Friday, March 27, 2020

মুসলিম ইতিহাসে মহামারী : আলী সাল্লাবির বয়ানে

মাহদি হাসান 

মানবজাতির দীর্ঘ ইতিহাসে তাদের উপর নেমে এসেছে অনেক বিপদাপদ এবং দুর্যোগ। মহামারী, দুর্ভিক্ষ, প্লাবন, ভূমিকম্প এবং খরার মতো অনেক দুর্যোগ এসে আঘাত করেছে মানব সভ্যতার প্রাচীরে। এসকল বিপদাপদ যে মুসলিম জাতিকেও ছেড়ে দেয়নি, সেটাই স্বাভাবিক। মুসলিম ইতিহাসে এ সকল দুর্যোগ এবং এর ফলে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া ভালোভাবেই লিপিবদ্ধ আছে। তবে এসব দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক এবং ক্ষতিকর ছিল মহামারী। যা একাধিকবার মিসর, সিরিয়া, মাগরিব তথা মরক্কো এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল, ইরাক এবং আন্দালুসের মতো মুসলিম অঞ্চলগুলোতে আঘাত হেনেছিল। প্রাণহানি ঘটিয়েছিল এ সমস্ত এলাকার লক্ষ লক্ষ নাগরিকের।

মাকরিজি, ইবনু তুগরি বারদি, ইবনে কাসির, ইবনে ইয়াস, ইবনে বতুতা এবং ইবনে আযারা আল-মারাকেশির মতো সমসাময়িক ইতিহাসবিদগণ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া ঐ সকল মহামারী এবং এর প্রতিক্রিয়া ও ক্ষতি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের বিবৃতি পেশ করেছেন। অনেক গ্রন্থেই এ সমস্ত দুর্যোগ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাই ইসলামি ইতিহাসে এ সকল মহামারী যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে সেদিকে লক্ষ্য করে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক খাতের পাশাপাশি ইসলামি সমাজের চারিত্রিক এবং মানবিক ক্ষেত্রে এ সকল মহামারী যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে সেদিকে লক্ষ্য করে এটি সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন এবং গুরুত্ব দেয়া উচিত।

বর্তমান দিনগুলোতে পুরো পৃথিবী ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী ‘করোনা ভাইরাস’কে নিয়ে। দিনের পর দিন যার প্রকোপ কেবল বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাপী এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে বিশহাজারের মতো ( এবং এটি দ্রুতই বাড়ছে । ) সর্বত্র বিরাজ করছে ভয়-ভীতি। বিশেষ করে যে সকল দেশ অতিমাত্রায় বিপজ্জনক সেখানকার লোকেরা হয়ে পড়েছে অতি ভীত। তবে এ সকল দুর্যোগ আল্লাহ তায়ালারই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেছেন,

(وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ)

‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো এবং নিজেদেরকে হাতের উপার্জনের মাধ্যমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। আর সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীলগণকে ভালোবাসেন।’ [সুরা বাকারা: ১৯৫]

আমাদের উচিত একনিষ্ঠ মুমিনের মতো আল্লাহ তায়ালার কাছে এ সকল বিপদ থেকে পানাহ চাওয়া। এসবের উপসর্গ এবং কারণসমূহ বিদূরিত করার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করা। তবে সবার আগে প্রয়োজন আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং উপকরণ প্রস্তুত করা। পাশাপাশি নিজেকে আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত এবং তাঁর নির্ধারিত ভাগ্যলিপির কাছে সোপর্দ করা।

মহামারী কী?

