Friday, October 28, 2022

২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছে ৪৭৬৪৬ আমেরিকান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৪৭৬৪৬ জন আত্মহত্যা করেছে। আগের বছরের চেয়ে তা ৪% বেশি অর্থাৎ ২০২০ সালে ৪৫৯৭৯ জন আত্মহত্যা করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ দফতরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিসটিক্স সূত্রে আত্মহত্যার প্রাথমিক এসব তথ্য শুক্রবার জানা গেছে।

আত্মহত্যার এ সংখ্যা প্রতিলাখে ১৪ জন। দু’বছরের তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা গেছে গত বছরের অক্টোবরে আগের বছরের অক্টোবরের চেয়ে ১১% বেশি আমেরিকান আত্মহত্যা করেছে। এ সংখ্যা ৪২১১। গত বছর আত্মহত্যাকারির মধ্যে পুরুষের হার ২২.৭% এবং মহিলার হার ছিল ৫.৬%। করোনায় লকডাউনে যাবার সময় থেকেই মানসিক অসুস্থতার হার যেমন বেড়েছে, আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ধনী-গরিব সকলের মধ্যেই মানসিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ২০২০ সালে। এর সাথে যোগ হয়েছে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতি থেকে বিরাট জনগোষ্ঠিকে উদ্ধারকল্পে রাজনীতিকরা সরব হলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অধিকন্তু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে পরস্পরকে দোষারোপ করেই সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে হলে বিবেকসম্পন্ন আমেরিকানরা মনে করছেন।

করোনার ভয়ংকর ছোবলে বিরাট জনগোষ্ঠি আর্থিক সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এসব পরিবারের তরুণ-তরুণীরা হতাশায় নিপতিত। মানসিক বিষন্নতায় আক্রান্ত। পারিবারিক চিকিৎসকরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নানাভাবে। কিন্তু ফেডারেল প্রশাসন কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণে এখন পর্যন্ত আন্তরিকতা প্রদর্শন করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

The post ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছে ৪৭৬৪৬ আমেরিকান appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/7mdx1g0

Monday, October 24, 2022

‘ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় একমত মুসলিম দেশগুলো’ : কী আছে ওআইসির ইস্তাম্বুল ঘোষণায়?

মুনশী নাঈম:

ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে এবং ইসলামফোবিয়া ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রতিরোধ করতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সম্মেলনে একটি ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে। শনিবার (২২ অক্টোবর) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর তথ্যমন্ত্রীদের ১২তম ইসলামী সম্মেলনে তা গৃহীত হয়। ইস্তাম্বুল ঘোষণাপত্রে ওআইসি সদস্যদেশ হিসেবে বাংলাদেশও সাইন করেছে।

সম্মেলনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত দুটি প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়। এক. ৭৬/২৫৪ নং প্রস্তাব। এটি গত ১৫ মার্চ ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবসে গৃহীত। দুই. ৭৬/২২৭ নং প্রস্তাব। এটি ২০২১ সলের ২৪ ডিসেম্বর গৃহীত ‘মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার এবং সুরক্ষার জন্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ শীর্ষক প্রস্তাব।

বিশ্নেষকরা বলছেন, এই সম্মেলনে মূলত ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় মুসলিম দেশগুলো একমত হয়েছে। সম্মেলনটির লক্ষ্যও ছিল, মিডিয়া ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইসলামী দেশগুলোর সহযোগিতার বিকাশ এবং শক্তিশালী করা। এতে ৫৭টি দেশের মন্ত্রী এবং উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ইসলামিক বিশ্বের মিডিয়া, যোগাযোগ ও তথ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করেন।

কী আছে ওআইসির ইস্তাম্বুল ঘোষণায়?

ইসলামোফোবিয়া ছড়ানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও গ্লোবাল থিংক ট্যাংকের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তুরস্কের যোগাযোগ অধিদফতরের প্রেসিডেন্ট ফাহরেতিন আলতুন। তিনি সম্মেলনে দেয়া উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ভুল তথ্য বিশ্বজুড়ে ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার ত্বরান্বিত করে। এই ইসলামোফোবিয়া বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে এবং বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে। তাই সমগ্র বিশ্বের উচিত ইসলামফোবিয়াকে একটি প্রকাশ্য ঘৃণামূলক অপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে দেখা এবং এই অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করা। এই অপরাধের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করা শুধু মুসলমানদের নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও অন্যতম প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তাই এই ইস্তাম্বুল ঘোষণায় ভুল তথ্যরোধ এবং ইসলামফোবিয়া থামাতে মিডিয়ার সঠিক ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়েছে। নিচে ঘোষণার গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো তুলে ধরা হলো।

১. পোস্ট-ট্রুথ এরা বা সত্য-উত্তরকালের ডিজইনফরমেশন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বের উপর জোর দেয়া। পাশাপাশি লড়াইয়ের স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রণয়ণ করা।

উল্লেখ্য, পোস্ট-ট্রুথ এমন একটা পরিস্থিতি, যখন মানুষ সঠিক তথ্য ও প্রকৃত ঘটনার ওপর নয়, বরং তার বিশ্বাস ও আবেগের ওপর ভিত্তি করে কোনো বিষয়কে গ্রহণ বা বর্জন করে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো বিষয়ের বিশ্লেষণে মানুষের কাছে তাঁর আবেগ ও বিশ্বাসই প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

২. স্বল্প সময়ে নির্দিষ্ট সমস্যা এবং সম্ভাব্য পরিস্থিতি বুঝতে হবে। মধ্যম সময়ে তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে যোগাযোগ ও কৌশল বাড়াতে হবে। তারপর দীর্ঘমেয়াদী মিডিয়া কন্টেন্ট সরবরাহ করতে হবে।

৩. ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে এবং ইসলামফোবিয়া বিরুদ্ধে লড়াই করতে নতুন এবং আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে।

৪. মুসলিম দেশগুলোর মিডিয়ায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ দাবির স্বপক্ষে প্রচারণা চালাতে হবে।

৫. শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তিদের, বিশেষ করে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর শরণার্থীদের সমর্থন করার জন্য মিডিয়ায় আন্তর্জাতিক সংহতি এবং সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।

৬.ইসলামী সংস্কৃতি এবং বিশ্বের অন্যান্য সংস্কৃতির মধ্যে ডায়ালগ বাড়াতে হবে।

৭. অমুসলিম দেশগুলোতে যে ইসলামিক কালচার এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য ধ্বংযজ্ঞের শিকার হচ্ছে, মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সেইসব এলাকায়, যেখানে আদিবাসী মুসলিম সম্প্রদায় জাতিগত নির্মূলের শিকার হয়েছিল৷

৮. ওআইসি মিডিয়া ফোরাম (ওএমএফ)-এ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা।

সম্মেলনে বাংলাদেশ কী বলেছে?

সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সম্মেলনে তিনি জঙ্গিবাদ দমন, বিভ্রান্তিকর তথ্যরোধ এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি বিষয়ে কথা বলেন।

জঙ্গিবাদ দমনে তিনি বলেন, ইসলামের মূলমন্ত্র শান্তি। ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। এ তথ্য বিশ্বজনের কাছে তুলে ধরতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও এর সদস্যদেশগুলো বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে পারে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের পরিবেশ বজায় আছে। ধর্মকে কেউ যেন জঙ্গিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণুতার (জিরো টলারেন্স) নীতি নিয়েছে সরকার।

বিভ্রান্তিকর তথ্যরোধ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ সম্পর্কে বৈশ্বিক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সঠিক প্রচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও মানবতার খাতিরে ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। করোনা মহামারি, ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার ভেতরেও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। এটি নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। তা যত দ্রুত হয়, ততই সবার জন্য মঙ্গল।’

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেন হাছান মাহমুদ। ফিলিস্তিনিদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মনে করে, স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনই এ বিষয়ে একমাত্র সমাধান। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি কোনো দেশের জাতীয় কোনো ইস্যু স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন থেকে আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না।’

The post ‘ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় একমত মুসলিম দেশগুলো’ : কী আছে ওআইসির ইস্তাম্বুল ঘোষণায়? appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/nk2XZWg

Saturday, October 22, 2022

দেশে বাড়ছে দুর্ভিক্ষের ভয় : আলেমরা যা বলছেন

রাকিবুল হাসান নাঈম:

আগামী ২০২৩ সাল বিশ্ববাসীর জন্য সংকটের বছর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক নানা কারণে আগামী বছরটি মন্দার হবে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ইতোমধ্যে সেই মন্দা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশেও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে উদ্বেগের সঙ্গেই এ রকম কথা বলছেন। তিনি সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করে এসেছেন। ভ্রমণের সময় বিশ্বের বহু নেতা ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরাই নাকি তাঁকে আসছে ২০২৩ সালে মন্দা ও দুর্ভিক্ষের আভাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এডিবি, আঙ্কটাডসহ বিশ্বখ্যাত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও দাতাসংস্থাগুলোর পূর্বাভাস তুলে ধরেও খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের শঙ্কার কথা বলছেন।

তার বক্তব্য কতটা উদ্বেগের? আসলেই কি দুর্ভিক্ষ আসছে? দেশের আলেম সমাজ কী ভাবছেন?

