Monday, October 17, 2022

কমছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা : হোমনায় চাপ বাড়ছে মাদরাসাগুলোর ওপর

মুনশী নাঈম:

কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে। পক্ষান্তরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে মাদরাসায়। এতে যেমন চাপে আছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ, তেমনি চাপে আছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষও। প্রাইমারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্কুলে ছাত্রদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে মাদরাসাকে দোষারোপ করে রীতিমতো কাঠগড়ায় তুলছেন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তারা খড়গহস্ত হবার কোশেশ করছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষের উপর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ছাত্ররা মাদরাসামুখী হচ্ছে। বিশেষ করে করোনার পর মাদরসামুখী ছাত্রদের সংখ্যা বাড়ছে।

মাদরাসার উপর চাপ বাড়ছে

প্রাইমারি শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুল থেকে যেসব ছাত্র ঝরে পড়ছে, তারা অধিকাংশই মাদরাসায় ভর্তি হচ্ছে। ফলে মাদরাসাকেই প্রভাবক মনে করছে প্রাইমারি কর্মকর্তারা। প্রাইমারিতে ছাত্র বাড়ানোর একটাই পন্থা—মাদরাসামুখী ছাত্রদের স্রোত আটকে দেয়া।

হোমনা থানার একটি মহিলা মাদরাসার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, হোমনা থানার মাদরাসার মুহতামিমদের ডেকেছিলেন প্রাইমারি কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, যেন স্কুলফেরত ছাত্রদেরকে স্কুলে ফেরত দেয়া হয়। এছাড়াও আরও বিভিন্ন কটুকথা বলা হয়।

তবে যেহেতু এ বিষয়ে সরকারি লিখিত কোনো নির্দেশনা নেই তাই লিখিত কোনো নির্দেশনা দেয়া হয় না। কর্মকর্তারা যা বলেন, বলেন মৌখিক। ওই শিক্ষক ফাতেহকে বলেন, যেহেতু লিখিত কেনো নির্দেশনা নেই, তাই বিষয়টিকে উলামায়ে কেরামও তেমন গুরুত্ব দেননি।

স্কুলে কেন ছাত্র কমছে?

স্কুলে ছাত্র কমার পেছনে করোনায় স্কুল বন্ধ এবং ক্লাস ঠিকমতো না হওয়াকে দায়ি করেছেন শিক্ষকরা।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় হোমনা থানার নিলুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইনুদ্দিনের সঙ্গে। ফাতেহকে তিনি জানান, করোনার আগে তার স্কুলে ছাত্র ছিল ২১১ জন। এখন তার স্কুলে ছাত্র আছে ১৪০ জন। সরকারি নিয়ম হলো, প্রতিটি স্কুলে ৪০:১ অনুপাতে ছাত্র-শিক্ষক থাকবে। তার স্কুলে ৫ জন শিক্ষক। এ হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ছাত্র থাকার কথা। ৪০:১ অনুপাতে ছাত্র না থাকলে স্কুলের শিক্ষকদের উপর চাপ আসে। কেন ছাত্র কম, জবাবদিহি করতে হয়।

কেন ছাত্রসংখ্যা কমছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত, করোনায় অনকদিন স্কুল বন্ধ ছিল। দ্বিতীয়ত, ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ালেখা থেকে দীর্ঘসময় দূরে থাকার কারণে পড়াশোনা থেকে মন উঠে গেছে এবং বিভিন্ন ডিভাইসে মজে গেছে। পক্ষান্তরে মাদরাসা এর বিপরীত। করোনার একদম পিক টাইমে শুধু মাদরাসা বন্ধ ছিল। তাছাড়া বাকি সময় খোলা ছিল। তাদের পড়াশোনায় ঘাটতি হয়নি। ফলে অভিভাবকরা সন্তানদেরকে মাদরাসায় দিয়ে দিয়েছে। দেখা গেছে, যারা মাদরাসায় গিয়েছে,পড়াশোনায় কেবল তারাই আছে। যারা স্কুলে ছিল, তার পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কথা হয় হোমনা থানার গোয়ারিভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তাহেরের সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে জানান, তার স্কুলে করোনার আগে ছাত্র ছিল ৪০০। এখন ছাত্র আছে ২৫০। তার মতে, স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছে ব্যাপকহারে। চারদিকে পুরুষ এবং মহিলা মাদরাসার সংখ্যাও বাড়ছে। ছাত্রছাত্রীরা সেদিকে চলে যাচ্ছে।’

কী বলছে শিক্ষাবোর্ড

দেশের কওমি মাদরাসাগুলো এখন সরকার স্বীকৃত। কওমি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর তাকমিলকে সরকার মাস্টার্সের সমমান দিয়েছে। এই হিসেবে প্রাইমারির ছাত্র কমে গেলে মাদরাসাকে চাপ দেয়াটা অযৌক্তিক বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনরা। তারা বলছেন, স্কুল যেমন সরকার স্বীকৃত, তেমনি মাদরাসাও। মাদরাসর উপর চাপ এলে মাদরাসা বিভাগকে সেটা তদারকি করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে ফোন করা হয় মাদরাসা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ.কে.এম লুৎফর রহমানের সঙ্গে। বিষয়টি তাকে জানালে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগত জানান। পাশাপাশি একই বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সৈয়দ আসগর আলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সৈয়দ আসগর আলীকে ফোন করা হলে তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই জটিল।’ কোথাও এ বিষয়ে মাদরাসার উপর চাপ এলে মাদরাসা বিভাগ সেটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নটি নতুন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এমনিতে তো মাদরাসার উপর চাপ আসার কোনো কারণ নেই। ছাত্রদের অধিকার আছে, তারা স্কুলে পড়বে নাকি মাদরাসায়, তা নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবে। এ ব্যাপারে কেউ তাকে জোর করতে পারবে না।’

The post কমছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা : হোমনায় চাপ বাড়ছে মাদরাসাগুলোর ওপর appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/AEDqPB6

No comments:

Post a Comment