Tuesday, March 24, 2020

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ

ফাতেহ ডেস্ক

ভয়াল পঁচিশে মার্চ, কালরাত আজ।

১৯৭১ সালের এই কালরাতেই পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা সংঘটিত হয়। সেই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ এদেশের বড় শহরগুলোতে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে অসংখ্য ঘুমন্ত বাঙালিকে হত্যা করে।

বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এক অধ্যায় ২৫ মার্চের মর্মন্তুদ গণহত্যার দিনটি মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পর ২০১৭ সাল থেকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেইসঙ্গে দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবেও ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবিও অব্যাহত রয়েছে।

এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের মহামারি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ায় এবার কোনো কর্মসূচিই থাকছে না দিনটিকে ঘিরে। করোনা সংকটের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কার্যত অচলাবস্থা চলছে।

সব ধরনের সভা-সমাবেশ, জনসমাগমসহ পরিবহন চলাচল, মার্কেট ও বিপণিবিতান বন্ধ হয়ে গেছে। ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। দেশের সিংহভাগ মানুষও নিজ নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর পরও দেশের মানুষ আজ নীরবে স্মরণ করবেন, শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাবেন ২৫ মার্চের গণহত্যার শিকার অগণিত শহীদকে।

একাত্তরের পঁচিশে মার্চ দিনভর অশান্ত পরিস্থিতি ছিল দেশজুড়ে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত অবধি মিছিল-মিটিং-স্লোগানে মুখরিত রাজধানী ঢাকাবাসীর প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েন এক সময়। গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঘুমাতে যাওয়ার। কিন্তু নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষগুলোর কেউই ঘুণাক্ষরে জানতে পারেননি ততক্ষণে খুলে গেছে নরকের দরজা।

রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রথম রাস্তায় নেমে আসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তারা প্রথমে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পরে একে একে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি ও পিলখানা পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) সদর দপ্তরসহ রাজধানীর সর্বত্র আক্রমণ চালিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পাশাপাশি নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি বড় শহরেও।

তবে রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা রাইফেল তাক করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তবে শত্রুর ট্যাঙ্ক আর ভারী মেশিনগানের ক্রমাগত গুলির মুখে মুহূর্তেই গুঁড়িয়ে যায় সব ব্যারিকেড। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে আগুনে ভস্মীভূত করা হয় পুলিশ সদর দপ্তর। পরে পাকিস্তানি সেনাদের ভারী ট্যাঙ্ক ও সৈন্যবোঝাই লরিগুলো নল উঁচিয়ে ঢুকে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। একে একে জগন্নাথ হল, ইকবাল হল ও রোকেয়া হলসহ সব হলেই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ৯ শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীসহ তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে হত্যা করে।

অবশ্য এ পরিস্থিতিতেও রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন বাঙালি ছাত্র-জনতা। ঢাকার ফার্মগেট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চারপাশ এবং চট্টগ্রামেও এ প্রতিরোধ ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস বর্বরতার মুখে সেদিন কিছুই করতে পারেননি অকুতোভয় বাঙালি।

পঁচিশে মার্চ শুরু হওয়া এ বাঙালি নিধনযজ্ঞ চলেছে পরের টানা ৯ মাস ধরে। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে গোটা বাংলাদেশই হয়ে উঠেছিল বধ্যভূমি। নৃশংস ও বর্বরোচিত এ হত্যাযজ্ঞে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তাদের এদেশীয় দোসর ঘাতক দালাল রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।

-এ

The post আজ ভয়াল ২৫ মার্চ appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/2UfdMCk

No comments:

Post a Comment