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হালকাভাবে নেয়া যাবে না’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হালকাভাবে নেয়া যাবে না বলে মনে করেন আলেম লেখক ও গবেষক ড. আ ফ ম খালিদ হুসাইন। তিনি ফাতেহকে বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী যখন দুর্ভিক্ষের আগাম বার্তা শোনান, তার বার্তাকে হালকাভাবে নেয়া যাবে না। তিনি সবদিক বিবেচনা করেই কথা বলেন। তিনি বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যপণ্যের ঘাটতি, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, অস্বাভাবিকভাবে ডলারের দর বাড়ার ফলে দেশে যে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন; এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এর প্রভাব কেমন হতে পারে, তারও একটা হোমওয়ার্ক করেছেন। তারই আলোকে তিনি বারবার মানুষকে সতর্ক করছেন এবং সময় থাকতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। আমি মনে করি, এটা খুবই ইতিবাচক যে প্রধানমন্ত্রী এটা নিয়ে আগেভাগেই ভেবেছেন।’

বাংলাদেশের সামনে সংকটগুলো তুলে ধরে এই আলেম গবেষক বলেন, আমাদের রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। ডলার আয়ের সবচেয়ে বড় খাত রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। গত মাসে দুটোই কমেছে। আমরা রফতানি কম করি, আমদানি বেশি করি। আমাদের অনেক মেগা প্রজেক্ট রয়েছে। যেগুলোর ঋণ পরিশোধ করা শুরু হবে ২০২৩ সালে। ফলে সবদিকে দিয়েই বাংলাদেশে একটা সংকটের মুখে আছে। এই সংকট কাটানোর জন্য পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে।

সংকট কাটানোর জন্য কী করা যেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্য মজুত করতে হবে। উৎপাদশীলতা বাড়াতে হবে। কোনো পতিত জমি অনাবাদ রাখা যাবে না। কৃষির জন্য সার দরকার। বাংলাদেশের ৮৬ ভাগ পটাশিয়াম সার রাশিয়া থেকে আসে। অন্যান্য সারও আসে বিভিন্ন দেশ থেকে। এখন থেকেই আমাাদেরকে সার এনে মজুত করতে হবে। শুধু মজুত না, সার তৈরী করতে হবে। চাল, তেল , গমসহ আরও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারপণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। সরকারকে পারিকল্পনামাফিক এসব করতে হবে।

তিনি বলেন, পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে আসন্ন দুর্ভিক্ষে আমরা সহনীয় দিন যাপন করতে পারবো।

সিপিডির গবেষণা

বৈশ্বিক মন্দা এবং সুপরিকল্পনার অভাবে সত্যিই বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে অর্থনীতির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ৭টি সঙ্কটের মুখে বাংলাদেশ। সেগুলো হলো—ডলার সঙ্কট, জ্বালানি সঙ্কট, মূল্যস্ফীতি সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সঙ্কট, করোনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সঙ্কট।

গবেষণায় বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে এ ৭টি সঙ্কট বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির পথে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী ছয় মাস-এক বছরের মধ্যে তা কেটে যাবে, এমনটি মনে করার শক্ত কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে স্বল্পকালীন পদক্ষেপ হিসেবে সঙ্কট উত্তরণের একমাত্র পথ হলো জাতীয়ভাবে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপের সঙ্গে থাকা এবং ব্যয়ের খাতে শুধু উৎপাদনশীল খাতেই বিনিয়োগ করে যাওয়া যাতে তার রিটার্ন আসে।

দুর্ভিক্ষ এড়াতে সিপিডির বলছে, এখনই খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ৪৫টি দেশ খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কায়। অথচ বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা গড়ে তোলা হয়নি। মানুষ খাবার কমিয়ে দিলেও কমপক্ষে ২৯টি খাদ্যসামগ্রী আমদানিতে বর্তমানে উচ্চ কর ও শুল্ক আদায় হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কের হার কমানো ও বেসরকারি খাতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বেতন বাড়াতে হবে। সার্বিকভাবে এ বহুমুখী সঙ্কট উত্তরণের উত্তম সমাধান হলো অতি দ্রুত কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডাসহ বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয়ভাবে বহুমুখী সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা। যাতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে কোনো একটি উদ্যোগে আরেকটি সংস্থা, বিভাগ বা মন্ত্রণালয় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি ‘বিশ্বে কি মন্দা আসন্ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির তিন মূল চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপের অর্থনীতি দ্রুত গতি হারাচ্ছে। ফলে আগামী বছরে সামান্য আঘাতেও মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেই প্রতিবেদনের পরই মূলত মন্দার বিষয়টি আলোচনায় আসে। ৪ অক্টোবর দুর্গোৎসব উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম মন্দার বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনা করেন। এরপর ৬ অক্টোবর বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একটা আশঙ্কা, ২০২৩ সাল একটা মহাসংকটের বছর হবে। সেজন্য আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার। যার যার জায়গা আছে, চাষ শুরু করে দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য যেটুকু বিদ্যুৎ দরকার সেটুকু দিতে পারব। জনগণের কষ্ট যেন না হয়, সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।’

The post দেশে বাড়ছে দুর্ভিক্ষের ভয় : আলেমরা যা বলছেন appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/0mMSPXU

Monday, October 17, 2022

কমছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা : হোমনায় চাপ বাড়ছে মাদরাসাগুলোর ওপর

মুনশী নাঈম:

কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে। পক্ষান্তরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে মাদরাসায়। এতে যেমন চাপে আছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ, তেমনি চাপে আছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষও। প্রাইমারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্কুলে ছাত্রদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে মাদরাসাকে দোষারোপ করে রীতিমতো কাঠগড়ায় তুলছেন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তারা খড়গহস্ত হবার কোশেশ করছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষের উপর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ছাত্ররা মাদরাসামুখী হচ্ছে। বিশেষ করে করোনার পর মাদরসামুখী ছাত্রদের সংখ্যা বাড়ছে।

মাদরাসার উপর চাপ বাড়ছে

প্রাইমারি শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুল থেকে যেসব ছাত্র ঝরে পড়ছে, তারা অধিকাংশই মাদরাসায় ভর্তি হচ্ছে। ফলে মাদরাসাকেই প্রভাবক মনে করছে প্রাইমারি কর্মকর্তারা। প্রাইমারিতে ছাত্র বাড়ানোর একটাই পন্থা—মাদরাসামুখী ছাত্রদের স্রোত আটকে দেয়া।

হোমনা থানার একটি মহিলা মাদরাসার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, হোমনা থানার মাদরাসার মুহতামিমদের ডেকেছিলেন প্রাইমারি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, যেন স্কুলফেরত ছাত্রদেরকে স্কুলে ফেরত দেয়া হয়। এছাড়াও আরও বিভিন্ন কটুকথা বলা হয়।

তবে যেহেতু এ বিষয়ে সরকারি লিখিত কোনো নির্দেশনা নেই তাই লিখিত কোনো নির্দেশনা দেয়া হয় না। কর্মকর্তারা যা বলেন, বলেন মৌখিক। ওই শিক্ষক ফাতেহকে বলেন, যেহেতু লিখিত কেনো নির্দেশনা নেই, তাই বিষয়টিকে উলামায়ে কেরামও তেমন গুরুত্ব দেননি।

স্কুলে কেন ছাত্র কমছে?

স্কুলে ছাত্র কমার পেছনে করোনায় স্কুল বন্ধ এবং ক্লাস ঠিকমতো না হওয়াকে দায়ি করেছেন শিক্ষকরা।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় হোমনা থানার নিলুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইনুদ্দিনের সঙ্গে। ফাতেহকে তিনি জানান, করোনার আগে তার স্কুলে ছাত্র ছিল ২১১ জন। এখন তার স্কুলে ছাত্র আছে ১৪০ জন। সরকারি নিয়ম হলো, প্রতিটি স্কুলে ৪০:১ অনুপাতে ছাত্র-শিক্ষক থাকবে। তার স্কুলে ৫ জন শিক্ষক। এ হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ছাত্র থাকার কথা। ৪০:১ অনুপাতে ছাত্র না থাকলে স্কুলের শিক্ষকদের উপর চাপ আসে। কেন ছাত্র কম, জবাবদিহি করতে হয়।

কেন ছাত্রসংখ্যা কমছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত, করোনায় অনকদিন স্কুল বন্ধ ছিল। দ্বিতীয়ত, ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখা থেকে দীর্ঘসময় দূরে থাকার কারণে পড়াশোনা থেকে মন উঠে গেছে এবং বিভিন্ন ডিভাইসে মজে গেছে। পক্ষান্তরে মাদরাসা এর বিপরীত। করোনার একদম পিক টাইমে শুধু মাদরাসা বন্ধ ছিল। তাছাড়া বাকি সময় খোলা ছিল। তাদের পড়াশোনায় ঘাটতি হয়নি। ফলে অভিভাবকরা সন্তানদেরকে মাদরাসায় দিয়ে দিয়েছে। দেখা গেছে, যারা মাদরাসায় গিয়েছে,পড়াশোনায় কেবল তারাই আছে। যারা স্কুলে ছিল, তার পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কথা হয় হোমনা থানার গোয়ারিভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তাহেরের সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে জানান, তার স্কুলে করোনার আগে ছাত্র ছিল ৪০০। এখন ছাত্র আছে ২৫০। তার মতে, স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছে ব্যাপকহারে। চারদিকে পুরুষ এবং মহিলা মাদরাসার সংখ্যাও বাড়ছে। ছাত্রছাত্রীরা সেদিকে চলে যাচ্ছে।’

কী বলছে শিক্ষাবোর্ড

দেশের কওমি মাদরাসাগুলো এখন সরকার স্বীকৃত। কওমি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর তাকমিলকে সরকার মাস্টার্সের সমমান দিয়েছে। এই হিসেবে প্রাইমারির ছাত্র কমে গেলে মাদরাসাকে চাপ দেয়াটা অযৌক্তিক বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনরা। তারা বলছেন, স্কুল যেমন সরকার স্বীকৃত, তেমনি মাদরাসাও। মাদরাসর উপর চাপ এলে মাদরাসা বিভাগকে সেটা তদারকি করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে ফোন করা হয় মাদরাসা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ.কে.এম লুৎফর রহমানের সঙ্গে। বিষয়টি তাকে জানালে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগত জানান। পাশাপাশি একই বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সৈয়দ আসগর আলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সৈয়দ আসগর আলীকে ফোন করা হলে তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই জটিল।’ কোথাও এ বিষয়ে মাদরাসার উপর চাপ এলে মাদরাসা বিভাগ সেটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নটি নতুন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এমনিতে তো মাদরাসার উপর চাপ আসার কোনো কারণ নেই। ছাত্রদের অধিকার আছে, তারা স্কুলে পড়বে নাকি মাদরাসায়, তা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবে। এ ব্যাপারে কেউ তাকে জোর করতে পারবে না।’

The post কমছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা : হোমনায় চাপ বাড়ছে মাদরাসাগুলোর ওপর appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/AEDqPB6

Sunday, October 16, 2022

দেশে বাড়ছে ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা

রাকিবুল হাসান নাঈম:

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। সংগীতের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও জনপরিসরে ইসলামি ভাবধারার সংগীত সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যাপক সমাদৃতি পাচ্ছে। ফলে ইসলামি অঙ্গনে গড়ে উঠেছে বেশকিছু সংগীত-দল। সংগীত-দলের বাইরে থেকে ব্যক্তি পর্যায়েও গানের চর্চা করছেন অনেকে। সবার সুর ও মেধায় ভর করেই বিস্তৃত হচ্ছে ইসলামি সংগীতের জগত। সংশ্লিষ্টগণ বলছেন, কথা, সুর ও বুননে ইসলামি সংগীতে এখন একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আগে কেবল হামদ ও নাত গাইলেও এখন শিল্পীরা জীবনমুখী সংগীতও করছেন। ফলে সংগীতগুলো আগের তুলনায় বেশি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পারছে।