মহামারী হচ্ছে শারীরিক কিছু জীবানু। যেগুলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘাঁটি বাঁধে এবং শরীর থেকে বেরিয়ে ক্রমান্বয়ে সংক্রমিত হয়। এর ফলে শরীরে অত্যন্ত যন্ত্রনা হয়। এর পাশাপাশি বমি হয় এবং হৃদ যন্ত্রনাও অনুভূত হয়। ( অবশ্য মহামারী রোগের প্রকারভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে। ) ইবনু হাজর আসকালানী রহিমাহুল্লাহু মহামারীর সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে, ‘এটি এমন ব্যাধি, যা বাতাসকে দূষিত করে, শরীর এবং মস্তিস্ককেও আক্রান্ত করে। এটি এমন এক বিষাক্ত উপাদান যা শরীরের নরম জায়গাগুলোতে টিউমারের সৃষ্টি করে। এর কারণ হচ্ছে, শরীরে থাকা পচা রক্ত। যা ধীরে ধীরে সংক্রমিত হয়।’

মহামারী বোঝানোর জন্য আরবিতে দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়। তাউন (الطاعون) এবং ওবা (الوباء)। উলামায়ে কেরাম এ দুটির মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাউনের উৎস সম্পর্কে জানা যায় না। তবে ওবার উৎস পরিচিত। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী ওবা হচ্ছে নির্দিষ্ট এক প্রকার রোগ ছড়িয়ে পড়া। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট সমাজে অথবা নির্দিষ্ট কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলে অথবা নির্দিষ্ট কোনো এক সময়ে মানুষের অনুমানের ঊর্ধ্বে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।

ইসলামি ইতিহাসে অতিক্রান্ত হওয়া মহামারীসমূহ :

ইসলাম আগমনের পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কটি মহামারী অতিবাহিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন শহরে এগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং ভয়াবহ ছিল যে কয়টি:

১- ১৮ হিজরি মোতাবেক ৬৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ছড়িয়ে পড়া আমওয়াস মহামারী।
২- ৬৯ হিজরি মোতাবেক ৬৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ছড়িয়ে পড়া জারিফ মহামারী।
৩- ৮৭ হিজরি মোতাবেক ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে ছড়িয়ে পড়া ফাতায়াত মহামারী। এই মহামারীতে অধিকাংশ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণের মৃত্যু হওয়ায় এটিকে তাউনে আশরাফ তথা সম্ভ্রান্তদের মহামারীও বলা হয়।
৪- ১৩১ হিজরি মোতাবেক ৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ছড়িয়ে পড়া তাউনু মুসলিম ইবনু কুতাইবা।
৫- এছাড়া আব্বাসীয়, মামলুক এবং আইয়ুবী শাসনামলে ইসলামি প্রাচ্যে আরো কিছু মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল।

নোটঃ অনেকের মতে আমওয়াস ইসলামি ইতিহাসের প্রথম মহামারী হলেও কতক ইতিহাসবিদের বর্ণনা অনুযায়ী ইসলামি ইতিহাসের প্রথম মহামারী এসেছিল ষষ্ঠ হিজরী মোতাবেক ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে। যার নাম ছিল তাউনু শিরাওয়াইহ ইবনু কিসরা। তৎকালীন মাদায়েন অর্থাৎ বর্তমান ইরানে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল। কেউ কেউ বলেছেন, আমওয়াস এবং শিরাওয়াইহ মহামারী একই সময়ে ছড়িয়েছিল।

ঐতিহাসিক আসমায়ীর (১২১-২১৬ হিজরি) বর্ণনা অনুযায়ী ইসলামি ইতিহাসের প্রথম মহামারী ছিল শামে ছড়িয়ে পড়া আমওয়াস। এতে প্রখ্যাত সাহাবী মুয়াজ ইবনু জাবাল রা. এবং তাঁর দুই স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। আরেক প্রখ্যাত সাহাবী আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রা.- এরও ইন্তেকাল হয় এই মহামারীতে। একই সময়ে ইরাকে ছড়িয়ে পড়েছিল শিরাওয়াই মহামারী। এগুলো ছড়িয়েছিল ওমর রা.-এর খেলাফতকালে। আমওয়াস এবং শিরাওয়াইহ মহামারী মাঝে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান রয়েছে।

