Friday, July 15, 2022

জলবায়ু পরিবর্তন : প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ

নাসিম ইমরান:

পরিবেশ

বস্তুজগত ও জীবজগতের ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা হচ্ছে পরিবেশ (Environment)। অর্থাৎ ভূমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত সকল উপাদানের মধ্যে একটি সমন্বয় বা একে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা। বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ম্যাকাইভার (১৮৮২-১৯৭০) বলেন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থা হলো পরিবেশ। মানব জীবন, সামাজিক পরিবেশ এবং উন্নয়নে প্রভাব বিস্তারকারী সবধরণের বাহ্যিক উপাদানকে বোঝানো হয় পরিবেশ দ্বারা। বস্তুত মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, আচরণ, পেশা, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত, পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত এবং কখনও কখনও পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানে “আচরণ” এর সাথে যদি সভাব-চরিত্র ও বিশ্বাস যুক্ত করা হয় তাহলে বস্তুজগতের সাথে অবস্তুজগতেরও সমন্বয় সাধন হয়।

মোটকথা পৃথিবীর সবকিছু যা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত যথা আলো, বাতাস, পানি, মেঘ, কুয়াশা, মাটি, শব্দ, বন, পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা, সাগর মহাসাগর, মানব নির্মিত সর্বপ্রকার অবকাঠামো এবং গোটা উদ্ভিদ ও প্রাণীমণ্ডলের সমন্বয়ে যা সৃষ্টি তাই পরিবেশ।

পরিবেশ দূষণ

ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশের উপাদানসমূহে যুক্ত হওয়ার দ্বারা পরিবেশের রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অবাঞ্চিত পরিবর্তন জীবের জীবনধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা পরিবেশগত ভারসাম্য ধ্বংস করে তাকে পরিবেশ দূষণ (Environmental pollution) বলে।

পরিবেশের উপাদানসমূহ দূষণের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হয়ে থাকে। যেমন – আলো দূষণ, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মেঘ নিয়ন্ত্রণ, মাটি দূষণ, শব্দ দূষণ, বৃক্ষ নিধন, বন উজাড়, পাহাড় কাটা, নদী শাসন, সাগর মহাসাগর দূষণ, জীব বৈচিত্র বিলুপ্তি ইত্যাদি।

পরিবেশ দূষণের কারণে পরিবেশে স্বাভাবিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। এছাড়া জীবজগতের স্বাভাবিক এবং স্বতঃস্ফুর্ত বিকাশ ব্যাহত হয়। দূষণ মানবস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরিবেশ দূষণের ফলে মানব সভ্যতা সবচেয়ে বড় যে সংকটের সম্মুখীন হয়েছে তা হলো বৈশ্বিক উষ্ণতায় (Global warming) জলবায়ু পরিবর্তন (Climate change)।

জলবায়ু

জলবায়ু বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট স্থানের দীর্ঘ সময়ের (সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের) আবহাওয়ার বিভিন্ন অবস্থার গড়পড়তা হিসাবকে। বস্তুজগতের সাধারণত বৃহৎ এলাকাজুড়ে নির্ণয় করা হয়।

জলবায়ু যে সমস্ত বিষয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় যেগুলো জলবায়ুর নিয়ামক। যেমন অক্ষাংশের ভিন্নতার ফলে জলবায়ুর তারতম্য ঘটে। নিরক্ষিয় অঞ্চলে উষ্ণ জলবায়ু এবং মেরু অঞ্চলে শিতল জলবায়ু বিরাজ করে।

উচ্চতার বৃদ্ধিতে প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতায় ৬.৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায়। এমনকি উচ্চতার তারতম্যে একই অক্ষাংশে অবস্থিত দুই অঞ্চলের তাপমাত্রা দুরকম হয়। উঁচু পর্বতে বায়ুপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে আবহাওয়া ও জলবায়ুগত পার্থক্য দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মৌসুমী জলবায়ু বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।

কোনো স্থান সমুদ্র থেকে কতটা দূরে তার প্রেক্ষিতে বাতাসের আর্দ্রতার মাত্রা নির্ভর করে আর আর্দ্রতার প্রেক্ষিতে জলবায়ুর উষ্ণতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। সমুদ্র থেকে প্রবাহিত জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যে অঞ্চল দিয়ে বয়ে যায়, সে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। কিন্তু স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত শুষ্ক বায়ু উষ্ণতা বাড়ায়। শীতল বা উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের কারণে উপকূলবর্তি এলাকার আবহাওয়া পরিবর্তন হয়।

কোনো স্থানে বৃষ্টিপাত হলে সেখানকার উত্তাপ কমে আবার বৃষ্টিপাতহীন অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি থাকে। তাই মরুভূমি এলাকায় জলবায়ু উষ্ণ। তাছাড়া বৃষ্টিপাতের মাত্রার উপর আর্দ্রতার মাত্রাও নির্ভরশীল, যা জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে।

