শুরু থেকেই প্রকল্পটি নিয়ে নানা কথা চলছিলো। প্রকল্পটির ভবিষ্যত নিয়েও দেখা দিয়েছিলো নানা শঙ্কা ও উদ্বেগ। সেই শঙ্কা পদে পদে বাস্তববে রূপ নেয়।

শঙ্কা রূপ নেয় অনিশ্চয়তায়-
‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসা’ ছিল একটি প্রকল্প। কওমি সনদের স্বীকৃতির পর এটিই প্রথম কওমি আলেমদের সরকারি নিয়োগ। শুরুতে ইফার নিজস্ব সিলেবাসে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান শুরু হলেও ২০১৯ সালে এসব মাদরাসা ৫ম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। কিন্তু একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয় প্রকল্পের মেয়াদ। এক সময় এই প্রকল্পটিও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে। এরপর থেকে শিক্ষকরা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েন। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা শঙ্কা দেখা দেয়। তবে ধর্ম-মন্ত্রণালয়ের বিশেষ চাহিদায় প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখা হয়।

দারুল আরকামের শিক্ষকরা জানান, ‘২০১৯ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে একটি জটিলতা তৈরি হবে এটা আমরা আগে থেকেই বুঝেছিলাম। সেজন্য বারবার আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি ছিল যেন সরকারের বিধি অনুসরণ করে এসব মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্ত করা হয়। কিন্তু সেটা হয়নি। করোনা মহামারীতে এ কারণে আমাদেরকে খুব কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়।’

অনিশ্চয়তা কাটিয়ে আলোর মুখ-
২০২০ সালের পুরো বছরটিই এভাবে কাটে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসার দুই হাজার ২০ জন শিক্ষকের। ওই সময় তাদের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারক লিপি, বিভিন্ন মন্ত্রীদের কাছে স্মারক লিপি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারক লিপি ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। এসব কর্মসূচীর পর আবারও আলোর মুখ দেখে প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠিত ‘দারুল আরকাম’।

২ শ’ কোটি টাকার প্রকল্প-
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদান করতে ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা’ নামে নতুন করে ১৯৯ কোটি ৬ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর।

প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়: (ক) জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত মোট ১০১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখা; (খ) সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি ও দেশে স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি; (গ) আরবি ভাষাশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতার মানোন্নয়ন; (ঘ) সাধারণ শিক্ষিতদের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের বিশেষ করে সরকার স্বীকৃত সনদধারী আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ আলেমদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।

প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রাখা হয়: (ক) ৩০৩০ জনের সম্মানি (২০২০ জন শিক্ষকের মাসিক সম্মানি ও ১০১০ জন সহায়ক কর্মীর সম্মানি); (খ) কমিটির সভা ও অন্যান্য ব্যয়; (গ) ৪০৫০ জন প্রশিক্ষণ; (ঘ) ৩৮৩৮০টি শিক্ষা ও শিক্ষণ উপকরণ, ৭৪০৩টি আসবাবপত্র, ৩০৪৩টি অফিস সরঞ্জাম ও ৮টি কম্পিউটার ক্রয়; (ঙ) ১০১১টি ইন্টারনেট/ফ্যাক্স, ৩০৩৪টি বইপত্র/সাময়িকী, ৪০৪০টি প্রচার/বিজ্ঞাপন, ৫৩৫৯২টি মুদ্রণ/বাঁধাই; (চ) ২টি যানবাহন চুক্তিভিত্তিক ব্যবহার।

কিছুটা স্বস্তিতে দারুল আরকামের শিক্ষকরা-
প্রকল্পটি ২০২২ সালে পাশ হলেও এর মেয়াদকাল যেহেতু ২০২১ থেকে ধরা হয় এবং ধর্ম-মন্ত্রণালয়ের বিশেষ চাহিদায় দারুল আরকামের কার্যক্রম শুরু থেকেই চলমান রাখা হয়, তাই চলতি বছরের মাঝামাঝিতে শিক্ষকদের আটকে থাকা বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়। পাশাপাশি আগের মেয়াদের ১১ হাজার ৩০০টাকা বেতনকে বাড়িয়ে এই মেয়াদে করা হয় ১২ হাজার ৫০০টাকা। এসবের পর দারুল আরকামের শিক্ষকদের মনে কিছুটা প্রশান্তি এলেও জটিলতা তাদের পিছু ছাড়ছে না।

দারুল আরকামে যত জটিলতা-
দারুল আরকামের শিক্ষকদের মতামত হচ্ছে, মুসলিম ছাত্ররা যেন প্রাথমিক ইসলামের জ্ঞান অর্জন করতে পারে সে জন্য প্রত্যেক উপজেলায় ২ টি করে এবতেদায়ি দারুল আরকাম মাদ্রাসা স্হাপন করা হয়েছে; যা প্রশংসার যোগ্য। ইসলামি ফাউন্ডেশনের আওতায় এই মাদ্রাসা সারা দেশেই সুনাম অর্জন করছে। কিন্তু মাদ্রাসার জাতীয় করণের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো আটকে আছে, যা হাজার হাজার শিক্ষকদেরকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলছে।

তাদের দাবি, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোন প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত রাজস্বখাতে যায়নি। তাই দারুল আরকাম এবতেদায়ি মাদ্রাসাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষা বিভাগের অধীনে নিয়ে জাতীয়করণ করা হোক। পর্যাপ্ত ভবন নির্মাণ করা হোক। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে বিনোদনের ব্যবস্হা করা হোক।’ তাহলে প্রাইমারী স্কুলের মতো দারুল আরকামের শিক্ষকরাও ইসলামের শিক্ষা শিশুদের অন্তরে ঢেলে দিয়ে দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে সক্ষম হবে।