অতঃপর ৬৯ হিজরিতে আবদুল্লাহ ইবনু জুবাইর রা.-এর খেলাফতকালে ছড়িয়ে পড়ে জারিফ মহামারী। (জারিফ মহামারী নিয়েও উলামায়ে কেরামের মাঝে ইখতেলাফ রয়েছে, বেশ কয়েকটি মহামারীকে জারিফ নামকরণ করা হয়েছে)। এরপর আসে তাউনু ফাতায়াত। যাকে তাউনু আশরাফ নামেও অভিহিত করা হয়। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ানের শাসনামলে এই মহামারী ছড়িয়েছিল। আবদুল মালেক মহামারীর সময়েই অথবা ক্ষণকাল পরে ইন্তেকাল করেছেন। উমাইয়া ইবনু খালিদ ইবনু আসওয়াদ, আলি ইবনু আসমা এবং সাসা ইবনু হিসনের মতো ব্যক্তিত্বের ইন্তেকাল হয় এই মহামারীতে।

অতঃপর ১০০ হিজরিতে আসে তাউনু আদি ইবনি আরতাত। অতঃপর ১২৭ হিজরিতে আসে তাউনু গোরাব; গোরাব ছিল সে সময়ের নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তির নাম। এই মহামারীতে সবার আগে এই ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে। তাই তার নামে এই মহামারীর নামকরণ করা হয়। উমাইয়া শাসক ওলিদ ইবনু ইয়াজিদ ইবনু আবদুল মালেকের সময় এই মহামারী ছড়িয়েছিল। এরপর ১৩১ হিজরিতে আসে তাউনু মুসলিম ইবনু কুতাইবা। রমজান মাসে এসে শাওয়াল মাসেই শেষ হয়ে যায় এই মহামারী। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আইয়ুব সুখতিয়ানিও এই মহামারীতে ইন্তেকাল করেন।–মাহদি হাসান। (১)

ইসলামি প্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়া মহামারীসমূহ:

আমওয়াস মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল ওমর রা.-এর খেলাফতকালে। জেরুজালেম এবং রামলার মধ্যবর্তী আমওয়াস নামক ছোট্ট এক গ্রাম থেকে সূত্রপাত হয়েছিল এই মহামারীর। সেদিকে ইঙ্গিত করেই এর নাম হয়েছে আমওয়াস। এখান থেকে পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে তৎকালীন শামের সর্বত্র। মুসলিম বাহিনী এবং রোমীয়দের মধ্যকার প্রবল এক যুদ্ধের পর এ মহামারীর সূত্রপাত হয়েছিল। যে যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক। ফলে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছিল। লাশের পর লাশের মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। আল্লাহ তায়ালা স্বীয় প্রজ্ঞা অনুযায়ীই এটির সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। এই মহামারী শামে গুরুতর আকার ধারণ করেছিল। অনেক মানুষ এতে নিহত হয়। তাদের মধ্যে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, মুয়াজ ইবনু জাবাল, ইয়াজিদ ইবনু সুফিয়ান, হারিস ইবনু হিশাম (তাঁর সম্পর্কে এও বলা হয় যে তিনি ইয়ারমুকের যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন), সুহাইল ইবনু আমর, উতবা ইবনু সুহাইল প্রমুখ সাহাবীগণ ইন্তেকাল করেন।

৬৯ হিজরিতে জারিফ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে বসরা নগরীতে। আবদুল্লাহ ইবনু জুবাইর রা.-এর খেলাফতকালে। মৃতের সংখ্যাধিক্যের কারণে এ মহামারীর নাম হয়েছিল জারিফ। জারিফ শব্দের অর্থ সুদূরপ্রসারিত। এই মহামারীতে মৃতের মিছিল প্লাবনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। ৮৭ হিজরীতে ইরাক এবং বৃহত্তর সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে আরেক মহামারী। এটিকে তাউনু ফাতায়াত অথবা যুবতীদের মহামারী বলা হয়। কারণ, প্রথমে এটি মহিলা এবং কুমারীদের মাঝে ছড়িয়েছিল। অতঃপর পুরুষদের মাঝে ছড়িয়েছে। এটিকে তাউনু আশরাফও বলা হয়। কারণ, এতে সম্ভ্রান্ত এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মৃত্যু হয়েছিল অধিক হারে।