গাছের প্রস্বেদন ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বনভূমির প্রগাঢ়তার কারণে কোনো কোনো স্থানে সূর্যালোক মাটিতে পড়ে না, ফলে ঐসকল এলাকা ঠান্ডা থাকে। তাছাড়া বনভূমি ঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো ইত্যাদির গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার রূপ বদলে দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তন

কোন স্থানের গড় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তনকে জলবায়ু পরিবর্তন (Climate change) বলে। জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল; যেমন- জৈব প্রক্রিয়াসমূহ, পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের পরিবর্তন, ভূত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (plate tectonics), আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ইত্যাদি। তবে বর্তমান কালে সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বললে সারা পৃথিবীর ইদানীং সময়ের মানব কার্যকর্মের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনকে (Climate change) বোঝায় যা ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি করে বলে বৈশ্বিক উষ্ণতা (Global warming) নামে বেশি পরিচিত।

এ পর্যন্ত পরিবেশ, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত প্রাথমিক ও উইকি নির্ভর কিছু ধারণার পর পরিবেশ দূষণের কারণ সমূহ কিছুটা বিশ্লেষণ করে সেই সাথে এর ক্ষতিকর প্রভাব ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ দেখার চেষ্টা করবো।

কারণ ও ক্ষতিকর প্রভাব

আমরা আগেই জেনেছি পরিবেশের উপাদানসমূহ দূষণের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হয়ে থাকে।

আলো দূষণ : অন্ধকার রাতে উজ্জ্বল জোরালো বৈদ্যুতিক আলো জালানোর ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ ব্যাহত হওয়কে আলো দূষণ (Light pollution) বলে। পবিত্র কুরআনের সুরা নাবার ১০ ও ১১ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, “আর আমি রাতকে করেছি আবরণ। আর আমি দিনকে করেছি জীবিকার্জনের সময়।”

সৃষ্টির স্বাভাবিক নিয়মেই উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে দিনে ও রাতে দুটি ভিন্ন প্রকারের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ সংঘঠিত হয়। প্রাণীজগতে দিনের বেলা খাদ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য কাজ এবং রাতে বিশ্রামের সময়। আলো দূষণের কারণে বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটে। প্যাচা সহ বিভিন্ন প্রকার নিশাচর প্রাণী, কীটপতঙ্গের স্বাভাবিক জীবনচর্যায় বাধা পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ যদি অন্ধকারে না ঘুমিয়ে আলতে ঘুমায় তাহলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা অধিক হারে বৃদ্ধি পায়। সাধারণত সূর্য দিগন্তের ১৮ ডিগ্রি নিচে গেলে এস্ট্রোনমিক্যাল সানসেট হয় এবং সূর্য দিগন্তে উদিত হবার ১৮ ডিগ্রি আগে এস্ট্রোনমিক্যাল সানরাইজ হয়। এ দুয়ের মধ্যবর্তী সময় এস্ট্রোনমিক্যাল রিসার্চের জন্য উপযুক্ত কিন্তু আলো দূষণের কারণে সেখানেও ব্যাঘাত ঘটে। সাধারণত শহরাঞ্চলে এই আলো দূষণ বেশি লক্ষ করা যায়।

বায়ু দূষণ : শিল্প, যানবাহন, নগরায়ন, বর্জ্য নিষ্কাশনে অনিয়ম বায়ু দূষণের (Air pollution) কয়েকটি প্রধান কারণ। এ ছাড়াও মরুঅঞ্চলে ধুলোঝড় এবং বনে বা ঘাসে আগুন লাগার ফলে নির্গত ধোঁয়া বাতাসে রাসায়নিক ও ধুলিকণাজনিত দূষণ ঘটিয়ে থাকে।

কয়েকটি প্রধান বায়ু দূষণকারী পদার্থ হল:

১. কার্বন মোনো-অক্সাইড (CO)- সাধারণত যানবাহনের থেকে এই গ্যাসের উৎপত্তি। পেট্রোল, ডিজেল সহ নানা ধরনের কার্বন-যুক্ত জ্বালানি আধপোড়া হলে এই রঙবিহীন গন্ধবিহীন গ্য‌াসটি তৈরি হয়। সিগারেট বা কাঠ পোড়ালেও এই গ্য‌াস বের হয়।

এ গ্যাস মানুষের শ্বাসক্রিয়ার জন্য চূড়ান্ত ক্ষতিকারক। এই গ্য‌াস আমাদের রক্তে অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এই গ্য‌াসের প্রতিক্রিয়ায় সব সময় ঝিমোনো ভাব আসে। বিভিন্ন ব্য‌াপারে সিদ্ধান্তহীনতারও শিকার হতে হয়। এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় ভারসাম্য বিঘ্নিত করে।

২. কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2)- কলকারখানা বা যানবাহনে কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে নির্গত হয় এই গ্যাস। এটি মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে নির্গত প্রধান গ্রিন হাউস গ্যাস। পরিবেশের নেসেসারি ইভিল এই গ্যাসীয় উপাদানের অতিরিক্ত উপস্থিতি ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

