Monday, May 23, 2022

২০৫০ সালে কেমন হতে পারে আপনার খাবারের মেন্যু

ফাতেহ ডেস্ক:

ভবিষ্যতে বিশ্ব তীব্র খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা মহামারির মধ্যে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এমনকি বিশ্ব দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভিক্ষের মুখেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকটের এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের মেন্যুতে থাকতে পারে—এমন স্বল্প পরিচিত উদ্ভিদের তালিকা তৈরি করছেন লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের বিজ্ঞানীরা। গোটা বিশ্বে ভোজ্য উদ্ভিদ রয়েছে সাত হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে খাদ্য হিসেবে গ্রহণের জন্য চাষ হয় মাত্র ৪১৭টি উদ্ভিদ। স্যাম পিরিনন বলেন, ‘আমরা জানি, বিশ্বজুড়ে হাজারো ভোজ্য উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এগুলো খায়। এখানেই আমরা ভবিষ্যতের এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের জন্য কোনো সমাধান খুঁজে পেতে পারি।’

চলুন জেনে নেওয়া যাক বিজ্ঞানীদের তৈরী করা উদ্ভিদের তালিকা।

পান্ডানাস

পান্ডানাস বা পান্ডানাস টেকটেরিয়াস একটি ছোট গাছ। এই গাছ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় জন্মে। পান্ডানাস গাছের পাতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় খাবারে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের ফল দেখতে আনারসের মতো। এই ফল কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়।

লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের রিসার্চ ফেলো মেরিবেল সোটো গোমেজ বলেন, গাছটি খরা, প্রবল বাতাস ও লবণাক্ততার মতো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সহ্য করতে পারে।পান্ডানাস সম্পর্কে মেরিবেল বলেন, এটি একটি জলবায়ু সহনীয় গাছ। এটি খাবার হিসেবে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিশ্বজুড়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে এই গাছ জন্মাতে পারে।

আমাদের খাদ্যতালিকায় এই গাছ দারুণ বৈচিত্র্য আনতে পারে বলে মনে করেন মেরিবেল। তাঁর মতে, যদি পান্ডানাসকে টেকসইভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে আমাদের তা আরও ব্যাপকভাবে চাষ করা উচিত।

ভোজ্য বীজ

ভোজ্য বীজ আমাদের অন্যতম ভবিষ্যৎ খাদ্য। এগুলো যেমন সস্তা, তেমনি এতে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন রয়েছে, আছে ভিটামিন বি। মটরশুঁটি, শিমসহ মটরজাতীয় উদ্ভিদ সমুদ্রের তীর থেকে শুরু করে পাহাড়ের ঢাল পর্যন্ত এলাকার বিস্তৃত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম। বিশ্বে ২০ হাজার প্রজাতির মটরজাতীয় উদ্ভিদ আছে। কিন্তু এগুলোর মাত্র কয়েকটি প্রজাতি আমরা খাদ্যে ব্যবহার করি। বনবাদাড়ে এখনো শত শত প্রজাতির মটরজাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে বলে মনে করা হয়। আর এগুলো এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা রয়ে গেছে।

মোরামা বিন (টাইলোসেমা এস্কুলেন্টাম) বতসোয়ানা, নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অংশে একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব স্থানে এই বীজ সিদ্ধ করে খাওয়া হয় কিংবা তা পাউডারে পরিণত করা হয়। পরে তা দিয়ে জাউ জাতীয় খাবার বা কোকার মতো পানীয় তৈরি করা হয়।

সিরিয়াল

সিরিয়াল একধরনের শস্যদানা, যা ঘাস থেকে আসে। এই শস্যদানার ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে। বিশ্বে সিরিয়াল জাতীয় ১০ হাজারের বেশি প্রজাতি রয়েছে। নতুন খাদ্যের উৎস হিসেবে এই প্রজাতিগুলোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

ফোনিও (ডিজিটারিয়া অ্যাক্সিলিস) হলো একটি পুষ্টিকর আফ্রিকান সিরিয়াল। এটি কুসকুস (কারি), পোরিজ (জাউ) ও পানীয় জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়ভাবে ফসল হিসেবে ফোনিও চাষ করা হয়। এই উদ্ভিদ শুষ্কাবস্থা সহ্য করতে সক্ষম।

মিছেকলা

মিছেকলা (এনসেট) সাধারণ কলার কাছাকাছি একটি প্রজাতি। এই কলা শুধু ইথিওপিয়ার একটি অংশে খাওয়া হয়। সাধারণ কলার মতো দেখতে এই ফল অভোজ্য। কিন্তু তার কাণ্ড ও শিকড় গাঁজন করা যায়। তা জাউ (পোরিজ) ও রুটি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কলার মতো দেখতে এই ফসলের খাদ্য হিসেবে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

উপসংহার

দ্য ইকোনমিক জানিয়েছে, প্রধান প্রধান বিভিন্ন খাবারের উচ্চ মূল্যের কারণে পর্যাপ্ত খাবারের নিশ্চয়তা নেই এমন মানুষের সংখ্যা ইতিমধ্যে বিশ্বে ৪৪ কোটি থেকে বেড়ে ১৬০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আরও প্রায় ২৫ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। যদি যুদ্ধ চলতে থাকে এবং বিশ্ববাজারে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরবরাহ সীমিত হয়, তাহলে আরও কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারেন।

The post ২০৫০ সালে কেমন হতে পারে আপনার খাবারের মেন্যু appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/yVPwLAo

No comments:

Post a Comment