উমাইয়া শাসনামলের সর্বশেষ মহামারী ছিল ১৩১ হিজরীর তাউনু কুতাইবা ইবনু মুসলিম। এ মহামারীতে সবার আগে ইন্তেকাল করেন বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি কুতাইবা ইবনু মুসলিম। তার নামেই নামকরণ করা হয় এই মহামারীর। বসরায় আপতিত হওয়া এই মহামারীর স্থায়ীত্ব ছিল তিন মাস। রমজান মাসে এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। তখন একইদিনে একহাজারের অধিক জানাজা পড়া হতো।

ইবনু কাসির বলেন, ৬৫৬ হিজরি মোতাবেক ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মোঙ্গলরা যখন বাগদাদকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়, তখন মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। বেশ কয়েকজমাস বন্ধ হয়ে থাকে জামায়াত এবং জুময়ার নামাজ আদায়। মঙ্গোলরা চলে যাওয়ার পর চল্লিশদিন পর্যন্ত বাগদাদ বিরান অবস্থায় পড়ে থাকে। গুটিকয়েক মানুষ শুধু ছিল সেখানে। বাগদাদের পথে পথে কাটা বৃক্ষের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়েছিল লাশের পর লাশ। বৃষ্টি নেমে এলে পাল্টে যায় লাশের অবস্থা। পুরো বাগদাদ তাদের লাশের দুর্গন্ধে দূষিত হয়ে যায়। দূষিত বাতাসের কারণে ছড়িয়ে যায় মহামারী। এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ে বৃহত্তর সিরিয়াতেও। পরিবেশ বিপর্যয় এবং দূষিত আবহাওয়ার কারণে সেখানেও অনেক লোকের মৃত্যু হয়। মানুষ হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ১৩/২০৩)

৭৪৮ হিজরী মোতাবেক ১৩৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মামলুকদের শাসনামলে বৃহত্তর সিরিয়া মুখোমুখি হয় আরেক মহামারীর। এ মহামারীতে সিরিয়ার অধিকাংশই অঞ্চলই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ কারণে এই মহামারীকে তাউনে আজম বলা হয়ে থাকে। আলেপ্পো, দামেস্ক, জেরুজালেম এবং উপকূলীয় শহরগুলোর অধিবাসীদেরকে এই মহামারী প্রায় নিঃশেষ করে দেয়। এমনিভাবে ৭৯৫ হিজরী মোতাবেক ১৩৯২ খ্রিষ্টাব্দে আলেপ্পোতে ছড়িয়ে পড়ে অপর এক ব্যাধি। যার নাম দেয়া হয় ‘আল-ফানাউল আজিম’ তথা মহাধ্বংস। এ মহামারীর করাল গ্রাসে আলেপ্পো এবং পার্শ্ববর্তী জনপদ থেকে ঝরে পড়ে দেড় লক্ষ মানুষের প্রাণ।

এখন আসি মাগরিব তথা মরক্কো অঞ্চলের কথায়। এ অঞ্চলের ইতিহাসে মোরাবেতীন, মুওয়াহহিদীন এবং মুর বংশের শাসনামলে অনেক মহামারী, দুর্ভিক্ষ এবং খরা অতিক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ৫৭১ হিজরী মোতাবেক ১১৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ছড়িয়ে পড়া মহামারী। যা মরক্কো এবং আন্দালুসে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। মুওয়াহহিদীন সাম্রাজ্যের শাসনামলে তারা দেখেছিল এ মহামারীর ভয়াল রূপ। এর ফলাফল ছিল খুবই ভয়াবহ। তৎকালীন মুওয়াহহিদীন শাসক ইউসুফ ইবনু ইয়াকুবের চার ভাই এ মহামারীতে ইন্তেকাল করেন। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৯০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এ মহামারীতে। ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দের সময় এ অঞ্চলে আরেকটি মহামারী হয়েছিল। এ মহামারী ছড়িয়েছিল আলেকজান্দ্রিয়া থেকে তিউনিসিয়ায় আসা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে। প্রথমে তিউনিসিয়া থেকে আলজেরিয়া, অতঃপর মরক্কোতে ছড়িয়েছিল। মরক্কোর ফেজ এবং মেকনেস শহর থেকে শুরু করে এটি ছড়িয়ে পড়েছিল রাজধানী রাবাত পর্যন্ত। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৩০ জনকে এই মহামারীর বলি হতে হয়েছে।