৩. সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2)- মূলত তাপ বিদ্য‌ুৎ কেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর ফলে এই গ্য‌াস নির্গত হয়। অন্য‌ান্য‌ শিল্পজাত প্রক্রিয়ার ফলেও এই গ্য‌াস নির্গত হয় যেমন কাগজ উৎপাদন পদ্ধতিতে, ধাতু গলানোর ক্ষেত্রে ইত্য‌াদি। এই গ্য‌াস অ্য‌াসিড বৃষ্টি এবং ধোঁয়াশা সৃষ্টির একটি প্রধান কারণ। সালফার ডাইঅক্সাইডের প্রভাবে ফুসফুসের নানা ধরনের জটিল রোগ হয়।

৪. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC)- মূলত ফ্রিজ ও এসি থেকে এই গ্য‌াস নির্গত হয়। বাতাসে এই গ্য‌াস নির্গত হওয়ার পরে স্ট্র্য‌াটেস্ফিয়ারে চলে যায়, সেখানে অন্য‌ান্য‌ গ্য‌াসের সংস্পর্শে আসে। এর ফলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির বিকিরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার স্বাভাবিক ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৫. সাসপেনডেড পার্টিকুলার ম্য‌াটার (SPM)- ধোঁয়া, ধুলো, বাষ্প এবং একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বাতাসে ভেসে থাকা কঠিন পদার্থের কণাকে এসপিএম বলে। এটি বায়ু দূষণের অন্য‌তম প্রধান কারণ। ধোঁয়াশা একটা অন্যতম কারণ এসপিএম। এসপিএম বেশি থাকলে দূরের জিনিস দেখার ক্ষেত্রে খুব অসুবিধা হয়। এই ধরনের পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে শরীরের এই অন্য‌তম প্রধান অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে সমস্য‌ারও সৃষ্টি করে।

বায়ু দূষণের ফলে স্বাস্থ্য‌ের ক্ষতি হয়, পরিবেশ এবং সম্পদও নষ্ট হয়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে জলবায়ুর উপর এবং তা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনেরও কারণ হয়। ইবনে কায়্যিম তাঁর ‘তিব্বে নববী’ গ্রন্থে বলেন, মহামারীর সক্রিয় কারণ ও হেতুগুলোর অন্যতম একটি হলো বায়ু দূষণ। ইবনে খালদুন মুকাদ্দিমায় বায়ু দূষণের সাথে দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন।

বায়ু দূষণ ও ইসলাম : ইসলামে বায়ু দূষণ থেকে মুক্ত থাকার ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে। যার মাধ্যমে বায়ু দূষণের ক্ষতিকর বিষয় থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। যেমন কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মাধ্যমে। রাস্তাঘাটে যদি কোন কষ্টদায়ক বস্তু, বায়ু দূষণকারী পদার্থ থাকে, তাহলে তা সরানোর মাধ্যমে বায়ু দূষণরোধ করা যায়। হাদীসে বলা হয়েছে,
“ঈমানের তেহাত্তর বা তেষট্টিটি শাখা রয়েছে। ওসবের মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা এবং সর্বনিম্নটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৬০)

মু’আয ইবন জাবাল রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “তোমরা অভিশাপ ডেকে আনে এরূপ তিনটি কাজ থেকে বিরত থাক। চলাচলের রাস্তায়, রাস্তার মোড়ে অথবা ছায়াদার স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা থেকে।”
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ২৬)

আমাদের চলাচলের পথে মানুষের জন্য কষ্টদায়ক ও বিপদজনক অনেক বস্তু পড়ে থাকে। যেমন মরা জীবজন্তু, কাঁটা, ময়লা, কলার ছোলা, পিচ্ছিল পলিথিন, জলন্ত সিগারেটের কিয়দাংশ ইত্যাদি। ঈমানের দাবি হলো, এগুলো পথ থেকে অপসারণ করা। এ সব কষ্টদায়ক বস্তুর মধ্যে এমন উপাদান বা জীবাণু থাকতে পারে, যার দ্বারা বায়ু দূষিত হবে। রাসূলের এ হাদীসগুলো যদি বায়ু দূষণরোধের মূলনীতি হিসাবে ধরা যায় তাহলে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব।

কেউ মারা গেলে ইসলাম সঙ্গে সঙ্গে তাকে কবর দিতে বলে, যাতে পরিবেশের কোন ধরনের দূষণ না হয়। কুরআন থেকে জানা যায়, যে জিনিসটা পঁচে যায় তা মরে যাওয়ার পর মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়। যেমন কাবিল যখন হাবিলকে হত্যা করে তখন দুটি কাক সেখানে আসে আর তাদের একজন আরেকজনকে হত্যা করে এবং মৃত কাককে দাফন করে ফেলে তা দেখে কাবিল মাটি দিয়ে হাবিলকে ঢেকে ফেলে। এব্যাপারে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “অতঃপর আল্লাহ এক কাক পাঠালেন, যে তার ভাইয়ের শবদেহ কীভাবে গোপন করা যায় তা দেখাবার জন্য মাটি খনন করতে লাগল।” (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩১)