ফেসবুক ইউটিউবে বাড়ছে শ্রোতা

ইসলামি সংগীতের বিস্তৃতির ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখছে ফেসবুক ইউটিউব। করোনার আগে ব্যাপকভাবে কনসার্ট হলেও করোনার পর তা কমে গেছে। ফলে ফেসবুক ইউটিউবই সংগীত ছড়িয়ে দেয়ার একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শ্রোতাগণও নিচ্ছেন বেশ ভালো করেই। নিত্য নতুন তৈরী হচ্ছে নতুন মাইলফলক।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় সংগীতশিল্পী আবু উবায়দার সঙ্গে। তিনি একইসঙ্গে গীতিকার, সুরকার ও কম্পোজার। ইউটিউবে তার সাবসক্রাইবার ৩ লাখ ২৫ হাজার। ফাতেহকে তিনি জানান, ‘ইসলামী সংগীতের প্রচারে অবশ্যই ফেসবুক ইউটিউবের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। নয়ত এত মানুষের কাছে সংগীত পৌঁছত কিভাবে।’ আবু উবায়দা জানান, ১৩ আগস্ট তার চ্যানেলে ‘আস সুবহু বাদা’ শিরোনামে একটি সংগীত প্রকাশ করেন। প্রকাশের দুই মাস না পেরুতেই গানটি উঠে এসেছে তার সবচে বেশিবার শোনা গানের তালিকার প্রথমে। ফেসবুক-ইউটিউব মিলিয়ে এ গানটির ভিউ ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।

গত দু’ এক বছরে অনেকগুলো গান ইউটিউবে কয়েক মিলিয়ন ভিউ পার করেছে। এরমধ্যে কলরবের সংগীতশিল্পী আহমদ আব্দুল্লাহর গান ‘ইশকে নবী জিন্দাবাদ’ কেবল ইউটিউবে ভিউ হয়েছে ১৪ মিলিয়ন। গানটি প্রকাশ পেয়েছে হলি টিউনে। আহমদ আব্দুল্লাহর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। তাতে ১ লাখ ৪০ হাজার সাবসক্রাইবার রয়েছে। সেই চ্যানেলের কোনো কোনো গানের ভিউ মিলিয়ন স্পর্শ করার পথে।

বর্তমান ইসলামি সংগীতের জগতে চেনামুখ শেখ এনাম। তার সবচে বেশি আলোচিত সংগীতের নাম ‘ইশক কি রং মে’। গানটি প্রকাশ করেছে সিরাত মিডিয়া”। ভিউ পেয়েছে ৪.৬ মিলিয়ন। শেখ এনাম জানান, ফেসবুকের ভিউ ধরলে কত হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।

কেন জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইসলামি সংগীতের?

ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা বাড়ার পেছনে বিভিন্নজন বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন। প্রত্যেকেই তুলে ধরেছেন তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। তবে সবাই একটা কথা স্বীকার করেছেন, এর পেছনে সবচে বড় কারণ সবার সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টা।

আবু উবায়দা ফাতেহকে বলেন, কারও একক প্রচেষ্টায় ইসলামি সংগীতের এ জনপ্রিয়তা তৈরী হয়নি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা হয়েছে। ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা ভালো ভালো গান পেয়েছি। এরপর দীর্ঘ সময় আমরা কালজয়ী গান পাইনি। ২০১৫ সালের পর ইসলামি সংগীতের জগতে নতুন একটা জোয়ার শুরু হয়। বছর খানেক আগে হলি টিউনের অফিসে আমরা সংগীতশিল্পীরা একত্রে বসেছিলাম। পরামর্শ করেছিলাম, কিভাবে ইসলামি গানের জগতকে বিস্তৃত করা যায়। সবাই পরামর্শ দিয়েছিল, কন্টেন্ট ভালো করতে হবে। তারপর সবাই ভালো করার চেষ্টা করেছে, তার একটা ফলও দেখতে পাচ্ছি।’

আবু উবায়দা আরও জানান, ‘ইসলামি সংগীতের জগতে এখন বিরহ, বেদনা, অনুভব, রোমান্টিকতাও আসছে। ফলে মানুষ ভাবছে, মিউজিক দিয়ে না শুনে বরং মিউজিক ছাড়া এ গানগুলো শুনলে ভালো। তাই তারা এগুলো বেশি শুনছে, ভাবছে। মানুষের অনুভব চাঙ্গা করে, মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে, এমন সংগীত আমাদেরকে আরও বেশি গাইতে হবে।’

ইসলামি সংগীতের জগতে জনপ্রিয় একটি নাম হলি টিউন। ইসলামি সংগীত প্রকাশকারী এই ইউটিউব চ্যানেলের সাবসক্রাইবার ৬.২৯ মিলিয়ন। চ্যানেলটিতে বিশেষভাবে কাজ করছেন দেশের জনপ্রিয় ইসলামী সংগীতের শিল্পীগোষ্ঠী কলরবের শিল্পীরা। এর সিইও হিসেবে রয়েছেন কলরবের সিনিয়র শিল্পী ও নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান। এই চ্যানেলের বেশ কয়েকটি গান ৫০ মিলিয়ন ভিউ পার করেছে। এত জনপ্রিয়তার পেছনে বাণিজ্যিক ব্যবহারকেই কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। ফাতেহকে তিনি বলেন, ইসলামী সংগীতের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ‘হলিটিউন’ ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। ইসলামী সংগীতের বাণিজ্যিক ব্যবহার না হলে এ ইন্ডাস্ট্রি টিকবে না। সংগীত দিয়েই সংগীতের খরচ উঠানোসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকা পরিচালিত হলেই তবে এই ইন্ডাস্ট্রি সামনে এগোবে। শ্রোতাদের মতামত বিবেচনা করলে বুঝা যায়- হলিটিউনের ব্যবস্থাপনায় ইসলামী সংগীতের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় উপকার হলো ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে ইসলামী সংগীত পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ইসলামী সংগীতের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। ‘শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে হবে’ এ প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে।

মানুষের হামদ ও নাতপ্রীতি ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তায় বেশ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন শেখ এনাম। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘ইসলামী সংগীতের পরিসর বৃদ্ধি হচ্ছে। যেমন আগে কেবল হামদ ও নাত হতো। এখন এ দুটোর মাঝামাঝি জীবনমুখী সংগীতও হয়, যেগুলো মানুষকে খুব স্পর্শ করে। ফলে মানুষ শোনেও বেশি।’

লিরিক ও সুরের অভাব

ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা বাড়লেও লিরিক ও সুরের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সবাই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কখনও ভালো লিরিকের অভাবে ভালো গান হয় না। কখনও লিরিক ভালো হয়, কিন্তু ভালো সুরের অভাবে ভালো গান হয় না, হৃদয় স্পর্শ করে না।

এ প্রসঙ্গে আবু উবায়দা ফাতেহকে বলেন, ‘ইসলামি গানের জগতে এখন ভালো লিরিকের খুব অভাব। যারা আসলেই লিখতে পারেন, তারা অনেকেই লিখেন না। কারণ, এখানে গীতিকারের কদর করা হয় না। সুরকারও টাকা পায়, কিন্তু গীতিকার টাকা পায় না। তাহলে মেধাবী লেখকরা এখানে মেধা খাটাবে কেন?’ এ সঙ্কট কাটাতে চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।

এ সঙ্কটের কথা স্বীকার করেছেন আহমদ আব্দুল্লাহ। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘গীতিকাররা এখানে অবহেলিত। আমি নিজেই তো লিরিক বিক্রি শুরু করেছি অনেক পরে। আমি যত গান লিখেছি, তার অর্ধেক গান লিখে আমি কোনো টাকা পাইনি। কিন্তু তবুও লিখে গেছি।’ এখন সবচে দামে ইন্ড্রাস্ট্রিতে তার লিরিক বিক্রি হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে লিরিকের অভাবের চেয়ে সুরের অভাবকে বেশি প্রকট করে দেখছেন বিশিষ্ট গীতিকার তানভির এনায়েত। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘একটা লিরিক সাধারণ হলেও সুরকারের সুর বসানোর কারণে সেটা আসাধারণ হয়ে যায়। শুধু সুরের পারফেক্ট ব্যবহারের কারণে গানটা হয়ে উঠে মধুর, বোধগম্য। কিন্তু আমাদের ইসলামি গানের জগতে দক্ষ সুরকারের অভাব। একটু অন্যরকম লিরিক হলেই তারা সুর বসাতে পারেন না।’ এর উদাহরণ দিয়ে তানভির এনায়েত বলেন, ‘অনেক ইসলামি গানের শিল্পী বিগ বাজেট পেলে তার গানের সুর করে দেয়ার জন্য শফিক তুহিন ও বাপ্পা মজুমদারের দারস্থ হন।’

The post দেশে বাড়ছে ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/h08dQNK

Thursday, October 13, 2022

আগামী জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা

ফাতেহ ডেস্ক:

মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। করোনার কারণে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। আগামী জানুয়ারীর ৬, ৭ ও ৮ এবং ৪ দিন পর ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারী দুপর্বে অনুষ্ঠানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহবান করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার তাবলিগ জামাতের মুরুব্বি, গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে সাধারণত ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারি মাসে শীতের সময়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল বিশ্ব ইজতেমা। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্বের ৫০ থেকে ৬০টি দেশের দ্বীনদার মুসলমানদের সমাবেশ ঘটে এই ইজতেমায়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২০ সালে। দুই বছর বিরতির পর ফের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, কাকরাইলে ইজতেমা আয়োজন নিয়ে নিজেদের মধ্যে মাসোহারা হচ্ছে। প্রতি বছর আমাদের জোর হয়। অনেক আগেই ইজতেমার জন্য জানুয়ারির ৬, ৭, ৮ জানুয়ারি প্রথম পর্ব এবং ১৩, ১৪, ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় ও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আবারো বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন সম্পন্ন করা যাবে।

The post আগামী জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/RdpJ0yw

Saturday, October 8, 2022

দেশে বাড়ছে ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা

রাকিবুল হাসান নাঈম:

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। সংগীতের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও জনপরিসরে ইসলামি ভাবধারার সংগীত সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যাপক সমাদৃতি পাচ্ছে। ফলে ইসলামি অঙ্গনে গড়ে উঠেছে বেশকিছু সংগীত-দল। সংগীত-দলের বাইরে থেকে ব্যক্তি পর্যায়েও গানের চর্চা করছেন অনেকে। সবার সুর ও মেধায় ভর করেই বিস্তৃত হচ্ছে ইসলামি সংগীতের জগত। সংশ্লিষ্টগণ বলছেন, কথা, সুর ও বুননে ইসলামি সংগীতে এখন একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আগে কেবল হামদ ও নাত গাইলেও এখন শিল্পীরা জীবনমুখী সংগীতও করছেন। ফলে সংগীতগুলো আগের তুলনায় বেশি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পারছে।

ফেসবুক ইউটিউবে বাড়ছে শ্রোতা

ইসলামি সংগীতের বিস্তৃতির ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখছে ফেসবুক ইউটিউব। করোনার আগে ব্যাপকভাবে কনসার্ট হলেও করোনার পর তা কমে গেছে। ফলে ফেসবুক ইউটিউবই সংগীত ছড়িয়ে দেয়ার একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শ্রোতাগণও নিচ্ছেন বেশ ভালো করেই। নিত্য নতুন তৈরী হচ্ছে নতুন মাইলফলক।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় সংগীতশিল্পী আবু উবায়দার সঙ্গে। তিনি একইসঙ্গে গীতিকার, সুরকার ও কম্পোজার। ইউটিউবে তার সাবসক্রাইবার ৩ লাখ ২৫ হাজার। ফাতেহকে তিনি জানান, ‘ইসলামী সংগীতের প্রচারে অবশ্যই ফেসবুক ইউটিউবের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। নয়ত এত মানুষের কাছে সংগীত পৌঁছত কিভাবে।’ আবু উবায়দা জানান, ১৩ আগস্ট তার চ্যানেলে ‘আস সুবহু বাদা’ শিরোনামে একটি সংগীত প্রকাশ করেন। প্রকাশের দুই মাস না পেরুতেই গানটি উঠে এসেছে তার সবচে বেশিবার শোনা গানের তালিকার প্রথমে। ফেসবুক-ইউটিউব মিলিয়ে এ গানটির ভিউ ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।

গত দু’ এক বছরে অনেকগুলো গান ইউটিউবে কয়েক মিলিয়ন ভিউ পার করেছে। এরমধ্যে কলরবের সংগীতশিল্পী আহমদ আব্দুল্লাহর গান ‘ইশকে নবী জিন্দাবাদ’ কেবল ইউটিউবে ভিউ হয়েছে ১৪ মিলিয়ন। গানটি প্রকাশ পেয়েছে হলি টিউনে। আহমদ আব্দুল্লাহর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। তাতে ১ লাখ ৪০ হাজার সাবসক্রাইবার রয়েছে। সেই চ্যানেলের কোনো কোনো গানের ভিউ মিলিয়ন স্পর্শ করার পথে।

বর্তমান ইসলামি সংগীতের জগতে চেনামুখ শেখ এনাম। তার সবচে বেশি আলোচিত সংগীতের নাম ‘ইশক কি রং মে’। গানটি প্রকাশ করেছে সিরাত মিডিয়া”। ভিউ পেয়েছে ৪.৬ মিলিয়ন। শেখ এনাম জানান, ফেসবুকের ভিউ ধরলে কত হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।

কেন জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইসলামি সংগীতের?

ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা বাড়ার পেছনে বিভিন্নজন বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন। প্রত্যেকেই তুলে ধরেছেন তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। তবে সবাই একটা কথা স্বীকার করেছেন, এর পেছনে সবচে বড় কারণ সবার সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টা।

আবু উবায়দা ফাতেহকে বলেন, কারও একক প্রচেষ্টায় ইসলামি সংগীতের এ জনপ্রিয়তা তৈরী হয়নি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা হয়েছে। ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা ভালো ভালো গান পেয়েছি। এরপর দীর্ঘ সময় আমরা কালজয়ী গান পাইনি। ২০১৫ সালের পর ইসলামি সংগীতের জগতে নতুন একটা জোয়ার শুরু হয়। বছর খানেক আগে হলি টিউনের অফিসে আমরা সংগীতশিল্পীরা একত্রে বসেছিলাম। পরামর্শ করেছিলাম, কিভাবে ইসলামি গানের জগতকে বিস্তৃত করা যায়। সবাই পরামর্শ দিয়েছিল, কন্টেন্ট ভালো করতে হবে। তারপর সবাই ভালো করার চেষ্টা করেছে, তার একটা ফলও দেখতে পাচ্ছি।’

আবু উবায়দা আরও জানান, ‘ইসলামি সংগীতের জগতে এখন বিরহ, বেদনা, অনুভব, রোমান্টিকতাও আসছে। ফলে মানুষ ভাবছে, মিউজিক দিয়ে না শুনে বরং মিউজিক ছাড়া এ গানগুলো শুনলে ভালো। তাই তারা এগুলো বেশি শুনছে, ভাবছে। মানুষের অনুভব চাঙ্গা করে, মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে, এমন সংগীত আমাদেরকে আরও বেশি গাইতে হবে।’

ইসলামি সংগীতের জগতে জনপ্রিয় একটি নাম হলি টিউন। ইসলামি সংগীত প্রকাশকারী এই ইউটিউব চ্যানেলের সাবসক্রাইবার ৬.২৯ মিলিয়ন। চ্যানেলটিতে বিশেষভাবে কাজ করছেন দেশের জনপ্রিয় ইসলামী সংগীতের শিল্পীগোষ্ঠী কলরবের শিল্পীরা। এর সিইও হিসেবে রয়েছেন কলরবের সিনিয়র শিল্পী ও নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ বদরুজ্জামান। এই চ্যানেলের বেশ কয়েকটি গান ৫০ মিলিয়ন ভিউ পার করেছে। এত জনপ্রিয়তার পেছনে বাণিজ্যিক ব্যবহারকেই কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। ফাতেহকে তিনি বলেন, ইসলামী সংগীতের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ‘হলিটিউন’ ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। ইসলামী সংগীতের বাণিজ্যিক ব্যবহার না হলে এ ইন্ডাস্ট্রি টিকবে না। সংগীত দিয়েই সংগীতের খরচ উঠানোসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকা পরিচালিত হলেই তবে এই ইন্ডাস্ট্রি সামনে এগোবে। শ্রোতাদের মতামত বিবেচনা করলে বুঝা যায়- হলিটিউনের ব্যবস্থাপনায় ইসলামী সংগীতের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় উপকার হলো ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে ইসলামী সংগীত পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ইসলামী সংগীতের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। ‘শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে হবে’ এ প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে।

মানুষের হামদ ও নাতপ্রীতি ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তায় বেশ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন শেখ এনাম। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘ইসলামী সংগীতের পরিসর বৃদ্ধি হচ্ছে। যেমন আগে কেবল হামদ ও নাত হতো। এখন এ দুটোর মাঝামাঝি জীবনমুখী সংগীতও হয়, যেগুলো মানুষকে খুব স্পর্শ করে। ফলে মানুষ শোনেও বেশি।’

লিরিক ও সুরের অভাব

ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা বাড়লেও লিরিক ও সুরের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সবাই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কখনও ভালো লিরিকের অভাবে ভালো গান হয় না। কখনও লিরিক ভালো হয়, কিন্তু ভালো সুরের অভাবে ভালো গান হয় না, হৃদয় স্পর্শ করে না।

এ প্রসঙ্গে আবু উবায়দা ফাতেহকে বলেন, ‘ইসলামি গানের জগতে এখন ভালো লিরিকের খুব অভাব। যারা আসলেই লিখতে পারেন, তারা অনেকেই লিখেন না। কারণ, এখানে গীতিকারের কদর করা হয় না। সুরকারও টাকা পায়, কিন্তু গীতিকার টাকা পায় না। তাহলে মেধাবী লেখকরা এখানে মেধা খাটাবে কেন?’ এ সঙ্কট কাটাতে চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।

এ সঙ্কটের কথা স্বীকার করেছেন আহমদ আব্দুল্লাহ। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘গীতিকাররা এখানে অবহেলিত। আমি নিজেই তো লিরিক বিক্রি শুরু করেছি অনেক পরে। আমি যত গান লিখেছি, তার অর্ধেক গান লিখে আমি কোনো টাকা পাইনি। কিন্তু তবুও লিখে গেছি।’ এখন সবচে দামে ইন্ড্রাস্ট্রিতে তার লিরিক বিক্রি হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে লিরিকের অভাবের চেয়ে সুরের অভাবকে বেশি প্রকট করে দেখছেন বিশিষ্ট গীতিকার তানভির এনায়েত। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘একটা লিরিক সাধারণ হলেও সুরকারের সুর বসানোর কারণে সেটা আসাধারণ হয়ে যায়। শুধু সুরের পারফেক্ট ব্যবহারের কারণে গানটা হয়ে উঠে মধুর, বোধগম্য। কিন্তু আমাদের ইসলামি গানের জগতে দক্ষ সুরকারের অভাব। একটু অন্যরকম লিরিক হলেই তারা সুর বসাতে পারেন না।’ এর উদাহরণ দিয়ে তানভির এনায়েত বলেন, ‘অনেক ইসলামি গানের শিল্পী বিগ বাজেট পেলে তার গানের সুর করে দেয়ার জন্য শফিক তুহিন ও বাপ্পা মজুমদারের দারস্থ হন।’

The post দেশে বাড়ছে ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/eKGlP2M

Saturday, October 1, 2022

প্রতিক্রিয়া-প্রশ্ন-নতুন রক্ত : দ্বিতীয় দশকে বেরলবি-সূফী ধারায় টানাপড়েন

ইফতেখার জামিল

 

দক্ষিণ এশিয়ায় পঁচিশ শতাংশের মত মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। এর মধ্যে দক্ষিণ ভারতের কিছু অঞ্চলের কথা বাদ দিলে অধিকাংশ মুসলমানই হানাফি-মাতুরিদি ধারার অনুসারী। হানাফি-মাতুরিদি ধারা অনেকগুলো উপধারায় বিভক্ত, এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রধান দুই উপধারা হল দেওবন্দি ও বেরলবি সিলসিলা।

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসব ধারা-উপধারাগুলোর প্রভাব অপরিসীম, পাশাপাশি আধুনিক রাষ্ট্র ও পশ্চিমা প্রভাব-ধর্মনিরপেক্ষতার প্রেক্ষিতে এসব সিলসিলাগুলোর মধ্যেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। এই লেখায় বাংলাদেশে দ্বিতীয় দশকে বেরলবি ও বেরলবি ঘনিষ্ঠ সিলসিলাগুলোর মধ্যে যেসব টানাপোড়েন-পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, সেগুলোই দেখানোর চেষ্টা করবো।

