Monday, November 14, 2022

ভীতি-বিতর্কের টানাপোড়েন : কেমন কাটবে এবারের ‘মাহফিল মৌসুম’

রাকিবুল হাসান নাঈম:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের মাহফিলের মওসুম সাবধানতার সঙ্গে কাটাতে হবে ওয়ায়েজদের। ওয়াজে সরকারবিরোধী কথা যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। নতুবা বাঁধতে পারে বিপত্তি। এমনকি সরকার মাহফিলের উপর খড়গহস্ত হতে পারে বলেও শঙ্কা করছেন ওয়ায়েজগণ। তারা বলছেন, ওয়ায়েজগণকে যার যার জায়গা ও সক্ষমতা বুঝে কথা বলতে হবে। ভাইরাল হবার জন্য অসংযত কথা বললে ঘটতে পারে বিপদ।

ওয়ায়েজদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মৌসুমে এখনও তারা কোথাও কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। তবে আগামী নির্বাচনের বিষয়টি তাদের মাথায় আছে।

ওয়ায়েজদের শঙ্কার জায়গা

ওয়ায়েজদের শঙ্কার প্রধান জায়গা আগামী নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু বিধি-নিষেধ এমনিতেই থাকে। তাছাড়া রাজনীতির ময়দানেও শুরু হয়েছে চঞ্চলতা। সবদিক মিলিয়ে এই শঙ্কাটা তৈরী হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ওয়ায়েজ মুফতি ইমরান হোসাইন কাসেমি ফাতেহকে বলেন, আগামী নির্বাচনের বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। শুধু কথা বললেই হবে না। আমি এক মঞ্চে সরকারবিরোধী কথা বলে দিলাম। কথা বলে দিলেই হলো না। তারপর কী পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে, তারও ধারণা থাকতে হবে। সুতরাং প্রত্যেক ওয়ায়েজ তার সক্ষমতার জায়গাটুকু জানেন। যে যার সক্ষমতা অনুযায়ী কথা বলবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে কোনো ইস্যু এলে তার কথা ভিন্ন। তখন সবাই এক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলে। তখন ইস্যু নিয়ে কথা বললে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু এখন তো সেই পরিস্থিতি নেই। কথা বলতে হবে একা। আমি একা কথা বলার কারণে যদি মাহফিলই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো কুরআন-হাদীসের কথা মানুষের কাছে যাওয়ার পথই বন্ধ হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে মাওলানা ইবরাহিম খলীল বিক্রমপুরী ফাতেহকে বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সব অঙ্গনেই প্রভাব পড়েছে হালকাভাবে। তা দিন যত এগুবে, এই প্রভাব বাড়বে। মাহফিলের অঙ্গনেও প্রভাব পড়বে। তা ইতিবাচক হোক কিংবা নেতিবাচক। ওয়ায়েজদের উচিত হবে একটু ভেবেচিন্তে কথা বলা। সবদিক বিবেচনা করে।

শঙ্কামুক্ত জোন কোনটা?

ওয়ায়েজদের মতে, সরকারবিরোধী কথা পরিহার করতে হবে। তাহলে কি দুর্নীতি, দেশজুড়ে তৈরী হওয়া সঙ্কট নিয়ে কথা বলবেন না ওয়ায়েজগণ?

মুফতি ইমরান হুসাইন কাসেমি ফাতেহকে বলেন, ব্যাপারটা এমন না। বরং সব সঙ্কট ও দুর্নীতি নিয়েই কথা বলতে হবে। কথা বলতে হবে আসন্ন দুর্ভিক্ষ নিয়ে। কিন্তু বলতে হবে কৌশলে। মার্জিত ভাষায়। ভাষা যেন আমাদের দাঈর ভাষা হয়, আক্রমণের ভাষা না হয়। একজন দাঈ মানুষকে ভালোর কথা বলেন, মন্দ থেকে দূরে থাকার কথা বলেন। দাঈর ভাষা আক্রমণাত্মক নয়।

আপনি কোন বিষয়ে ওয়াজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গত দুমাস ধরে মাহফিল করছি। কোথাও বাধার সম্মুখীন হচ্ছি না। আমি সাধারণত কথা বলি ফাজায়েল ও মাসায়েল নিয়ে। তাতে মানুষ উদ্ধুব্ধ হয়ে আমল করে, শুদ্ধ হয়। কিছু জানতে পারে। কিন্তু কুরআন হাদিস থেকে কথা না বলে যদি বিভিন্ন জনের উপর ক্ষোভ ঝারতে থাকি, তাহলে মানুষ আমার থেকে কী খোরাক পাবে? সামান্য সময়ের উত্তেজনা পাবে, দীর্ঘমেয়াদী দ্বীনি প্রভাব তার মধ্যে পড়বে না। তাই এই সময় সব ওয়ায়জদের উচিত, কুরআন-হাদিস থেকে কুরআন হাদীসের মতো মার্জিত ভাষায় কথা বলা। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।

আয়োজক ও ওয়ায়েজদের কর্তব্য

এই মাহফিলের মৌসুম বাধাহীন থাকার জন্য আয়োজক ও ওয়ায়েজ দু দলকেই চেষ্টা করতে হবে বলে মনে করেন মাওলানা ইবরাহিম খলীল বিক্রমপুরী। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘দু পক্ষকেই চেষ্টা করতে হবে মাহফিল বাধাহীন রাখার জন্য। যারা মাহফিলের আয়োজন করবেন, তাদের উচিত হবে প্রথমেই মাহফিলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঠিক করে নেয়া। কেন মাহফিল করছে। আয়োজকদের প্রচেষ্টায় মাহফিলের পঞ্চাশ শতাংশ সমস্যা দূর হয়ে যায়।’

ওয়ায়েজদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওয়ায়েজদের উচিত হবে সংযত হয়ে কথা বলা। স্বেচ্ছাচারী কথা না বলা। তারা যদি বিষয়ভিত্তিক ওয়াজ করেন, তাহলে আরও পঞ্চাশ শতাংশ সমস্যা দূর হয়ে যাবে। নির্বাচনী ডামাডোলে মাহফিলের উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ওয়ায়েজগণ যদি সংযত না হন, তাহলে মাহফিলের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।’

The post ভীতি-বিতর্কের টানাপোড়েন : কেমন কাটবে এবারের ‘মাহফিল মৌসুম’ appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/lQh8v2V

No comments:

Post a Comment