এ তো গেল মহামারীর কথা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দুর্ভিক্ষ এবং খরার ঘটনাও ইসলামি ইতিহাসে কম নয়। বিভিন্ন সময়ে ইসলামি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল এ সকল দুর্যোগ প্রত্যক্ষ করেছে। যার কিছু এখানে উল্লেখ করা হলো। কিন্তু এর ফলে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল? এ ধরণের দুর্যোগ-মহামারীর সাথে মুসলিমরা কীভাবে মোকাবেলা করেছে? ইসলামি আকিদার আলোকপাতে তারা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? চলুন জেনে নেয়া যাক।

ইসলামি ইতিহাসে মহামারীর কারণে সৃষ্ট সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া

মহামারী এবং দুর্যোগ একটি জাতি ও জনপদের জন্য প্রবল হুমকিস্বরূপ। যা জনপদকে ফেলে দেয় ধ্বংসের মুখে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে ঠেলে দেয় পতনের দুয়ারে। মহামারী আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ। যাকে চান তাকে আক্রান্ত করেন। এটি আল্লাহ তায়ালার একটি তরবারি। যা তিনি তাঁর বান্দার রহমত অথবা শাস্তির উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেন। তাই মহামারী একটি জাতি এবং রাষ্ট্রের জন্য হতে পারে বিরাট বিপদ। আমওয়াস মহামারী ছিল মুসলমানদের জন্য অনেক বড় একটি বিপদ। এতে বিশ হাজারের অধিক মুসলমানের মৃত্যু হয়েছিল। যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সাহাবী এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব।

বিশ হাজার সংখ্যায় অধিক মনে না হলেও মুসলমানদের জন্য তা ছিল প্রবল আশঙ্কার কারণ। তখন রোমের সাথে সংঘাত চলছিল তাদের। তাই তাদের পক্ষ বিপদের আশংকা ছিল। সত্যি কথা বলতে, রোমীয়রা যদি মুসলমানদের এই ক্ষতির কথা জানতে পেত এবং আক্রমণ করে বসত, তাহলে মুসলমানদের জন্য তখন প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন হয়ে যেত। কিন্তু কিছুদিন আগেই পরাজিত হয়ে রোমীয়রা নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। তাই আর মুসলমানদের হামলা করার সাহস হয়নি তাদের।

সামাজিক দিক বিবেচনায় যদি বলি, মামলুকী শাসনামলে মহামারীর ফলে আবাসন ব্যবস্থায় খুবই বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে শহর এবং গ্রামে জনবসতির ঘনত্বের ক্ষেত্রে তৈরী হয়েছিল বিরাট পার্থক্য। মহামারীর কারণে অধিকাংশ গ্রামই বিরান হয়ে পড়েছিল। এর ফলে সৃষ্টি হয় জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তন। কমে যায় কৃষকের সংখ্যা। কমে যায় ফসল এবং উৎপন্ন দ্রব্য। যার ফলে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয় এবং জিনিসপত্রের মূল্য হয়ে যায় আকাশচুম্বী। সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় রূপ ধারণ করে। কতক ভীরু মানসিকতার ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরা পণ্য স্টক করে রেখে মূল্যবৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম সংকট তৈরী করে। অপরদিকে প্রয়োজনগ্রস্ত এবং নিঃস্ব কতক ব্যক্তি ঝুঁকে পড়ে চৌর্যবৃত্তির এবং ছিনতাইয়ের প্রতি। ফলে সামাজিক অবক্ষয়ও হতে শুরু করে আবশ্যিকভাবে। এ সকল মহামারীর ফলে অনেক বুজুর্গ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং উলামায়ে কেরামের ইন্তেকাল হয়। যার ফলে দ্বীনী শিক্ষার ক্ষেত্রে শূন্যতা তৈরী হয়ে যায়। এমনকি তখনকার মানুষ জ্যোতিষী-গনকদের দরবারে পদচারণা শুরু করে দেয়।