দারুল আরকামে শিক্ষকতা করেন ময়মনসিংহের ভালুকার এমন এক শিক্ষক জানান, দারুল আরকামে ছাত্র-ছাত্রী ধরে রাখতে হলে উপবৃত্তি প্রয়োজন। সরকার প্রাইমারি সেক্টরে ছাত্র-ছাত্রী ধরে রাখার জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্হা করেছে। এমনকি, ইতিমধ্যে দেখেছি উপবৃত্তি দ্বিগুণ করেছে। দরিদ্র এলাকায় অভিভাবকরা এসব বিষয় মাথায় রাখে। তাই তারা তাদের সন্তানকে অনেক সময় উপবৃত্তির জন্য প্রাইমারিতে পাঠিয়ে দেয়। আমাদের দাবী, দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসায় উবৃত্তি চালু করা হোক। না হয় দরিদ্র এলাকায় শিক্ষার্থী ধরে রাখতে পারবে না দারুল আরকাম।

এদিকে দারুল আরকামের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রকল্পটির আরো কিছু জটিলতার কথা। দারুল আকরামের সিলেবাস নিয়ে দ্রুতই কাজ করার দাবি তাদের। বর্তমানে দারুল আরকাম মাদ্রাসায় কিরাআতুল কুরআন, আল-হাদীসুন্নাবী, আল-লুগাতুল আরাবিয়া, আদ্দীনিয়াত, সমাজ বিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। তারা জানান, শিশুদের জন্য চলমান সিলেবাসটি খুবই কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া বইয়ের পরিমাণও অনেক। শিশুদের জন্য সবগুলো বই আত্মস্থ করা জটিল হয়ে যায়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শ্রেণি শিক্ষকের অভাবও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চালু হওয়া এই মাদরাসা ব্যবস্থাকে আরো কীভাবে সৃজনশীল করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

এদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক শিক্ষক জানান, দারুল আরকামে চাকরি করছি ঠিক কিন্তু কোন রকম শান্তিতে নাই। পোস্টিং নিজ উপজেলা থেকে প্রায় ১১০ কি.মি. দূরে। এছাড়া থাকার জায়গা নেই। পেশাব-পায়খানার ভাল জায়গাও নেই। কোন রকম একটি ছিল, তা বন্যায় একবারে ভেঙ্গে গেছে। এমন আরো অনেক সমস্যাই পোহাতে হচ্ছে।

আবারো অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে দারুল আরকাম-
দারুল আরকাম একটি অলটারনেটিভ শিক্ষা ব্যবস্থা। এটা শিশু ও গণশিক্ষার মতো নয়। আর কোনো প্রকল্প বা প্রজেক্ট সারাজীবন চলে না। দারুল আরকাম মাদরাসার চলমান প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এবারের মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালের মতো আবারো বড় কোনো সঙ্কায় হয়তো পড়তে পারে দারুল আরকামের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঝরে পড়তে পারে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। তাই যত দ্রুত সম্ভব একে রাজস্বকরণের দাবি তুলছে সংশ্লিষ্টরা।

The post কেমন আছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘দারুল আরকাম মাদরাসা’ appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/loBuQ8S

Tuesday, October 3, 2023

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন যে তিন বিজ্ঞানী

ফাতেহ ডেস্ক:

পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখায় এ বছর নোবেল পুরস্কার পেলেন পিয়া অগোস্টিনি, ফেরেঙ্ক ক্রুসজ এবং অ্যান ল’হুইলার। ইলেকট্রন গতিবিদ্যার গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সুইডেনের র‌য়্যাল সুইডিশ একাডেমি বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।

ইলেকট্রন গতিবিদ্যায় পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে আলোর অ্যাটোসেকেন্ড পালস তৈরি করার বিষয়টি ওই তিনজন বিজ্ঞানীর গবেষণায় দেখানো হয়েছে। তার তিনজন এমন আলোর ফ্ল্যাশ (ঝলকানি) তৈরি করেছেন যেগুলো ‘অতি দ্রুত চলাচলকারী’ ইলেকট্রনের স্ন্যাপশট নিতে পারে।

প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। প্রথম দিন ঘোষণা করা হয় চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল। ছয়টি বিভাগে ছয় দিন নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি পুরস্কারের মূল্য ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ৯ লাখ ডলার)।

১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল দেওয়া শুরু হয়। এরপর থেকে ১১৬ বার এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২২২ জন পদার্থবিজ্ঞানী সম্মানজনক এই পুরস্কার জিতেছেন।

মূলত মোট ছয়টি বিভাগে ছয় দিনে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে সোমবার (২ অক্টোবর) এ বছরের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হয়। প্রথম দিন ঘোষণা করা হয়েছে চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন করোনাভাইরাসের টিকার দুই গবেষক। যৌথভাবে নোবেলজয়ী এই দুই গবেষক হলেন- হাঙ্গেরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী কাটালিন কারিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ড্রিউ ওয়েইজম্যান।

এদিকে বুধবার (৪ অক্টোবর) রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর ৫ অক্টোবর সাহিত্যে আর ৬ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। দুই দিন বিরতি দিয়ে ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পর্দা নামবে।

The post পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন যে তিন বিজ্ঞানী appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/7BJj0di