Wednesday, August 3, 2022

দেশে কাদিয়ানিদের সংখ্যা কত?

মুনশী নাঈম:

দেশে দিনদিন কাদিয়ানিদের সংখ্যা বাড়লেও তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কাদিয়ানি ধর্ম প্রচারের কাজে তাদের প্রচারকরা বেশ কৌশল ও গোপনীয়তা বজায় রাখেন। অনুসারীরাও নিজেদেরকে প্রকাশ করেন না। তারা নিজেদেরকে কাদিয়ানি বলে পরিচয় দেন না। পরিচয় দেন আহমাদিয়া মুসলিম জামাতের লোক বলে। প্রচারক ও অনুসারীদের এই গোপনীয়তা রক্ষার ফলে দেশে তাদের নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যানও তৈরী হয়নি। তবে বাংলাদেশে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুন্দরবন, আহমদনগর-শালসিঁড়ি, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং জামালপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলে কাদিয়ানিদের সংখ্যা উল্ল্যেখযোগ্য ।

আহমাদিয়া মুসলিম জামাতের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এই দলটি বর্তমানে সমস্ত দেশব্যাপী ১০৩টি শাখায় বিস্তার লাভ করেছে এবং বর্তমানে দেশব্যাপী প্রায় ৪২৫টি এরূপ স্থান রয়েছে যেখানে আহ্‌মদীদের ছোট-ছোট সমাজ রয়েছে। এখানকার দলের ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত। এই দলের সমস্ত কর্মকর্তারা নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বর্তমানে দেশে তাদের ৬৫জন প্রচারক রয়েছে। তাদের কার্যক্রম কেন্দ্র, রিজিওন ও স্থানীয় পর্যায়ে এই তিনটি স্তরে পরিচালিত হয়।

২০১৩ সালে বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে বলা হয়, দেশব্যাপী প্রায় ৫৫০টি এরূপ স্থান রয়েছে, যেখানে আহ্‌মদীদের ছোট-ছোট সমাজ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ আহমদি মুসলিম জামাতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী নাজির আহমদের সঙ্গে। এদেশে তাদের সদস্যসংখ্যা কত জানতে চাইলে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘সদস্য কত সেটা বলা মুশকিল। প্রতিদিন সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। শাখা বাড়ছে। এর সঠিক পরিসংখ্যান করা হয়নি।’ তবে কোন জেলায় তাদের সদস্য সংখ্যা বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা জেলায় সদস্য সংখ্যা সবচে বেশি।’

গণমাধ্যমে বলা হয়, কাদিয়ানিদের বার্ষিক সভাগুলোতে ১০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী নাজির আহমদ বলেন, ‘এটা করোনার হিসাব। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি বিধি-নিষেধ থাকে। ফলে মানুষ কম হয়। কিন্তু যদি সরকারি বিধি-নিষেধ না থাকে, তাহলে ২০ হাজারের বেশি মানুষের সমাগম হয়।’

এদেশে কাদিয়ানিদের সংখ্যা লাখের কাছাকাছি হতে পারে বলে অনুমান প্রকাশ করেছেন দাওয়াতি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্টের আমির মুফতি শোয়াইব ইবরাহিম। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘দাওয়াতি কাজে যতটুকু ঘুরেছি, তাতে অনুমান করতে পারি, তাদের সংখ্যা লাখের কাছাকাছি হবে। তারা সবকিছুতে গোপনীয়তা বজায় রাখে। ফলে কাটায় কাটায় হিসাবটা বলা যাবে না।’

কাদিয়ানিদের প্রচারণায় প্রতারণার কথা উল্লেখ করে মুফতি শোয়াইব ইবরাহিম বলেন, সাধারণ মুসলমানদের খুব কৌশলে তারা প্ররোচিত করে। বলে, আপনারা মুসলমান, আমরাও মুসলমান, কোনো তফাত নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে আপনারা যেমন নবি ও রাসুল মানেন, বিশ্বাস করেন—আমরাও তাই। তাঁর সঙ্গে আপনি কেবল আমাদের নবি গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকেও নবি মেনে নিন, ব্যস, আপনি আমাদের ভাই হয়ে যাবেন। এভাবেই নম্র ও আপোসকামী মোলায়েম ভাষায় সাধারণ মুসলমানদের মগজ ধোলাই করে। পাশাপাশি ভালো মাইনের চাকরি এবং আর্থিক লোভও দেখায়। ফলে মানুষ সহজেই তাদের শিকারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত যারা আছেন, তাদেরকে মোটিভেশনের কায়দা ভিন্ন। নবিজিকে শেষনবি যে তারা মানে না, এ ব্যাপারটি খোলামেলাভাবে উচ্চশিক্ষিতদের বলে না। বরং অন্য উপায়ে এ শ্রেণিকে মোটিভেশন করে। ফলে চাকরি ও পদোন্নতির লোভে অনেকেই এসব বিষয়ে ঘাটাঘাটি না করে সহজেই কাদিয়ানিদের কাতারে নিজের নাম লিখিয়ে নেয়।

দাওয়াতের মাধ্যমে কতজন কাদিয়ানি ইসলামে ফিরে এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দাওয়াতে গত ৫ বছরে প্রায় ৬০০ মানুষ ফিরে এসেছে। এছাড়া আরও কয়েকটি দল দাওয়াতের কাজ করছে। তাদের কাছে তাদের হিসাব পাওয়া যাবে। বিশেষ করে যাদেরকে প্রতারণা করে, ভুজং-ভাজং বুঝিয়ে কাদিয়ানি ধর্মে নিয়েছে, তারা দাওয়াত পেলে বুঝতে পেরে ফিরে আসে । ‍কিন্তু যারা টাকার লোভে, পদের লোভে পড়ে কাদিয়ানি হয়েছে, তারা ফিরে আসে না সহজে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের পথচলা শুরু হয় ১৯১২ সালে। এর আগে ১৯০৫ সনের দিকে চট্টগ্রাম আনোয়ারা থানার আহমদ কবীর নূর মোহাম্মদ মির্যা গোলাম আহমদের ধর্ম গ্রহণ করেন। তারপরে ১৯০৬ সনে কিশোরগঞ্জ জেলার নাগেরগাঁও গ্রামের রঈস উদ্দিন খাঁন কাদিয়ান গিয়ে কাদিয়ানি ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯০৯ সনে কাদিয়ানি ধর্ম গ্রহণ করেন বগুড়া নিবাসী মৌলভী মোবারক আলী খাঁন। তারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সৈয়দ আব্দুল ওয়াহেদ সাহেব কাদিয়ানি ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন পর্যন্ত মির্জা কাদিয়ানির সাথে পত্র আদান-প্রদান করেন এবং তার এই যোগাযোগের উল্ল্যেখ বারাহীনে আহ্‌মদীয়ার পঞ্চম খন্ডে সংরক্ষিত আছে। তিনি কাদিয়ান হতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রত্যাবর্তনের সাথে-সাথে সেখানে জামাতে আহ্‌মদীয়া, বাংলাদেশের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। সুতরাং ১৯১২ সন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জামাতে আহ্‌মদীয়া বাংলাদেশের পদচারণা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে দলটির কেন্দ্র রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত।

The post দেশে কাদিয়ানিদের সংখ্যা কত? appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/oa2cNJA

No comments:

Post a Comment