Monday, October 24, 2022

‘ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় একমত মুসলিম দেশগুলো’ : কী আছে ওআইসির ইস্তাম্বুল ঘোষণায়?

মুনশী নাঈম:

ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে এবং ইসলামফোবিয়া ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রতিরোধ করতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সম্মেলনে একটি ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে। শনিবার (২২ অক্টোবর) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর তথ্যমন্ত্রীদের ১২তম ইসলামী সম্মেলনে তা গৃহীত হয়। ইস্তাম্বুল ঘোষণাপত্রে ওআইসি সদস্যদেশ হিসেবে বাংলাদেশও সাইন করেছে।

সম্মেলনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত দুটি প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়। এক. ৭৬/২৫৪ নং প্রস্তাব। এটি গত ১৫ মার্চ ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবসে গৃহীত। দুই. ৭৬/২২৭ নং প্রস্তাব। এটি ২০২১ সলের ২৪ ডিসেম্বর গৃহীত ‘মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রচার এবং সুরক্ষার জন্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ শীর্ষক প্রস্তাব।

বিশ্নেষকরা বলছেন, এই সম্মেলনে মূলত ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় মুসলিম দেশগুলো একমত হয়েছে। সম্মেলনটির লক্ষ্যও ছিল, মিডিয়া ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইসলামী দেশগুলোর সহযোগিতার বিকাশ এবং শক্তিশালী করা। এতে ৫৭টি দেশের মন্ত্রী এবং উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ইসলামিক বিশ্বের মিডিয়া, যোগাযোগ ও তথ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করেন।

কী আছে ওআইসির ইস্তাম্বুল ঘোষণায়?

ইসলামোফোবিয়া ছড়ানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও গ্লোবাল থিংক ট্যাংকের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তুরস্কের যোগাযোগ অধিদফতরের প্রেসিডেন্ট ফাহরেতিন আলতুন। তিনি সম্মেলনে দেয়া উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, ভুল তথ্য বিশ্বজুড়ে ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার ত্বরান্বিত করে। এই ইসলামোফোবিয়া বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে এবং বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে। তাই সমগ্র বিশ্বের উচিত ইসলামফোবিয়াকে একটি প্রকাশ্য ঘৃণামূলক অপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে দেখা এবং এই অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করা। এই অপরাধের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করা শুধু মুসলমানদের নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও অন্যতম প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তাই এই ইস্তাম্বুল ঘোষণায় ভুল তথ্যরোধ এবং ইসলামফোবিয়া থামাতে মিডিয়ার সঠিক ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়েছে। নিচে ঘোষণার গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো তুলে ধরা হলো।

১. পোস্ট-ট্রুথ এরা বা সত্য-উত্তরকালের ডিজইনফরমেশন এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বের উপর জোর দেয়া। পাশাপাশি লড়াইয়ের স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রণয়ণ করা।

উল্লেখ্য, পোস্ট-ট্রুথ এমন একটা পরিস্থিতি, যখন মানুষ সঠিক তথ্য ও প্রকৃত ঘটনার ওপর নয়, বরং তার বিশ্বাস ও আবেগের ওপর ভিত্তি করে কোনো বিষয়কে গ্রহণ বা বর্জন করে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো বিষয়ের বিশ্লেষণে মানুষের কাছে তাঁর আবেগ ও বিশ্বাসই প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

২. স্বল্প সময়ে নির্দিষ্ট সমস্যা এবং সম্ভাব্য পরিস্থিতি বুঝতে হবে। মধ্যম সময়ে তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে যোগাযোগ ও কৌশল বাড়াতে হবে। তারপর দীর্ঘমেয়াদী মিডিয়া কন্টেন্ট সরবরাহ করতে হবে।

৩. ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে এবং ইসলামফোবিয়া বিরুদ্ধে লড়াই করতে নতুন এবং আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে।

৪. মুসলিম দেশগুলোর মিডিয়ায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ দাবির স্বপক্ষে প্রচারণা চালাতে হবে।

৫. শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তিদের, বিশেষ করে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর শরণার্থীদের সমর্থন করার জন্য মিডিয়ায় আন্তর্জাতিক সংহতি এবং সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।

৬.ইসলামী সংস্কৃতি এবং বিশ্বের অন্যান্য সংস্কৃতির মধ্যে ডায়ালগ বাড়াতে হবে।

৭. অমুসলিম দেশগুলোতে যে ইসলামিক কালচার এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য ধ্বংযজ্ঞের শিকার হচ্ছে, মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সেইসব এলাকায়, যেখানে আদিবাসী মুসলিম সম্প্রদায় জাতিগত নির্মূলের শিকার হয়েছিল৷

৮. ওআইসি মিডিয়া ফোরাম (ওএমএফ)-এ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা।

সম্মেলনে বাংলাদেশ কী বলেছে?

সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সম্মেলনে তিনি জঙ্গিবাদ দমন, বিভ্রান্তিকর তথ্যরোধ এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি বিষয়ে কথা বলেন।

জঙ্গিবাদ দমনে তিনি বলেন, ইসলামের মূলমন্ত্র শান্তি। ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। এ তথ্য বিশ্বজনের কাছে তুলে ধরতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও এর সদস্যদেশগুলো বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে পারে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালনের পরিবেশ বজায় আছে। ধর্মকে কেউ যেন জঙ্গিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণুতার (জিরো টলারেন্স) নীতি নিয়েছে সরকার।

বিভ্রান্তিকর তথ্যরোধ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ সম্পর্কে বৈশ্বিক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সঠিক প্রচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও মানবতার খাতিরে ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। করোনা মহামারি, ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার ভেতরেও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। এটি নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। তা যত দ্রুত হয়, ততই সবার জন্য মঙ্গল।’

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেন হাছান মাহমুদ। ফিলিস্তিনিদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মনে করে, স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনই এ বিষয়ে একমাত্র সমাধান। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি কোনো দেশের জাতীয় কোনো ইস্যু স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন থেকে আমাদের বিচ্যুত করতে পারবে না।’

The post ‘ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় একমত মুসলিম দেশগুলো’ : কী আছে ওআইসির ইস্তাম্বুল ঘোষণায়? appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/nk2XZWg

No comments:

Post a Comment