Monday, March 23, 2020

করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ১০ দেশ

ফাতেহ ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখন বৈশ্বিক মহামারী। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ১৯২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশ। গত আড়াই মাসে সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। আর মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৭০০ জনের। বর্তমানে চিকিৎসাধীন সোয়া ২ লাখ মানুষ। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ১৪ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।

চীন: চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি সেখানে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখা যায়। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এক রোগীর শরীরে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত করেন চিকিৎকরা। দ্রুতই ছড়িয়ে পড়তে থাকে এই ভাইরাস। আক্রান্ত হতে থাকেন চীনা বাসিন্দারা। ৮ জানুয়ারি নিউমোনিয়ার মতো একটি নতুন ভাইরাসের কথা জানা যায়। এই ভাইরাস আরো ছড়িয়ে পড়ে বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় দেশবাসীকে সতর্ক করে বেইজিংয়ের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। এরপর ১১ জানুয়ারি এই ভাইরাসে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২৯ জানুয়ারি মধ্যে চীনের সমস্ত প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস।

৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৭২৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিলো ৩৪ হাজার ৮৭৮ জন। যার মধ্যে শুধু হুবেই প্রদেশেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২৪ হাজার ৯৫৩ এবং মৃতের সংখা ছিলো ৬৯৯ জন। এরপর ৩১ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ববাপী জরুরী স্বাস্থ্য সতর্কতা ঘোষণা করে। এখন পর্যন্ত চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৫৪ জন। মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৬১। চীনে ব্যাপকহারে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও বর্তমানে দেশটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরই মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭২ হাজার ৪৪০ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। গত এক সপ্তাহে চীনে নতুন করে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি, মৃত্যুর খবরও আসেনি।

ইতালি: চীনের পর ইউরোপের দেশ ইতালিতে করোনার প্রাদুর্ভাব ভয়বহ আকার ধারণ করেছে। মৃত্যুতে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। একদিনে ৮০০ জনের মৃত্যুর রেকর্ডও গড়েছে দেশটি। গত ৩১ জানুয়ারি ইতালির রোমে দুই চীনা পর্যটকের শরীরে পাওয়া যায় করোনা ভাইরাস। এক সপ্তাহ পরে চীনের উহান থেকে দেশে ফেরা ইতালীয় এক নাগরিকের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়। এরপর দ্রুত মানুষে মানুষে ছড়াতে থাকে এই ভাইরাস। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হয়। ২২ ফেব্র“য়ারি আরো ৬০ জন আক্রান্তের পাশাপশি প্রথম এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আর মার্চের প্রথম সপ্তাহে ইতালির সকল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ইতালিতে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজার। আর চীনকে ছাড়িয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫ হাজার। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন চিকিৎসক। আড়াই হাজারেরও বেশি চিকিৎসক ও মেডিকেল স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ২৪ জন। এরই মধ্যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধসহ পুরো দেশটি লক ডাউন করা হয়েছে।

ইরান : করোনা ভাইরাসে ইতালির পর বেশি বিপর্যস্ত দেশ ইরান। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় দেশটিতে। এরপর ১৭ মার্চ ইরান কর্তৃপক্ষ ৯৮৮ জনের মৃত্যু ও ১৬ হাজার আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ৬৩৮। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১ হাজার ৬৮৫ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৯১৩। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১২ হাজার ৪০ জন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কেউ নেই।

স্পেন : স্পেনেও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। চীন, ইতালি ও ইরানের পর স্পেনে করোনয় মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি স্পেনে একজন জার্মান পর্যটকের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭২ জনের মৃতের খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ২৮ হাজার ৭৬৮ জন। সুস্থ হয়েছেন আড়াই হাজার। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৪ হাজার ৪২১ জন। এদের মধ্যে ১ হাজার ৭৮৫ জনের অবস্থা আশঙ্কজনক। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধসহ পুরো দেশটি লক ডাউন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রেও দিন দিন বেড়ে চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন মৃত্যুর খবর। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজার। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪৫৭। চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৪ হাজার ৪২৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭৮ জন। গত ২০ জানুয়ারি চীনের উহান ফেরত এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম করোনা সনাক্ত হয়। আমেরিকান সামোয়া ও উত্তর মেরিয়ানা দ্বীপ বাদে যুক্তরাষ্টের ৫০ টি অঙ্গরাজ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২৩টি রাজ্যে। ২০ মার্চের আগে দেশটিতে ১৫৪ জন মারা যায়। তার মধ্যে ওয়াশিংটন রাজ্যেই ৯৪ জনের মৃত্যু হয়। করোনার প্রদুর্ভাবের কেন্দ্রবিন্দু ওয়াশিংটন থেকেই নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস।

ফ্রান্স : যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই পথে হাঁটছে ফ্রান্স। বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৭৪ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২০০ জন। এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ১৩ হাজার ১৪৪ জন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ১ হাজার ৭৪৬ জন। গত ২৪ জানুয়ারি চীন থেকে ঘুরে আসা ফ্রান্সের এক নাগরীকের শরীরে প্রথম করোনা সনাক্ত হয়। ইতোমধ্যে দেশটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

যুক্তরাজ্য : নাজুক অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। সেখানেও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ছড়িয়ে পড়ছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে। দেশটিতে গত ৩১ জানুয়ারি দুই জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। মারা গেছে ২৮১ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৫ হাজার ২৬৭ জন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ২০জন। যুক্তরাজ্যেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

দক্ষিণ কোরিয়া : দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্রুত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তারা তা থামাতে পেরেছে। দেশটিতে আক্রান্ত প্রায় ৮ হাজার ৯৬১ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ জনে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১৬৬ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ৫ হাজার ৬৮৫ জন। এদের মধ্যে ৫৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত ২০ জানুয়ারি প্রথম করোন আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত হয় দেশটিতে।

জার্মানি : জার্মানিতেও প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৮৭৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও সেখানে মৃতের সংখ্যা তুলনামূলক কম, মাত্র ৯৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৬৬ জন মানুষ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন ২৪ হাজার ৫১৩ জন। গত ২৭ জানুয়ারি দেশটিতে প্রথম করোনা সনাক্ত হয়। ৯ মার্চ প্রথম দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে দেশটি। ১৩ মার্চ থেকে দেশটিতে স্কুল কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনায় বয়স্কদের সুস্থ রাখতে নার্সিং হোমে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

নেদারল্যান্ড : গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেদারল্যান্ডে প্রথম করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়। দিন দিন সেখানেও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশটিতে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৭৯ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ২০৪ জন। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪ হাজার ২৩ জন। তাদের মধ্যে ৩৫৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

-এ

The post করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ১০ দেশ appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/2xjWBXj

No comments:

Post a Comment