মহামারীর সাথে কেমন ছিল মুসলিমদের আচরণ?

আমওয়াস মহামারীর উত্তাল দিনগুলোতে মুসলমানরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস অনুযায়ী নিজেদের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যখন তোমরা কোথাও মহামারীর কথা শুনবে সেখানে যাবে না। যদি কখনো মহামারীগ্রস্ত এলাকায় থাকো, তবে সেখান থেকে পলায়ন করবে না’। নবীজির এই হাদীসেই বর্তমান সময়ের কোয়ারেন্টিনের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। নবীজি মহামারীগ্রস্ত অঞ্চলে আগমনের পাশাপাশি সেখান থেকে বের হওয়াও নিষেধ করেছেন। যাতে করে মহামারী সংক্রমিত হয়ে অন্যত্র না ছড়ায়। এদিক বিবেচনায় এই হাদীসটি তিব্বে নববী অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে এক অনন্য সংযোজন।

এই হাদীসের উপর আমল করে ওমর রা. শামে প্রবেশ না করেই মদীনায় ফিরে এসেছিলেন। তবে এটি কখনোই মৃত্যু থেকে পলায়ন ছিল না। আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা. যখন ওমর রা.-কে প্রশ্ন করলেন, আপনি আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যলিপি থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন? তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘আপনি ব্যতিত অন্য কেউ যদি এ কথা বলতো, তবে তাকে সমুচিত শাস্তি দিতাম। হ্যা, আমি আল্লাহ তায়ালার এক ভাগ্যলিপি থেকে অপর ভাগ্যলিপির দিকে পালিয়ে যাচ্ছি।’ তবে যদি কেউ অতি প্রয়োজনে বের হয়, তা জায়েজ আছে। চিকিৎসার জন্য বের হলেও তা বৈধ। কারণ দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকা ছেড়ে পরিচ্ছন্ন এলাকায় যেতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এবং তা চাহিদাও বটে। ওমর রা. আমওয়াস মহামারীর সময়ে আবু উবাইদা ইবনুল জাররা রা.কে মুসলমানদেরকে নিয়ে নীচু এলাকা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত উচু এলাকায় যেতে বলেছিলেন। আবু উবাইদা তেমনটিই করেছিলেন। এ ঘটনায় অসুস্থতা এবং দুর্যোগে সুরক্ষার উপায়-উপকরণ গ্রহণ এবং ব্যাধি সংক্রমণের উৎস থেকে নিরাপদ অবস্থানে সরে যাওয়ার শিক্ষা রয়েছে।

আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ এবং অপর কতক সাহাবী মহামারী আক্রান্ত হওয়ার পরও শাম থেকে বের হননি। আরো কতক উলামায়ে কেরামও তখন আক্রান্ত হন। মহামারী থেকে পালিয়ে না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে উলামায়ে কেরাম বলেন, ‘যদি মানুষ ঢালাওভাবে বেরুতে থাকে, তবে অক্ষম এবং অতি অসুস্থ ব্যক্তিরা সেবাহীন হয়ে যাবে। কারণ, জীবিত ও মৃত অবস্থায় তাদের দেখাশোনার কেউ থাকবে না। যদি শরীয়ত বের হয়ে যাওয়ার অনুমতি দিত, তাহলে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা বেরিয়ে যেত। আর অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা মনঃক্ষুন্ন হয়ে বসে থাকত। বলা হয়ে থাকে, যুদ্ধ থেকে পলায়ন নিষেধ করার পক্ষে হিকমত হচ্ছে, যারা পালায়নি তাদের মনোবল ভেঙ্গে না পড়া।