অতএব কুরআন এই নির্দেশনা দিচ্ছে যে, কেউ মারা গেলে তাকে মাটির নিচে কবরস্থ করতে হয়। ইসলাম শুধুমাত্র মৃত লাশকে দাফন করতে বলে না বরং ইসলাম অন্যান্য পঁচা-দুর্গন্ধ বস্তুকে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করেছে।

বায়ু দূষণ রোধে জাবির রা. থেকে বর্ণিত হাদীসটি এখানে প্রণিধানযোগ্য। রাসূল সা. বলেন,
“যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং ঘরে বসে থাকে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ৫৪৫২)

ইসলাম শুধুই বস্তুজগতের ক্ষতিকে দূষণের মাপকাঠি মনে করে না বরং আত্মিক ক্ষতিকেও দূষণের মাপকাঠি মনে করে। তাই তো সুঘ্রাণ হওয়া সত্তেও ইসলাম নারীর সুগন্ধি ব্যবহার করে বহির্গমণকে পরিবেশ দূষণ হিসেবে দেখেছে। হাদীসে এ জাতীয় দূষণের ভয়াবহতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আবূ মূসা আল-আশ’আরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, “যে কোন মহিলা সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করে, অতঃপর মানুষের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, যাতে তারা তার সুবাস পায় সে একজন ব্যভিচারিণী। (জামে তিরমিজি, হাদীস নং : ২৭৮৬)

সত্যিই উন্মুক্ত স্থানে বা রাস্তাঘাটে নারীর সুগন্ধি ব্যবহার এমন এক দূষণ, যা খাটি মুত্তাকীদের ঈমানের স্বচ্ছতাকে কর্দমাক্ত করে এবং পরিবেশ বিপর্যয় করে। যদিও সুগন্ধির প্রতি দুর্বলতা, সুগন্ধি ছড়ানো এবং অন্যকে তা উপহার প্রদান পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। বরং ইসলাম এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। যেমন আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. বলেন, “যার সামনে সুগন্ধি উপস্থাপন করা হয় সে যেন তা প্রত্যাখ্যান না করে। কারণ তা বহনে হালকা এবং বাতাসকে সুবাসিত করে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৫৮৩৫)

নবী করিম সা. যখন সিংগা দিতেন অথবা লোম পরিষ্কার করতেন, নখ কাটতেন তখন তিনি তা বাকীউল গারকাদ কবরস্থানে পাঠাতেন, তারপর তা পুঁতে ফেলা হত। (আখলাকুন নবী, ৩৫৯)

আমরা অনেক সময় হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখি না। এতে নির্গত ময়লা ও জীবাণু দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে মহানবী সা. এর বিশেষ আচরণ বর্ণিত হয়েছে। আবূ হুরায়রা রা. বলেন, মহানবী সা. যখন হাঁচি দিতেন তখন এক টুকরা কাপড় বা নিজ হাত দ্বারা মুখ ঢেকে ফেলতেন এবং নিম্ন আওয়াজ করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ৪৯৪৫)

পানি দূষণ : অপর্যাপ্তভাবে পরিশোধিত বা অপরিশোধিত বর্জ্যজল যদি স্বাভাবিক জলাশয়ে জমা হয়ে জলাশয় দূষিত করে তাকে পানি দূষণ (Water pollution) বলে।

সাধারণত যেসব কারণে পানি দূষণ হয় তা হলো, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণজাত বর্জ্য, কীটনাশক এবং ভেষজনাশক, বিভিন্ন ধরনের অর্গ্যানোহ্যালাইডস এবং অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বন, যেমন পেট্রোল, ডিজেল জ্বালানি, জেট জ্বালানি, এবং জ্বালানি তেল, মোটর তেল, অনুপযুক্ত সঞ্চয়স্থান থেকে ছড়িয়ে পড়া কারখানার দ্রাবক, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি দ্রব্য এবং প্রসাধনী দ্রব্যে উপস্থিত বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ
ড্রাগ, ওষুধ ড্রাগ, বিপাকজাত দ্রব্য, গর্ভনিরোধক বড়ির মত হর্মোন ওষুধ।
অজৈব জল দূষণকারী পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: শিল্পকারখানার বর্জ্য বিশেষ করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সালফার ডাই-অক্সাইড,
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের বর্জ্য থেকে প্রাপ্ত অ্যামোনিয়া, শিল্পকারখানার উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত রাসায়নিক বর্জ্য, নাইট্রেট এবং ফসফেট জাতীয় উপাদানযুক্ত সার যা কৃষিজমি থেকে এবং বাণিজ্যিক ও গৃহস্থ ব্যবহারের ফলেও বৃষ্টির জলের সাথে যুক্ত হয়, মোটর গাড়ির ভারী ধাতু, খনির নর্দমা, মাটিতে মানুষের দ্বারা পরিত্যক্ত আবর্জনা যেমন, কাগজ, প্লাস্টিক, অথবা নষ্ট খাবার, পরিত্যক্ত ভাঙা জাহাজ, এর সাথে রয়েছে দুর্ঘটনাপ্রযুক্ত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে আবর্জনার স্তুপ তৈরি, যা বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে যায় এবং ভূপৃষ্ঠতলীয় জলে উন্মুক্ত হয়।