প্রচলিত সিলসিলা-ব্যাখ্যার সীমাবদ্ধতা 

আমাদের সমাজে  ধর্মীয় ধারা-উপধারার ইতিহাস সংকলনে (তারিখুল ফিরাক/ফিরাকে বাতেলা)  দুটি বড়রকমের সরলীকরণ আছে। পশ্চিমা ব্যাখ্যায় সাধারণত সবকিছুকে বস্তুবাদীভাবে বুঝতে চেষ্টা করা হয়। যেনবা বস্তুগত ইতিহাস-রাজনীতি-অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতেই সবকিছু ঘটে চলছে। এতে ধর্মীয় বিতর্কের অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক-তাত্ত্বিক তাৎপর্য ঢাকা পড়ে যায়। মানুষ পরিণত হয় বৈষয়িক-বৈপরীত্যমুখর-স্বার্থবাদী যন্ত্রে। বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ নিছক জন্তু বা যন্ত্র নয়, মানুষ মাত্রই বিপুল সম্ভাবনার আধার। তাই আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ ব্যতীত কোন ব্যাখ্যাই পরিপূর্ণতা পেতে পারে না।

অপরদিকে প্রথাগত ধর্মীয় ব্যাখ্যায় সবকিছুই হক-বাতিল/ ভালো-খারাপের দ্বন্ধ। বিবাদ-বিতর্কমাত্রই ফেরেশতা-শয়তানের মোকাবেলা, এতে ইতিহাস-রাজনীতি-অর্থনীতির কোন প্রভাব নেই। প্রচলিত ধর্মীয় ব্যাখ্যায় ঢাকা পড়ে যায় মানবিক স্বার্থ-লোভ-পরম্পরা-মনস্তত্ত্বের ভূমিকা। ইতিহাসকে নিছক ‘আকিদাগত’ ও ‘ফিকহি’ ব্যাখ্যায় পরিণত করা হয়, যেটি মৌলিকভাবে অনুচিত কাজ। এতে কোন ঘটনার বৈষয়িক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক তাৎপর্য বুঝা যায় না। আমাদেরকে অবশ্যই ফিকাহ ও ফিকিরের মধ্যে পার্থক্য করতে জানতে হবে।

ঐতিহাসিক পরম্পরা :  ব্রিটিশ ভারতে টানাপড়েন

ব্রিটিশরা উপমহাদেশ দখল করার পর মুসলিম সমাজে নেমে আসে এক অসহনীয় অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা। মুসলমানরা খুঁজতে থাকে বিকল্প নেতৃত্ব, ‘আমাদের পিছিয়ে পড়ার ব্যাখ্যা কী, কারা করবে এর সমাধান?’ তারা অনুসন্ধান করেন বিকল্প ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও বক্তব্য। এরই ধারাবাহিকতায় উনিশ শতকে মুসলিম সমাজে দানা বাঁধে এক বিশেষ বিতর্ক। যেটি পরবর্তীতে দেওবন্দি-বেরলবি বিতর্ক নামে পরিচিতি পায়।

বেরলবি ধারার পূর্বপুরুষরা ছিলেন প্রধানত রামপুর ও খাইরাবাদী সিলসিলার অনুসারী, যারা মূলত মুসলিম জমিদার-জোতদারদের আশ্রয়ে ধর্মপ্রচার করতেন। ব্রিটিশদের উত্থানে এই সিলসিলায় কিছু বিভ্রম তৈরি হয়, তারা ক্ষমতাসীন ব্রিটিশদের সাহায্য নিতে বাধ্য হন। বিশিষ্ট যুক্তিবাদী আলেম ফজলে ইমাম খাইরাবাদি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় প্রধান ধর্মীয় উপদেষ্টা (ইসলাম) হিসেবে কাজ করেন। যার প্রেক্ষিতে এই সিলসিলায় প্রকাশ্যে ব্রিটিশ বিরোধিতা করা অনেকটাই কঠিন ছিল। এরই মধ্যে বিকল্প প্রকল্পের প্রচারে নামেন এক তরুণ তুর্কি, বনেদি পরিবারের সন্তান শাহ ইসমাইল শহীদ।
ইসমাইল শহীদ ছিলেন শাহ ওয়ালি উল্লাহর নাতি, দিল্লীর সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারের উত্তরাধিকার। মোগল আমলেই ওয়ালিউল্লাহর পরিবার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো প্রস্তাব করেন। ‘মাদরাসা, মসজিদ, আলেমরা হবেন স্বাধীন, তারা কোন রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনস্ত হতে পারবেন না।’ ঠিক এ কারণেই ওয়ালিউল্লাহর সিলসিলাকে ফিরিঙ্গিমহল বা খাইরাবাদের পরিণতি বরণ করতে হয়নি। তারা খুব সহজেই মুসলিম সমাজে নতুন আন্দোলনের ডাক দিতে সক্ষম হন, যাকে ইতিহাস বালাকোট আন্দোলন নামে চিনে।

উনিশ শতকে অস্থির দিল্লী : বিবাদের সূত্রপাত

আন্দোলনের এক পর্যায়ে ফজলে ইমাম-ফজলে হক-ইসমাইল শহীদের মধ্যে বিরোধ মারাত্মক আকার ধারণ করে। ‘যুবক ইসমাইল আমাদের ধর্মীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে?’, খাইরাবাদি ধারা ব্রিটিশ সাহায্যে ইসমাইল শহীদকে দিল্লী থেকে বিতাড়িত করে। আন্দোলন ছড়িয়ে যায় সারাদেশে, তৈরি হয় নতুন ‘তরিকা, তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া’, তাওহীদ যার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। টানাপোড়েন একসময় ধর্মীয় বিতর্কে রুপ নেয় : শাহ ইসমাইল শহীদ বলেন, আল্লাহর ক্ষমতা-গুণাবলী সার্বভৌম ; খাইরাবাদি বলেন, রসূলের গুণাবলী অসাধারণ, তিনি অতুলনীয়। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও রসূলের অতুলনীয়তার প্রতিতুলনা থেকেই জন্ম নেয় নতুন দুই সিলসিলা : দেওবন্দ ও বেরলবি ধারা।

দেওবন্দিরা অভিযোগ করেন, বেরলবিরা ‘শিরিকির সন্দেহমূলক’ কাজ করছেন, অনেক বিদআত সাদৃশ্য কাজ করছেন, তাই তারা বিদআতি। বেরলবিরা দাবী করেন, দেওবন্দিরা রসূলের ‘অতুলনীয়তা’কে অস্বীকার করেন, কাজেই তারা গুস্তাখে রাসুল। উনিশ শতকের এক ব্যক্তিগত বিরোধ ছড়িয়ে যায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটা গ্রামে, গত বিশ বছরে সেটা ওঠে আসে ইন্টারনেটের পাতাতেও। শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, যেখানেই উপমহাদেশের মানুষরা আছেন, সেখানেই ছড়িয়ে যায় এই বিবাদ। তারা একসাথে খানা খান না, এক মসজিদে পড়েন না নামাজ। তারা একে অপরের চেহারা দেখতেও বিব্রত বোধ করেন।

মাসলাকে আ’লা হজরত  : দিল্লীর বিবাদের তত্ত্বায়ন

ইসমাইল শহীদ মারা যান বালাকোট যুদ্ধে, ছয়ই মে আঠার শো একত্রিশ খ্রিস্টাব্দে। ফজলে হক খাইরাবাদি মারা যান আরও ত্রিশ বছর পরে। খাইরাবাদি সিপাহী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দানের অভিযোগে ‘দোষী’ সাব্যস্ত হন, অবশ্য পরবর্তীতে ছেলে আব্দুল হকের আবেদনের প্রেক্ষিতে রানী ভিক্টোরিয়া খাইরাবাদিকে ক্ষমা করে মুক্তির আদেশ জারি করেন। আন্দামান পৌঁছার কিছু আগে, আঠারো শো একষট্টি খ্রিস্টাব্দের আঠারই আগস্ট ইন্তেকাল করেন ফজলে হক খাইরাবাদি।

খাইরাবাদির মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে, আঠারো ছাপ্পান্ন খ্রিস্টাব্দের চৌদ্দই জুন ব্রিটিশ ভারতের বেরেলি শহরে এক প্রতিভাবান শিশুর জন্ম হয়, যার নাম আহমদ রেজা খান কাদেরি। অনুসারীরা তাকে আ’লা হযরত নামে অভিহিত করে থাকে। আহমদ রেজা খান কর্ম-দ্বন্ধমুখর জীবনে খাইরাবাদি প্রচারিত ব্যাখ্যার তত্ত্বায়ন করেন। তিনি শেষনবি মুহাম্মদ (সাঃ) এর অসাধারণত্বকে বিভিন্ন সূত্রের সাহায্যে ব্যক্ত করেন। এই সূত্রগুলোই পরবর্তীতে মাসলাকে আ’লা হজরত নামে পরিচিতি পায়।

মাসলাকে আ’লা হজরত : প্রধান তত্ত্বসমূহ

– রেজা খান বিশ্বাস করতেন, নবিজি গায়েব জানেন। এক কবিতায় তিনি লেখেন, (যখন খোদ খোদা তা’আলা, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আপনার নিকট থেকে গোপন থাকেননি, তখন আর এমন কি জিনিস থাকতে পারে যা আপনার থেকে গায়ব বা গোপন? অর্থাৎ কিছুই গোপন নেই। আপনার উপর কোটি কোটি দরূদ বর্ষিত হোক।)

– রেজা খান বিশ্বাস করতেন, নবিজি হাজির ও নাজির। প্রখ্যাত বেরলবি আলেম আবূ দাঊদ মুহাম্মদ সাদেক্ব লেখেন, ( সমগ্র বিশ্ব নবীজির দৃষ্টি বা চোখের সম্মুখে। রূহানিয়্যাত, নূরানিয়াত এবং সমস্ত বিশ্বের রহমত হওয়া তাঁর শানের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতা ও ইলম-এর বিশাল জগতে সর্বত্র তাঁরই উজ্জ্বলতা বিরাজিত। দুনিয়ার কোন স্থান ও বস্তু তাঁর নিকট থেকে অদৃশ্য নয়। তিনি যেখানে চান যতস্থানে চান একই সময়ে উপস্থিত হয়ে স্বীয় গোলামদেরকে স্বীয় দিদার এবং ফয়য ও বরকত দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করতে পারেন।)