যাইহোক, শাম থেকে এই ভয়াবহ মহামারী দূর হয়েছিল আমর ইবনুল আস রা. ক্ষমতাগ্রহণের পর। তিনি লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে ভাষণে বলেন, ‘হে লোকসকল, এই মহামারী যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। তাই এ থেকে বাঁচতে পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিন। আগুন যখন জ্বালানোর মতো কিছু না পাবে, তখন এমনিতেই নিভে যাবে।’ অতঃপর লোকেরা দলে দলে গিয়ে বের হয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিতে থাকে। অবশেষে আল্লাহ এই মহামারীকে উঠিয়ে নেন। আমর ইবনুল আস রা.-এর গৃহীত এই পদক্ষেপ ওমর রা.-এর কানে পৌঁছায়। তিনি এটিকে অপছন্দ করেননি। এখান থেকে আমরা মহামারীর সময়ে একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার এবং জমাটবদ্ধ না হওয়ার বৈধতা পাই। এর ফলে সংক্রমণের হার কমে যাবে। অসুস্থতা লোকদেরকে দলে দলে ঘায়েল করতে পারবে না। বরং যারা আক্রান্ত হয় তারাই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাকিরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকবে।

পরবর্তীতেও মহামারী প্রতিরোধে মুসলমানগণ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মামলুকদের সময়ে মিসর এবং শামজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারীকে রুখতে সুলতান এবং স্বচ্ছল ব্যক্তিগণ শামের শহরগুলোতে একাধিক হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন। যাতে করে আক্রান্তদের সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। সে সময় যে বিরাট সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করত, সংক্রমণের ভয়ে তিনদিন পর্যন্ত তাদের লাশকে ফেলে রাখা হতো। কেউ স্পর্শ করত না। তাই কতক শাসক এবং স্বচ্ছল ব্যক্তি লোকদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়োজনীয়তায় সাড়া দিয়ে মৃতদের জন্য গোসলখানা এবং সমাধিস্থলের ব্যবস্থা করেছেন। ইসলাম শিক্ষা দেয় মৃত ব্যক্তিকে যথাসম্ভব দ্রুত সম্মানপ্রদর্শন পূর্বক গোসল এবং দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করতে। এ সকল স্থাপনা হতে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী গুরুত্ব সহকারে অসহায় মৃত মুসলিমদের গোসল এবং দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হতো।

এমন সংকটপূর্ণ সময়ে মুসলমানরা কখনোই আল্লাহ তায়ালা নিকটবর্তিতা এবং তাঁর কাছে দোয়া করার কথা ভুলে যায়নি। নেককার এবং সৎ ব্যক্তিগণ আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা, ইস্তেগফার করেছেন। অধিক পরিমাণে ইবাদতে লিপ্ত হয়েছেন। আল্লাহর প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য তারা বন্ধ করে দিয়েছিলেন মদের দোকান এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোকে। মানুষ দূর হয়ে গিয়েছিল অসৎ কাজ এবং পাপাচারের জগত থেকে।

কোয়ারেন্টিন প্রথা প্রয়োগের ক্ষেত্রে মুসলমানদের রয়েছে পূর্ব অভিজ্ঞতা। ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মাগরিব তথা মরক্কো এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর তারা কোয়ারেন্টিন তথা সঙ্গনিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং প্রাচ্য থেকে আগত এই দুর্যোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ মহামারীর প্রকোপ থেকে বাঁচতে সক্ষম না হলেও তারা এটির আগমনকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছিল। এটি প্রথমে ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ছড়িয়েছিল।

আলজেরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর মহামারীর আগমনকে বিলম্বিত করতে মরক্কোর শাসক সাইয়িদি মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ মরক্কোর মহাসড়কগুলোতে বসিয়েছিলেন সামরিক পাহাড়া। ১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দে এই মহামারী থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা প্রণয়নে টাঙ্গিয়ারে একটি কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল। তারা সামুদ্রিক দিক থেকে সংক্রমন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কোয়ারেন্টিনের আদেশ দিয়েছিলেন। এর আগে মাওলা সুলাইমান মহামারী আক্রান্ত আলজেরিয়াতে কোয়ারেন্টিন আবশ্যক করেছিলেন।

কুরআনের দৃষ্টিতে করোনা ভাইরাসের সাথে আমাদের কীরূপ আচরণ করব এবং সুরক্ষার উপায়-উপকরণ গ্রহণের পদ্ধতি

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ)

‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো এবং নিজেদেরকে হাতের উপার্জনের মাধ্যমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। আর সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীলগণকে ভালোবাসেন।’ [সুরা বাকারা: ১৯৫]

আল্লাহ তায়ালার এই আয়াতের উপর নির্ভর করে, সন্তুষ্টির সাথে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত ভালো-মন্দ ভাগ্যের কাছে নিজেকে সোপর্দ করে এবং বিপদাপদে মুসলমানদের অভিজ্ঞতা এবং গৃহীত পদক্ষেপগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা নিন্মোল্লোখিত ফলাফল পেলাম।

১- চিকিৎসা এবং সুরক্ষার উপায়-উপকরণ গ্রহণের আবশ্যকীয়তা। পাশাপাশি অল্পেই তুষ্ট হতে হবে এবং এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এসবের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার এক সিদ্ধান্ত থেকে আরেক সিদ্ধান্তের দিকে পলায়নের আয়োজন করছি।

২- বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যদি ধৈর্য ধরি তবে এই ব্যাধি এবং বিপদের উপযুক্ত প্রতিদান আমরা পাবো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, ‘মহামারী সকল মুসলমানের জন্য শাহাদাতস্বরূপ।’ আমরা আশা রাখব যে, যদি কেউ করোনা ভাইরাসে মারা যায়া, তবে সে পূর্বের মহামারী আক্রান্ত মুসলিমদের মতোই শহীদ হিসেবে গন্য হবে। যদি সে শাহাদাতের নিয়ত করে থাকে, বিপদে ধৈর্য ধরে এবং সকল অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করে থাকে।

৩- সংক্রমিত স্থান থেকে সরে যাওয়া এবং কোয়ারেন্টিন গ্রহণের আবশ্যকীয়তা। রাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রনালয় এ লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংক্রমিত স্থানে থাকারও অনুমতি রয়েছে। সেখান থেকে বের হওয়ার অনুমতিও রয়েছে। যদি কেউ সেখানে অবস্থান করে আক্রান্ত হয়ে যায়, তবে তার বেরিয়ে যাওয়াটা হবে অনর্থক। সেই লোক বেরিয়ে গিয়ে উল্টো আরও সুস্থ মানুষদেরকে আক্রান্ত করবে। কেউ যদি আক্রান্ত না হয় তবে তার জন্য সেখান থেকে চিকিৎসার নিমিত্তে বের হওয়ার অনুমতি আছে। তবে এই শর্তে, একেবারে সবাই বের হতে পারবে না অসুস্থদের দেখভাল করার জন্য লোক থাকা অত্যাবশ্যক।

সবশেষে বলব, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় মাধ্যম এবং চিকিৎসা মন্ত্রণালয় থেকে গুরুত্বের সাথে এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক দিক নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। কারন, তারাই প্রতিটি দেশে রোগের বিস্তারিত বিবরণ এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক অবগত। এই ভয়াবহ বিপদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য এবং একে প্রতিরোধ করতে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই দায়িত্ববোধ এবং সচেতনতা থাকা জরুরী।

(১)https://bit.ly/33OQ175

The post মুসলিম ইতিহাসে মহামারী : আলী সাল্লাবির বয়ানে appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/3dyMgqX

No comments:

Post a Comment