পানি দূষণ ও ইসলাম

পানি দূষণরোধে ইসলাম কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“নবী করীম সা. বদ্ধ পানিতে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৫৪৮)

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
“তোমাদের কারও উচিত নয়, স্থির পানি যা প্রবাহিত হয় না সেখানে পেশাব করা, অতঃপর সেখানে গোসল করা।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ২৪০)

কেননা, পেশাবের ভিতর এমন কিছু উপাদান আছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

উযু করার পূর্বে পাত্রের পানি যেন দূষিত না হয় এজন্য উচিৎ হাত ধুয়ে নেয়া। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠে হাত না ধুয়ে যেন পানির পাত্রে হাত না দেয়। কারণ সে জানে না, রাতে তার হাত কোথায় ছিল।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৫৩৬)

রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা (খাবারের) পাত্র ঢেকে রাখ (পানির) মশকের মুখ বন্ধ করে রাখ, কেননা বছরে এমন রাত্রি আছে, যাতে মহামারি অবতরণ করে। সেই মহামারি যে খোলা পাত্র ও পানির মশকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তাতেই পতিত হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৫০৮৫)

পানিকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এ হাদীস বলা হয়েছে। যদি তা খোলা থাকে তাহলে সেখানে পোঁকা-মাকড় বা ধূলা-বালির মাধ্যমে তা দূষিত হয়ে পড়ে। তাই পানির পাত্র ঢাকার ব্যাপারে ইসলামে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

শব্দ দূষণ : মানুষ বা প্রাণীর শ্রুতিসীমা অতিক্রমকারী উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকে শব্দ দূষণ (Noise Pollution) বলে।

মানুষ সাধারণত ২০-২০,০০০ হার্জের কম বা বেশি শব্দ শুনতে পায় না। তাই মানুষের জন্য এই সীমার মধ্যেই তীব্রতর শব্দ দ্বারা শব্দ দূষণ হয়। ৪৫ ডেসিবেলের উচু আওয়াজে সাধারণ মানুষ ঘুমোতে পারে না, ৮৫-১২০ ডেসিবেলের উচু আওয়াজে কানের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। WHO আবাসিক এলাকায় ৫৫ ডেসিবেল শিল্প এলাকায় ৭০ ডেসিবেলের নিচে আওয়াজ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকে। সেখানে ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোর সামনে গড় আওয়াজের পরিমান ৮১.৭ ডেসিবেল। Frontiers ২০২২ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকার গড় আওয়াজের পরিমান ১১৯ ডেসিবেল।

২০২২ সালের জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষে ঢাকা, ৪র্থ রাজশাহী।

শব্দ দূষণের ফলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের ১১.৮% সদস্য কানের সমস্যায় ভোগেন। শব্দ দূষণের ফলে সবচেয়ে সংকট পূর্ণ অবস্থায় থাকেন গর্ভবতী মা ও ছোট শিশুরা। ৩ বছরের ছোট বাচ্চার কাছে ১০০ ডেসিবেলের হর্ন বাজালে তার আজীবনের জন্য শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দ দূষণের ফলে মৃত্যুও হতে পারে। ২০২২ এর ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজির উচ্চ আওয়াজে এক নবজাতকের মৃত্যু হয় ঢাকা নগরীতে।

WHO এর মতে দূষণ জনিত শরীর খারাপের কারণগুলোর মধ্যে এক নাম্বারে রয়েছে বায়ুদূষণ দুই নাম্বারেই শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণের কারণে প্রতিবছর হার্ডের নতুন রোগী তৈরি হচ্ছে ৪৮ হাজার। করোনায় পুরা বিশ্বে মারা গিয়েছে ৬.৩১ মিলিয়ন মানুষ সে জায়গায় শব্দ দূষণের ফলে প্রতিবছর আক্রান্ত হচ্ছে ২২ মিলিয়ন মানুষ।

দূষণ প্রভাবিত এলাকার মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়। আচরণে অস্বাভাবিকতা ও মানসিক উত্তেজনা দেখা দেয়। মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়। বয়স্ক মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। এমনকি বধির হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।

যানজট, কলকারখানা, আতশবাজি গান-বাজনা ইত্যাদি থেকে দূষণ সৃষ্টিকারী তীব্র শব্দের উৎপত্তি হয়।

শব্দ দূষণ ও ইসলাম : শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ইসলাম কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেছে। মুসলিম হওয়ার মাপকাঠিই নির্ধারণ করেছে জিহ্বা দ্বারা তথা কটু কথা বা উচ্চ আওয়াজ করে মানুষকে কষ্ট দেয়া না দেয়ার উপর। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১০)