– রেজা খান বেরলবি বিশ্বাস করতেন, নবীজি মুখতারুল কুল। তিনি তার মালফুজাতে বলেন, (মহাপরাক্রমশালী প্রভু আপন দানের ভা-ার নিআমতের খাযানা হুযুরের কব্জায় দিয়ে দিয়েছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা দিবেন যাকে ইচ্ছা দিবেন না। সমস্ত ফায়সালা কার্যকর হয় একমাত্র হুযুরের দরবার থেকেই। আর যে কেউ যখনই কোনো নিআমত কোনো দৌলত পায় তা পায় হুযুরের রাজ-ফরমান থেকেই।)

– রেজা খান বেরলবি বিশ্বাস করতেন, নবীজি ছিলেন নূরের তৈরি। প্রখ্যাত বেরলবি আলেম আহমদ ইয়ার খান নঈমী বদায়ূনী বলেন, (  নূর থেকে সৃষ্ট; বাহ্যিকভাবে মানবীয় সূরতে দুনিয়ায় তাশরীফ আনয়ন করেছেন। অন্যভাবে বলা যায়- তাঁর হাক্বীক্বত (মূল) হচ্ছে নূর; এ নূরী রসূল বাশারিয়াত বা মানবীয় আকৃতিতে দুনিয়ায় তাশরীফ এনেছেন। সুতরাং তাঁর যাত বা সত্তা মুবারকে দু’টি দিক রয়েছে- একটি হলো নূরানিয়াত, অপরটি হচ্ছে বাশারিয়াত।)

মাসলাকে আ’লা হজরত : প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া

ঠিক কেন ও কোন প্রেক্ষাপটে বেরলবি সিলসিলার জন্ম, সে নিয়ে অনেক বিপরীতমুখী বক্তব্য আছে। একদিকে অনেকে একে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখেন। মুসলমানরা রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ধর্মীয় সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হন, অনেক গবেষক একে বিবাদের প্রধান প্রেক্ষাপট হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাদের মতে, মুসলমানরা রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের বিকল্প হিসেবে আল্লাহর একত্ববাদ ও রসূলের অসাধারণত্বকে সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ভাবতে শুরু করেন।

দেওবন্দি অনেক গবেষক বেরলবিদেরকে ইসমাইলি শিয়া ও বাতিল সুফি চিন্তার সিলসিলা হিসেবে আখ্যা দেন। পাশাপাশি ব্রিটিশরা দেওবন্দি সংস্কার প্রকল্পের বিকল্প মুসলিম শক্তি দাড় করাতে চাচ্ছে, তারা বেরলবিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও আরোপ করেন। বেরলবিদের মতে দেওবন্দিরা ওহাবি চিন্তার ভারতীয় সংস্করণ, দেওবন্দি রাজনৈতিক-সংস্কার আন্দোলন ব্রিটিশদের ‘কৌশলগত’ প্রচেষ্টা। ব্রিটিশরা বিকল্প রাজনীতি ও সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানদের ( পড়ুন, বেরলবিদের) দমাতে চাচ্ছে। অবশ্য নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এসব অভিযোগ কতটা সত্য, কতটা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, সেটি বিশদ আলোচনার দাবী রাখে।

বেরলবি সিলসিলা নবী-রসূল-পীরদের অসাধারণ ক্ষমতা-প্রভাবে বিশ্বাস করে। তারা একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উৎসব-দোয়ার আয়োজন করে, উদযাপন করে। দেওবন্দিরা নির্বিশেষে এসব বিশ্বাস-আয়োজনকে ‘বিদআত’ বলে চিহ্নিত করে। দেওবন্দিদের কাছে তাই বেরলবি মাত্রই বিদআতি, পরিত্যাজ্য মুসলমান। বেরলবিরা এর চেয়ে আরও বেশী কঠোর। আহমদ রেজা বেরলবি হুসামুল হারামাইন শিরোনামে ফতোয়া সংকলন করেন, এতে দেওবন্দিদের কাফের আখ্যা দেন, ‘যারা তাদেরকে কাফের বলবে না, তারাও কাফের।’ এই শেষ বাক্যটি বেরলবিদের সর্বদা ভীতির মধ্যে রাখে, যদি আপনি তাকফির না করেন, তবে আপনি নিজেই কাফের হয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশে বেরলবি সিলসিলা  : শেরে বাংলা আজিজুল হক


তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া কেন্দ্রিক পরিচালিত বালাকোট আন্দোলন বাংলা অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়, সাইয়েদ আহমদ শহীদের খলিফা কারামত আলী জৌনপুরী এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিহার-বাংলায় বালাকোট কেন্দ্রিক ধারাগুলোর বিস্তার ঘটে। কাছাকাছি সময়ে বাংলা অঞ্চলে তিতুমির ও হাজি শরিয়তুল্লাহর আন্দোলন দানা বাঁধে।  এসব আন্দোলনের মূলকথা ছিল প্রায় কাছাকাছি।  কাজেই এই অঞ্চলে খাইরাবাদি বা রেজভি সিলসিলার অনুসারী ছিল না বললেই চলে। অবশ্য বালাকোট কেন্দ্রিক ধারাগুলোর সাথে স্থানীয় সুফি ধারাগুলোর মধ্যে কিছু বিতর্ক তৈরি হয় : যেগুলোকে স্থানীয় ভাষায়  শরিয়তি-মারেফতি বিবাদ বলে অভিহিত করা হয়। পরবর্তীতে বাংলা অঞ্চলে বেরলবি সিলসিলার আগমন ঘটলে মারেফতি ধারার সাথে তাদের বিশেষ সখ্যতা তৈরি হয়।

বাংলা অঞ্চলে বেরলবি ধারার সর্বপ্রথম প্রচারক ছিলেন শেরে বাংলা আজিজুল হক।  হাটহাজারী আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম থেকে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে দিল্লীর ফতেহ্পুর আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন, এখানেই তিনি বেরলবি সিলসিলায় দীক্ষা লাভ করেন এবং দেশে ফিরে নতুন চিন্তাধারা প্রচারে মনোযোগী হন। উনিশ শো বত্রিশ খ্রিস্টাব্দে নিজ গ্রাম  মেখল ফকিরহাটে এমদাদুল উলুম আজিজিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদরাসা ছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলে আরও বেশকিছু ‘বেরলবি মাদরাসা’ প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেন।

এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয় : ক) বেরলবি ধারার প্রথম প্রচারক শেরে বাংলা চট্টগ্রাম অঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামেই বেরলবি ধারার সূচনা ঘটে। খ) ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে এখনো চট্টগ্রামে বেরলবি সিলসিলা যথেষ্ট শক্তিশালী। দেশের প্রধান জশনে জুলুসের আয়োজন করা হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলেই। গ) শেরে বাংলা কওমি মাদরাসার ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে চিন্তাধারা পরিবর্তন করার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে কওমি ও বেরলবি সিলসিলার মধ্যে মারাত্মক তিক্ততা সৃষ্টি হয়। যার রেশ এখনো কাটেনি। ঘ) শেরে বাংলা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, টানা সতের বছর স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের সাথেও ছিল তার ভালো সম্পর্ক, এসবের ভিত্তিতে পরবর্তীতে চট্টগ্রামে বেরলবি ধারা বিশেষ শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়।

জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া : ‘ইয়ে মাদ্রাসা কি বুনিয়াদ মাসলাকে আ’লা হাজরাত পর হুই’

শেরে বাংলা আজিজুল হক বেরলবি ধারার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রচারক হিসেবে বিবেচিত হলেও তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খুব বেশী সফল ছিলেন না। বস্তুত তার পক্ষে শূন্য থেকে সফল প্রতিষ্ঠান-সংগঠন চালু করা সহজ ছিল, সেটাও বলা যাবে না। ঘটনাচক্রে মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গুনে ব্যবসায়ী পীর সৈয়দ মুহাম্মদ আহমদ শাহ সিরিকোটির সাথে শেরেবাংলার সাক্ষাত ঘটে। শেরেবাংলা সিরিকোটিকে চট্টগ্রামে দাওয়াত করেন।

আজাদি পত্রিকার তৎকালীন মালিক  ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেকের বাসায় জলসা-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সবাই বসে মিলাদ পড়ছে দেখে আহমদ শাহ সিরিকোটি বিস্মিত হন। তিনি আরও বিশুদ্ধ ‘সুন্নিয়ত’ প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মজার বিষয় হচ্ছে, শেরে বাংলার মত পীর সৈয়দ মুহাম্মদ আহমদ শাহ সিরিকোটিও কওমি মাদরাসার ছাত্র ছিলেন। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। সিরিকোট পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি অঞ্চল, সৈয়দ মুহাম্মদ আহমদ শাহ এই অঞ্চলের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তিনি ছিলেন একইসাথে বেরলবি সিলসিলায় দীক্ষিত, পীরতান্ত্রিক সাংগঠনিকতায় দক্ষ। ইয়াঙ্গুনের ব্যবসায়ী হিসেবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজের সাথেও ছিল তার বিশেষ সুসম্পর্ক।

উনিশ শো চুয়ান্ন সালে সৈয়দ মুহাম্মদ আহমদ শাহ সিরিকোটির উদ্যোগে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা ও শেরে বাংলার পরামর্শে  চট্টগ্রামের ষোলশহরে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা মুহূর্তে সিরিকোটি বলেন, ‘ইয়ে মাদ্রাসা কি বুনিয়াদ মাসলাকে আ’লা হাজরাত পর হুই। এই লাইনটি পরবর্তীতে  জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।  এই মাদরাসাকেই বলা যায় বাংলাদেশে বেরলবি সিলসিলার প্রধান কেন্দ্র। সিরিকোটি মৃত্যুবরণ করেন উনিশ শো একষট্টি সনে, ফজলে হক খাইরাবাদির ইন্তেকালের ঠিক একশো বছর পর। সিরিকোটির পরে, তার ছেলে ও নাতি  সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহে ও সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান।

‘জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া’  :  শাখা প্রতিষ্ঠানসমূহ

