Sunday, November 29, 2020

রোহিঙ্গা সংকটে ওআইসিকে দৃঢ়ভাবে পাশে চায় বাংলাদেশ

ফাতেহ ডেস্ক:

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কাকে মাথায় রেখেই কূটনৈতিকভাবে সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-কে দৃঢ়ভাবে পাশে চায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মামলা পরিচালনায় ৫ লাখ ডলার দিয়েছে।

ওআইসি-র বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠনটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে তহবিল সংগ্রহ অভিযানে বাংলাদেশ এ সহায়তা প্রদান করেছে। রোহিঙ্গা গণহত্যা প্রশ্নে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আইনি লড়াইয়ে সহায়তায় এ অর্থ ব্যবহার করা হবে।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে শুরু হওয়া ওআইসি-র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুনর্বাসনে বাংলাদেশকে সব রকমের সহযোগিতা করতেও আহ্বান জানান জাবেদ পাটোয়ারী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিল বা সিএফএম বৈঠকের ৪৭তম অধিবেশনে শুক্রবার তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এ বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তিনি যেতে পারেননি। তার অনুপস্থিতিতে জাবেদ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যোগ দেয়।

দুই দিনের অধিবেশনে ওআইসির সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে সংস্থাটির সদস্য নয় এমন দেশগুলোতে মুসলিম সংখ্যালঘু ও জনগোষ্ঠীদের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

এতে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। তিন বছর আগে এক সেনা অভিযানের মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে বাস্তুচ্যুত করার বিষয়টি নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে।

নিজের বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর চার দফার প্রস্তাবের বিষয়টি উত্থাপন করেন।

তিনি বলেন, “মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ একাধিকবার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”

“কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও সেখানে ফিরে যায়নি। বিরাজমান এ সমস্যা এখন কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা আশা করবো সংকট নিরসনে ওআইসি বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুনর্বাসনে তারা আমাদের সব রকমের সহযোগিতা করবেন।”

গত বছরের নভেম্বরে ওআইসি, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের সমর্থনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজে-তে মামলা করে গাম্বিয়া। আন্তর্জাতিক আদালতে ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর এর প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

২৩ জানুয়ারি আইসিজে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করে। জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, “ওআইসি-র জেনারেল সেক্রেটারিয়েট এখন আইসিজে-তে গাম্বিয়ার লড়াইয়ে সহায়তার জন্য একটি বিশেষ হিসাব খুলেছে। আর পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিও তহবিলের জরুরি প্রয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছে।”

গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী দাউদা এ জালো মামলার সর্বশেষ আপডেট উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, “এ আইনি মামলার জন্য আমি ওআইসি’র সদস্য দেশগুলোর কাছে জরুরি, স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানের আহ্বান জানাচ্ছি।”

বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ধনী-গরিব সব দেশে সুষম বণ্টন এবং ওআইসির সদস্য মধ্যপ্রাচ্যের তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলোতে কাজ করা বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার প্রসঙ্গে আলোচনা করেন ড. জাবেদ পাটোয়ারী।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শনিবার ওআইসি-র পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, ওআইসি-র মহাসচিব ও ৪৭তম সিএফএমের সভাপতি দুই দিনের বৈঠক শেষ করেন।

The post রোহিঙ্গা সংকটে ওআইসিকে দৃঢ়ভাবে পাশে চায় বাংলাদেশ appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/3q9UT1o

No comments:

Post a Comment