নিম্নস্বরে কথা বলার মাধ্যমে শব্দদূষণ রোধ করা সম্ভব । যেমন যখন কথা বলবে তখন উঁচু গলায় কথা না বলে নিম্নস্বরে কথা বলবে, তখন তার দ্বারা পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে রক্ষা পাবে। পরিবেশ দূষণরোধে আল্লাহ নামাজের মত ইবাদাতেও স্বর উঁচু না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, “তোমরা সালাতে স্বর উচ্চ কর না এবং অতিশয় ক্ষীণও কর না; এই দুইয়ের মাঝ পথ অবলম্বন কর।” (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১১০)

আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা চুপি চুপি করার জন্য পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,
“তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৫)

আয়াতে কারিমায় চুপিচুপি ও সংগোপনে দু’আ করা উত্তম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং আয়াতের শেষে এ বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে যে, দু’আ করার ব্যাপরে সীমা অতিক্রম করা যাবে না। কেননা, আল্লাহ্ তা’আলা সীমা আতিক্রমকারীকে পছন্দ করেন না।

স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা যাকারিয়া আ. এর দু’আ উল্লেখ করে বলেন, “যখন সে তার পালনকর্তাকে অনুচ্চস্বরে ডাকল।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৩)

মানব কল্যাণে নিয়োজিত ও অকল্যাণ থেকে সতর্ক ইসলাম কুরআনে আরও নির্দেশ দেন,
“আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নিচু কর, নিশ্চয়ই সব চাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।” (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৯)

একইভাবে মানুষের জন্য এমনভাবে গৃহ নির্মাণ করা জায়েয নয়, যা অন্যের বসবাসের জন্য হুমকি হতে পারে। তেমনি টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদির অতিমাত্রায় আওয়াজ করাও বৈধ নয়। কারণ তা প্রতিবেশীর শান্তি বিনষ্ট করে। উচ্চস্বরে ডাকাডাকি, চিৎকার, দু’আ ও যিকিরের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইসলাম শব্দ দূষণের ব্যপারে কতোটা সতর্ক।

মাটি দূষণ : মাটির প্রয়োজনীয় উপাদান হ্রাস ও অবাঞ্ছিত পদার্থসমূহের উপস্থিতি যা জীব ও উদ্ভিদজগতের জন্য ক্ষতিকর তাকে মাটি দূষণ বলে। মাটি দূষণ পরিবেশ দূষণের একটি প্রধান অংশ।

ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, অর্থনৈতিক প্রয়োজনে রাস্তাঘাট, বাড়ি নির্মাণ, খনিজ সম্পদ আহরণের ফলে ভূমিকে সরিয়ে ফেলা, তেল সংগ্রহ, কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, তেজস্ক্রিয়, আবর্জনা, পৌর ও গ্রামীণ আবর্জনা, শিল্প আবর্জনা, খনিজ আবর্জনা মাটি দূষণের অন্যতম কারণ।

মাটি, পানি, বায়ু প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুই একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। কাজেই বায়ু দূষণ, পানি দূষণ ও মাটি দূষণ একটার সাথে আরেকটা জড়িত। যা বায়ুকে দূষিত করে তা পানিকেও দূষিত করে, দূষণযুক্ত বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে মাটি দূষিত হয়ে পড়ে।

মাটি দূষণ ও ইসলাম : ইসলাম মাটি দূষণকে নিন্দা করে, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
“যখন সে প্রস্থান করে তখন সে যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণী ধ্বংসের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৫)

আয়াতে কৃষিক্ষেত্র ও প্রাণীর ধ্বংসকে বিপর্যয় সৃষ্টির সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায়, ভূমি দূষণ পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি কারণ। শুধু কারখানা, বসত-বাড়ি, কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য দ্বারাই মাটি দূষিত হচ্ছে না বরং আধুনিক চাষ পদ্ধতিও অনেকাংশে দায়ী। মাটির বুননে অনেক বিষয়ও উৎপাদন ও মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাসের জন্য দায়ী, যা মাটিকে ধ্বংস করছে। পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত এখানে অনুধাবনযোগ্য, “যে শহর উৎকৃষ্ট, তার ফসল তার প্রতিপালকের নির্দেশে উৎপন্ন হয় এবং যা নিকৃষ্ট তাতে অল্পই ফসল উৎপন্ন হয়। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্য ঘুর্ণায়মান করি।”
(সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৮)

জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধির জন্য ইসলাম মানুষকে যেসব কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে তার অন্যতম হলো কৃষি কাজ, যা পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় মৌলিক উৎস। এবং শিল্প বিপ্লবের জোয়ারে কৃষি বিমুখ জাতির অনাগত খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের একমত সমাধানও এই কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা “শিল্পবিপ্লব ও কৃষি : ইসলামী অন্বেষা” শিরোনামে অন্যত্র করেছি।) ইসলাম একে গুরুত্ব দিয়েছে এবং একে ইবাদত হিসেবে গণ্য করেছে। রাসুলুল্লাহ সা. সাগ্রহে কৃষি কাজ ও বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যাতে উদ্ভিদ সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হয়। যেমন আনাস রা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, “যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে আর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তবে তা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ৩৮২৯)