অভিভাবকত্বের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় সিরিকোট দরবার শরিফ। মূলত এই দরবার শরীফ সকল শাখা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক। রেঙ্গুনে অবস্থানকালীন উনিশ শো পঁচিশ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ মুহাম্মদ আহমদ শাহ সিরিকোটি আনজুমানে শূরা-এ রহমানিয়া নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, উনিশ শো সাইত্রিশে চট্টগ্রামে এর শাখা কমিটি গঠিত হয়। উনিশ শো আটান্ন সালে এই আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানটি আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া নাম ধারণ করে। উনিশ শো আটাশি খ্রিস্টাব্দে ছেলে  তৈয়্যব শাহ সংগঠন নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই কমিটিই হল গাউছিয়া কমিটি। আনজুমান ও গাউছিয়া কমিটি, এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে  সিরিকোটি দরবারের প্রধান অঙ্গ সংগঠন আখ্যা দেওয়া যায়।

তৈয়ব শাহ উনিশ শো চুয়াত্তর সালে চট্টগ্রামে বারোই রবিউল আওয়াল উপলক্ষে জশনে জুলুসের প্রবর্তন করেন। উনিশ শো ছিয়াশি সাল পর্যন্ত তিনি এতে নেতৃত্ব দেন। এরপর থেকে তাঁরই ছেলে দরবারে ছিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ জুলুসে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। জশনে জুলুসকে বলা যায় বেরলবি ধারার সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ। মূলত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সালাফি-দেওবন্দি ধারার বাইরের সকল উপধারাগুলোর মধ্যে বেরলবি সিলসিলা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। সাংগঠনিক দৃঢ়তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দরবার শরীফ ও অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে সমচিন্তার উপধারাগুলোর সমীহ আদায় করে নিতে সক্ষম হয় তারা।

বাংলাদেশে সিরিকোটি দরবার পরিচালিত বেরলবি সিলসিলা বরাবরের মতোই ছিল রাজনীতির প্রতি অনাগ্রহী। খাইরাবাদি ও আ’লা হজরতের মধ্যেও এই বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তবে অব্যাহত রাজনৈতিক চাপের মুখে, দেওবন্দি আন্দোলন ও জামায়াত-শিবিরের বিকল্প হিসেবে সিরিকোট দরবারের সমর্থকরা উনিশ শো আশি সালে  বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত সিরিকোটি দরবারের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ও বিপক্ষ শক্তির মোকাবেলার অংশ হিসেবেই এই দলের সূচনা ঘটে, তাদের মধ্যে কখনোই এর চেয়ে বেশী রাজনৈতিক উচ্চাশা ছিল না। এই ছাত্র সংগঠনের ধারা রক্ষা করে উনিশ শো নব্বই সনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংগঠনের পথযাত্রা শুরু হয়। এর অরাজনৈতিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের নাম, বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত।

দ্বিতীয় দশকে বেরলবি সিলসিলা : আত্মদ্বন্ধ, সম্ভাবনা ও প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেরলবি সিলসিলা এখনো খুব গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় সিলসিলা নয়। তবে বেশকিছু কারণে এর সম্ভাবনা অনেক বেশী।

– ঐতিহাসিক পরম্পরা 

ঐতিহাসিকভাবে বাংলা অঞ্চলে শরীয়ত বনাম মারেফতের যে সামাজিক তর্ক জারি ছিল, বেরলবি সিলসিলা এর মধ্যে মারেফতি ধারা-উপধারাগুলোর পক্ষে যুক্তি দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছোট উপধারা হওয়া সত্ত্বেও সালাফি-দেওবন্দি সিলসিলা বিরোধী বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে আবেদন তৈরি করতে পেরেছে। তারা এই আবেদন কতটা কাজে লাগাতে পারবে, সেটা অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।

‘সবাইকেই বেরলবি সিলসিলায় ঢুকতে হবে, মেনে নিতে হবে  মাসলাকে আ’লা হজরত’ : এ নিয়ে জোরাজোরি করলে অপরাপর সুন্নি ও মারেফতি উপধারাগুলোর মধ্যে বিরক্তি বৃদ্ধি পাবে, ইতিমধ্যে আসলে এটিই হতে চলছে। সম্প্রতি মাইজভাণ্ডারী ও আব্বাসির বক্তব্যে এসব আপত্তি ওঠে আসছে খোলামেলাই। আব্বাসি এক ওয়াজে বলছিলেন, ‘রেজা খানের যেসব বক্তব্য সুন্নিয়তের পক্ষে যায়, সেসব আমরা মানি। তবে তিনি ইমামে তরিকত নন, ইমামে আহলে সুন্নতও নন। এই নজদি-ওহাবিদের সাথেও আমাদের কোন সম্পর্ক নেই, এই মাজার পূজারী-পীর পূজারী-বিদআতীদের সাথেও আমাদের কোন সম্পর্ক নাই।’

– শিক্ষার প্রতি মনোযোগ

শিক্ষাগত ক্ষেত্রে বেরলবিরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারছে না, এই অনুভূতি কাজ করছে এই সিলসিলার অনেকের মধ্যেই। গত দশকে তো বটেই, বিগত বিশ বছর ধরে তারা এ নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, বেরলবি সিলসিলা গত দুই দশকে অন্তত দুইশত মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এই মাদরাসা-প্রকল্প যদি সফলতার মুখ দেখে, তবে বাংলাদেশের মতাদর্শিক রাজনীতির চেহারাই পাল্টে যাবে, সেটা বলাই বাহুল্য।

তবে এর আগে চরমুনাই সিলসিলাতেও পীরতান্ত্রিক মাদরাসা চালু করার চেষ্টা করতে দেখা যায় এবং সেটি অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবী করেন অনেকে। নিছক ভক্তি-পীরালি দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়, কাজেই বেরলবিদের মাদরাসাগুলো বিদ্যমান শিক্ষাকেন্দ্রিক মানচিত্রে বিশেষ কোন পরিবর্তন তৈরি করতে সক্ষম হবে না বলেই আমার মনে হয়।

– রাজনৈতিক সুবিধা

উল্লেখিত ঐতিহাসিক সুযোগ ছাড়াও দ্বিতীয় দশকে বেরলবি সিলসিলা রাজনৈতিকভাবেও বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়েছে। আমেরিকা পরিচালিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে বেরলবি সিলসিলাকে আঞ্চলিক ‘বন্ধু শক্তি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে RAND Corporation সহ আমেরিকান বেশ কয়েকটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে দেওবন্দি ও সালাফি ধারার বিপদের মধ্যে বেরলবিরা বিশেষ সুবিধা ভোগ করেছে, সেটা বলাই বাহুল্য। ‘জঙ্গি’ হিসেবে বেরলবি সমর্থকদের গ্রেফতারির ঘটনাও বেশ বিরল। তবে পাকিস্তানে সাম্প্রতিক কিছু ‘হত্যাকাণ্ডের’ প্রেক্ষিতে বেরলবিদের প্রতিও পশ্চিমা সন্দেহ বাড়ছে।

বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের সাথে জামায়াতে ইসলামি ও কওমি আলেমদের অব্যাহত দ্বন্ধের প্রেক্ষিতে বিশেষ কিছু সুযোগ পেয়েছে বেরলবি ও বেরলবি ঘনিষ্ঠ উপধারাগুলো। জাতীয় মসজিদের ইমামতি থেকে শুরু করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ পদ তারা দখল করতে পেরেছে। প্রচণ্ড আন্দোলনের মুখেও সরকার জাতীয় মসজিদের সাবেক ইমাম সালাহুদ্দিনকে তার পদ থেকে সরায়নি। এর বিনিময়ে বেরলবি ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দল তরিকত ফেডারেশন ও ইসলামিক ঐক্য ফ্রন্ট সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে।  আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। জোটবদ্ধ এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ২০টি আসন দাবি করেছিল দলটি, যদিও আওয়ামীলীগ তাদেরকে একটিও সিট দেয়নি।

– তীব্র প্রতিক্রিয়াশীলতা  : ‘আমরা ছাড়া বাকিরা ওহাবি’

বেরলবি ধারা প্রধানত দেওবন্দি-সালাফি-জামায়াতকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে আখ্যা দেয়। বিপরীতমুখী এসব উপধারাকে আখ্যা দেয় ‘ওহাবি-সালাফি’ হিসেবে, যদিও খোদ দেওবন্দিদের সাথে সালাফি-জামায়াতের দূরত্ব কম নয়, তবে বেরলবি সিলসিলা মাসলাকের মূল প্রবক্তা আহমদ রেজা বেরলবির ‘চরমপন্থা’ থেকে বের হতে পারেনি, তারা এসব সিলসিলাকে ওহাবি আন্দোলনের সম্প্রসারণ হিসেবেই দেখে থাকে। সম্প্রতি সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ ও আওয়ামীলীগের সাথে প্রকাশ্য জোটবদ্ধতার অংশ হিসেবে বিরোধীদেরকে তারা ‘জঙ্গি’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ হিসেবেও আখ্যা দিতে থাকে।

দুই হাজার সতের সালে সরকার কওমি মাদরাসার শিক্ষাকে স্বীকৃতি প্রদান করলে বেরলবিরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি ‘গভীর ষড়যন্ত্রমূলক আঁতাত’ বলে দাবি করে বেরলবিদের রাজনৈতিক দল ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের অরাজনৈতিক অঙ্গসংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত সমন্বয় কমিটি। সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। এর ফলে দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর সাহস আরও বাড়বে। সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডকে এই সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

কওমি মাদ্রাসাকে সরকারি সনদ দেওয়ার ঘোষণা প্রত্যাহার করে, দেশে একমুখী মাদ্রাসা শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দাবি জানান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নেতারা। কোনো ধরনের সংস্কার না করে কওমি মাদ্রাসার সনদকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ায় উগ্রপন্থী ভাবধারা উৎসাহিত হবে। দুই হাজার একুশ সালে দলের নেতারা দাবী করেন, জঙ্গিবাদী সালাফি ও উগ্রবাদী হেফাজতের সাথে দীন ইমান ও শান্তিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ইসলামের কোনো সম্পর্ক নাই। কওমী মাদ্রাসা মনিটরিংসহ হেফাজত ও সালাফি সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করতে হবে। পিস টিভি বন্ধের পরে সরকারকে স্বাগত জানিয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোছাহাব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, ‘সেখানে যারা আলোচক ও উপস্থাপক রয়েছে, যাদের জঙ্গিবাদী বক্তব্যের কারণে জঙ্গি তৈরি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে তাদের উপর নজরদারি বাড়ানো দরকার। পিস টিভির বাইরেও তারা বক্তব্য রাখে।’

দুই হাজার তেরো সালের বিষয়েও বেরলবিদের অবস্থান অনমনীয়। দুই হাজার একুশের মে মাসে সরকারের কাছে উপস্থাপিত এক স্মারকলিপিতে তারা দাবী করেন, ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব জাতি প্রত্যক্ষ করেছিল। বায়তুল মোকাররমে কোরআন শরীফে অগ্নিসংযোগ, বাসে-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করে, আশেপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকার গাছপালা নিধন করে সেদিন এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর সাথে ইসলামের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে কারও জান-মাল-ইজ্জতে আঘাত করা হারাম। সরকারের সময়োপযোগী সাহসী পদক্ষেপের কারণে জাতি সেদিন বিপদ থেকে রক্ষা পায়।

অবশ্য এসব প্রতিক্রিয়াশীল ধারার বাইরে কিছু সমন্বয়কামী আলেম আছেন। এদের মধ্যে ডঃ আব্দুল বাতেন মিয়াজির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

-প্রশ্ন ও সংশয় : ‘আমরা কেন সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ নই?’ 

অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীলতার মধ্যে বেরলবি সিলসিলার অনেকের মধ্যেই তাদের মাসলাক নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। বিশেষত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ ও আওয়ামীলীগের সাথে সম্পর্কের প্রেক্ষিতে তাদের জনপ্রিয়তাতেও ভাটা পড়ে। দুই হাজার তেরো সালে হেফাজতের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বেরলবি সমর্থক-মুরিদদের অনেকের মধ্যে কিছু আত্মজিজ্ঞাসা তৈরি হয়, তারা বড়দের গোঁড়ামি নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন। এতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা মত, তারা আর আগের মতো নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ নন। বেরলবি অনুসারীদের কেউ কেউ বলতে থাকেন, যদি আমরাই ‘হক মাসলাক হই, তবে কেন আমরা সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ নই?

এসব নিয়ে কিছু আত্মকোন্দলেরও তৈরি হয়। যারা প্রশ্ন করেন, তাদেরকে মূল মাসলাক থেকে একঘরে করে রাখার প্রবণতা তৈরি হয়। বেরলবিরা শুধু বিরোধী উপধারাগুলোর প্রতিই প্রতিক্রিয়াশীল নয়, নিজেদের মধ্যে যারা সমন্বয়কামী, প্রশ্ন-সংশয় প্রকাশ করেন, তাদেরকেও অঘোষিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু আ’লা হজরত অনেক দেওবন্দিকে কাফের বলেছেন, যারা তাদেরকে কাফের অস্বীকার করবে, তাদেরকেও কাফের বলে হুমকি দিয়েছেন, কাজেই বেরলবিদের দিক থেকে বিরোধী উপধারাগুলোর সাথে সম্পর্ক করা খুব সহজ নয়। এতে তারা নিজেরাই তাকফিরের হুমকিতে পড়ে যাবেন। বলাইবাহুল্য, এসব সংকীর্ণতার প্রেক্ষিতে অনেক অনুসারী-ছাত্রদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ।

 

নুরুল ইসলাম ফারুকী  : বেদনা ও ক্রোধের আগুন

বেরলবিদের প্রতিক্রিয়ার জবাবে কওমি-দেওবন্দি-জামায়াতের মোকাবেলাও অনেক সময় নিরীহ থাকে না। বিরোধীরাও বেরলবিদের ‘ খারাপ মুসলমান’ হিসেবে আখ্যা দেন। এটি অনেক সময় রক্তারক্তি পর্যন্ত পৌছায়। বেরলবিদের প্রথম প্রচারক শেরে বাংলা আজিজুল হকও মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন। চট্টগ্রামে আশির দশকে শিবিরের সাথে সংঘর্ষে ছাত্রসেনা কর্মী লিয়াকত আলী নিহত হন। তবে দ্বিতীয় দশকের সবচেয়ে বড় ঘটনা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ড। বস্তুত ধর্মীয় উপধারার কোন বিশিষ্ট নেতা গুপ্তহত্যার শিকার হবেন, এটি কোনভাবেই স্বাভাবিক নয়।

২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট ফারুকীকে তার রাজাবাজার কার্যালয়ে ৮-১০ জন অজ্ঞাত হামলাকারী হত্যা করে। এর আগে একজন মহিলা, যিনি তাকে বারবার টেলিফোন করেছিলেন তাকে তার বাড়িতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চল্লিশ বছর বয়সী মহিলা ফারুকির বাড়িতে দুই ঘণ্টা থাকার সময় নার্ভাস ছিলেন এবং অদ্ভুত আচরণ করেছিলেন। তার পরিবারের দাবি, বেশ কয়েকজন যুবক হজ নিয়ে কথা বলতে বাড়িতে এসে তাকে হত্যা করেছে। স্থানীয় এক ইমামের মতে, দুই যুবক রাত সাড়ে টার দিকে তার বাড়িতে আসে এবং ৬-৭ জন সশস্ত্র যুবক ঘরে তার কাছে থাকা সব টাকা দাবি করে।

ফারুকীর স্ত্রী দাবি করেন, রহস্যময়ী নারীকে গ্রেফতার করা হলে অপরাধীরা ধরা পড়বে। তার পুত্র আহমেদ রেজা ফারুকী একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে বলেছিলেন: “আমার বাবা ‘সুন্নি’ মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। যারা তার মতাদর্শের বিরোধিতা করেছিল তাদের কাছ থেকে তিনি মোবাইল ফোন এবং ফেসবুকে হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন। চরমপন্থী বা খারেজি-ওহাবী আহলে হাদিস তাকে হত্যা করেছিল, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল।’’ তার সংগঠন আহলে সুন্নাতের সদস্যরা তাদের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যার প্রতিবাদ করে চট্টগ্রামে মুরাদপুর মোড় অবরোধ করে। ২০১৪ সালের আগস্টে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সেনার প্রধান মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতি এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন যে, দলীয় নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সারা বাংলাদেশে অর্ধদিবস ধর্মঘট পালিত হবে।

বস্তুত ফারুকি হত্যাকাণ্ড বেরলবি সিলসিলার মধ্যে গভীর বেদনা ও ক্রোধের তৈরি করে। তারা বিরোধী পক্ষগুলোকে দায়ি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়াকে জরুরী/বৈধ বলে মনে করতে থাকেন।

‘জশনে জুলুস’ : ইসলামের সাংস্কৃতিক প্রচার

পৃথিবীর দেশে দেশে বারোই রবিউল আওয়াল উপলক্ষে অনেক অনুষ্ঠান-উৎসব পালিত হয়। দেওবন্দ-সালাফি-জামায়াতের মতো উপধারাগুলো এসব অনুষ্ঠান আয়োজনে অনাগ্রহী। এই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসে বেরলবি সিলসিলা। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত অনেক মানুষই ইসলামকে নিছক শিক্ষা-ইবাদত-রাজনীতি-সংস্কারের বাইরে উৎসব-সংস্কৃতির জায়গা থেকে দেখতে চান। দ্বিতীয় দশকে আওয়ামীলীগ সরকারের অব্যাহত চাপের মধ্যে বেরলবি সিলসিলা ইসলামের নিরাপদ উদযাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়।

এতে নিরীহ জনতার মধ্যে বেরলবিদের প্রতি একটা সাংস্কৃতিক আবেদন তৈরি হয়, লিবারেল শক্তিগুলোও বেরলবিদেরকে সমন্বয়কামী উপধারা হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে। আগেই যেমন বলেছি, জশনে জুলুসকে বলা যায় বেরলবি ধারার সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ। মূলত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সালাফি-দেওবন্দি ধারার বাইরের সকল উপধারাগুলোর মধ্যে বেরলবি সিলসিলা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। সাংগঠনিক দৃঢ়তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দরবার শরীফ ও অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে সমচিন্তার উপধারাগুলোর সমীহ আদায় করে নিতে সক্ষম হয় তারা। অনেকেই হয়ত বেরলবিদের মাসলাক-রাজনীতির সাথে একমত নয়, তবে তাদের প্রভাব-আয়োজনের আবেদন ছড়িয়ে যায় সহযোগী উপধারাগুলোর অনেকের মধ্যেই। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, ফুরফুরা-ছারছিনা-ফুলতলি-আটরশিদের মধ্যে জশনে জুলুসের আবেগ ছড়িয়ে যায়।

দুই হাজার একুশ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন নবী পালনের ঘোষণা দেয়। অনেকেই একে বেরলবিদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে দেখতে আগ্রহী।

– নতুন রক্ত : ‘আধুনিকতা, কট্টরপন্থী আশায়েরি ধারা ও লোকজ ইসলাম’

দ্বিতীয় দশকে বেরলবি সিলসিলায় অনেক আধুনিক কণ্ঠও সংযুক্ত হয়। তারা সিলসিলার সফল সাংস্কৃতিক রুপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবার প্রেক্ষিতে ‘লোকজ ইসলামের’ প্রবক্তারা তাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। বেরলবিদের মধ্যেও নিজেদেরকে আধুনিক হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মতো। করোনাকালীন সময়ে গাউছিয়া কমিটি সেচ্ছাসেবক সংগঠন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সারাদেশে প্রায় ৫ হাজার লাশ দাফন ও সৎকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও আনায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা, বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান ও অসহায়-দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। করোনার এই দুঃসময়ে তাদের সেবা কার্যক্রমে জোরালো হয়েছে অক্সিজেন সেবা।

এই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের কট্টর আশায়েরি সিলসিলার সাথেও তাদের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আজহার ফেরত আলেমরা। ঐতিহ্যবাহী আ’লা হজরতের মাসলাকের বদলে নতুন প্রবক্তারা কট্টর আশায়েরি বক্তব্যগুলোো প্রচার করতে থাকেন। তারা সবাই সালাফি প্রতিরোধে একমত, এই মর্মে বেরলবি সিলসিলার মধ্যে নতুন রক্তের সঞ্চালন ঘটেছে।  এই নতুন রক্ত কেমন ভূমিকা রাখবে, সে নিয়ে এখনই নির্দিষ্ট মন্তব্য করা কঠিন। তবে মনে করা হচ্ছে, এই নতুন প্রবক্তারা বেরলবি সিলসিলার নতুন অভিমুখ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন। এর সাথে যদি নতুন করে প্রতিষ্ঠিত দুইশো মাদরাসার বিষয়টি যোগ করা হয়, তবে বলতে হবে, আগামী দশকেও বেরলবি সিলসিলা বাংলাদেশের ধর্মীয় অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

The post প্রতিক্রিয়া-প্রশ্ন-নতুন রক্ত : দ্বিতীয় দশকে বেরলবি-সূফী ধারায় টানাপড়েন appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/zqhJ4FY