অপর হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি কোনো মৃত (অনাবাদী) ভূমিকে জীবিত (চাষযোগ্য) করবে, তা তারই জন্য।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ৩০৬৩)

উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, আল্লাহর কর্তৃক নির্দেশিত নিয়মনীতি মেনে চলা প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুর জন্য জরুরী। কোন একটি দূষিত হলে প্রকারান্তরে গোটা সৃষ্টিতে বিপর্যয় ডেকে আনে।

বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটা : কল-কারখানা নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, সহ বিভিন্ন কারণে মানুষ নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে চলছে। এমনকি বনের পর বন পর্যন্ত নিধন করে চলছে। পাহাড় কেটে চলছে। পাহাড় কাটার ফলে হচ্ছে পাহাড় ধস, সেই সাথে বৃক্ষ নিধন।

পরিবেশ রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা যে সর্বাধিক তা বলাই বাহুল্য। উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে, অন্য কোনো প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ কার্বোহাইড্রেট বা গ্লুকোজ নামক মৌলিক খাদ্য উপাদান প্রস্তুত করে। তারপর পর্যায়ক্রমে তার রূপান্তর ঘটে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হয়ে শক্তির যোগান দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রত্যেক প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শক্তির জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল, তা সে মাংসাশী হোক বা নিরামিষাশিই হোক। তাই উদ্ভিদ হলো উৎপাদক আর বাকি সব প্রাণীই ভক্ষক। এক কথায় উদ্ভিদ ছাড়া এ পৃথিবীতে জীবন অকল্পনীয়।

অতি সম্প্রতি সিএনএনের খবরে বলা হয়, বিশ্বে উদ্ভিদের প্রায় ৪০ ভাগ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনস কিউ এক নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ‘স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস প্ল্যান্টস অ্যান্ড ফানজি ২০২০’ নামের এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে গাছপালা কেটে জমি পরিষ্কার করার ফলে বনভূমি উজাড়ের হার বেড়েছে, বিশ্বে কার্বন ডাই অঙাইডের নিঃসরণ জলবায়ু ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, নতুন রোগজীবাণু আমাদের খাদ্যশস্য ও স্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলেছে, অবৈধ বাণিজ্য বৃক্ষরাজিকে বিনাশ করছে।’

গবেষকেরা বলছেন, যেসব প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে তার অনেকগুলোই ঔষধি বৃক্ষ। গবেষণায় ৫ হাজার ৪১১টি ঔষধি বৃক্ষের ওপর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে ৭২৩ টিই রয়েছে বিলুপ্তির হুমকিতে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণ ধারণার চেয়ে বিশ্বে ৫০০ গুণ দ্রুতগতিতে গাছ বিলুপ্তির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে মনোযোগ পাচ্ছে না। একটি শতকে বিলুপ্ত হওয়া পশুপাখির সম্পর্কে হয়তো মানুষ মোটাদাগে একটি ধারণা রাখে। কিন্তু গাছের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে না। অনেকেই বলতে পারবে না, কোন গাছটি এখন আর দেখা যায় না।
গবেষকেরা বলছেন, এই বিলুপ্তির পেছনে মানুষ অনেকাংশে দায়ী। প্রাকৃতিকভাবে প্রজাতি বিলুপ্তির গতি শুধু মানুষের উপস্থিতির কারণেই বেড়ে গেছে ৫০০ গুণ। তাঁদের মতে, এমনকি বিলুপ্ত উদ্ভিদের যে সংখ্যা উঠে এসেছে, তাও বর্তমান বিলুপ্তির গতি বোঝার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ, বর্তমানে মানুষের প্রকৃতি-ধ্বংসী কাজ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়ে গেছে।

পরিবেশ দূষণ মানুষের জীবন-মৃত্যুর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়। পরিবেশ দূষণ জৈবিক বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে, তাই এটি প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ক একটি সমস্যা। সেই আদিকাল থেকেই পরিবেশ মানুষের দ্বারা দূষিত হয়ে আসছে। তবে এ সমস্যা তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দির শিল্প বিপ্লবের সূচনা থেকে। উনবিংশ শতাব্দির ষাটের দশকে এসে দেখা গেল, পরিবেশ দূষণ কেবল সমস্যা নয়। এটি মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে পৃথিবী আজ বিপন্ন।

পরিবেশ ও ইসলাম : উপরিউক্ত পরিবেশ দূষণের কারণ সমূহে লক্ষ করলে দেখা যায় দূষণের প্রধান কারন মানুষের কাজ-কর্ম বা মানুষের বিশৃঙ্খলা। আধুনিক ব্যবস্থা শুধু মানুষের বস্তুজাগতিক বিশৃঙ্খলা নিয়েই কথা বলে, কিন্তু ইসলাম বস্তুজাগতিক বিশৃঙ্খলার সাথে সাথে আত্মিক বিশৃঙ্খলা নিয়েও কথা বলে। এই বিশৃঙ্খলার ফলে ঘটে পরিবেশ বিপর্যয়।

বিপর্যয় শব্দটির আরবী প্রতিশব্দ فساد (ফাসাদ), আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যার অর্থ- বিকৃতি, ভ্রান্তি, পচন, দুর্নীতি, কল্যাণের বিপরীত ইত্যাদি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফাসাদ শব্দ দ্বারা মানুষের নৈতিক আচরণগত ত্রুটি বিচ্যুতি, খারাপ কাজ, নিকৃষ্ট অভ্যাস অথবা আল্লাহর সৃষ্টি জগতে মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট বিপর্যয়কে বোঝানো হয়। পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে ফাসাদ শব্দ এসেছে, যাতে ভূ-পৃষ্ঠে মানব সৃষ্ট বিপর্যয়কে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “পৃথিবীতে শান্তি স্থাপিত হওয়ার পর তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না, তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকলে এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” (সুরা আরাফ, আয়াত : ৮৫)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের কৃত-কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” (সুরা রোম, আয়াত : ৪১)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘ফাসাদ’ শব্দ দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে তা নিয়ে তাফসীরবিদদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। তাফসীরে রূহুল মা’আনীতে বলা হয়েছে, বিপর্যয় (ফাসাদ) বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, শিকার (খাদ্যের) ঘাটতি, সবকিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কমে যাওয়া, ক্ষতি বেশি হওয়া ইত্যাদি আপদ বোঝানো হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে ফাসাদ বা বিপর্যয়- এর উল্লেখ দ্বারা আধুনিক বিশ্বের পরিবেশ দূষণ তথা ইকোসিস্টেমের বিপর্যয় বোঝানো যেতে পারে। কারণ পরিবেশগত পরিবর্তন যা মানব জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে তার সাথে পবিত্র কুরআন উল্লিখিত ফাসাদ এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম : পরিবেশ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, যা জীবনের সকল পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে। পরিবেশের রয়েছে মহান স্রষ্টা এবং মহাপ্রজ্ঞাবান পরিচালক আল্লাহ প্রবর্তিত একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। আল্লাহ বলেন, “এটা আল্লাহর কুদরতের বিস্ময়কর কীর্তি, যিনি প্রতিটি জিনিস সুষম করেছেন।” (সুরা নমল, আয়াত : ৮৮)

ইসলাম কল্যাণমুখী এক জীবনব্যবস্থা। এতে মানুষের পরিবেশকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষ ভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, “তোমরা কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন।” (সুরা লোকমান, আয়াত : ২০)

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ” (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৯)

আল্লাহ ভূমিকে মানুষের কল্যাণে কীভাবে নিয়োজিত করেছেন তার সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত ভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তা তারা ভক্ষণ করে।” (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৩৩)

বৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা ও আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপন্ন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২)

পরিবেশ ধ্বংসকে পবিত্র কুরআন ‘বিশৃঙ্খলা’ হিসেবে এবং অধুনা বিজ্ঞান ‘দূষণ’ নামে অভিহিত করেছে। পরিবেশের শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং পৃথিবীর জীবনকে অসম্ভব ও ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এমন যেকোনো অনাচারের বিরুদ্ধেই ইসলাম সোচ্চার। তা রোধে ইসলাম নানা উপায় ও বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার প্রবর্তন করেছে।

(এ প্রবন্ধটি শুরু হয়েছিল “প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তন : ইসলামী দৃষ্টিকোণ” শিরোনামে। প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ মূলত পরিবেশ দূষণের চরম পর্যায়। এবং এর ফলেই নেতিবাচক ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। তাই পরিবেশ দূষণ নিয়ে কিছু কথা না বলে আলোচনা শুরু করার উপায় নেই। এ কারণে শিরোনাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “পরিবেশ দূষণ, প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তন : ইসলামী দৃষ্টিকোণ” কিন্তু পরিবেশ দূষণ নিয়ে আলোচনা এতোটা দীর্ঘ হয় যে নির্ধারিত শব্দ সীমা অতিক্রম করে ও সময় সংকীর্ণ হয়ে যায়। তাই পরিশেষে এখানেই সমাপ্ত করে এ প্রবন্ধের শিরোনাম দেয়া হয় “পরিবেশ দূষণ : ইসলামী দৃষ্টিকোণ” এবং আগামী সপ্তাহে ইনশাল্লাহ “প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তন : ইসলামী দৃষ্টিকোণ” শিরোনামে কাঙ্খিত লেখাটি আসবে। এ লেখাটি তার ভূমিকা এবং ওই লেখাটি মূল উদ্দেশ্য। একটি আরেকটির পরিপূরক।)

সহায়তা

১. আল কুরআন
২. সহীহ বুখারী
৩. সহীহ মুসলিম
৪. জামে তিরমিজি
৫. সুনানে আবু দাউদ
৬.আখলাকুন নবী
৭. আল মুকাদ্দিমা
৮. Frontiers ২০২২
৯. আইন ও বিচার সংখ্যা ৫৬
১০. উইকিপিডিয়া

The post জলবায়ু পরিবর্তন : প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/Jv8Q1Yf

No comments:

Post a Comment