Tuesday, June 23, 2020

লকডাউনে বাধাগ্রস্থ জীবন : যেভাবে চলছে তাবলীগের কার্যক্রম

রাকিবুল হাসান:

করোনাভাইরাস মহামারীর ভয়াবহতায় আশ্চর্য এক নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে মানুষের জীবনে। কার্যত থমকে আছে জীবন। ঢিমেতালে চলছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে অন্যসবকিছুর চেয়ে একটু বেশিই সতর্ক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। মাদরাসা তো বন্ধ আছেই, সেইসঙ্গে বন্ধ আছে মসজিদভিত্তিক দাওয়াতি কার্যক্রম—তাবলীগ। সংশ্লিষ্টগণ বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত তাবলীগের কার্যক্রম বন্ধই থাকবে।

করোনা মহামারীর শুরুতেই মসজিদভিত্তিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এসময় ভয়েস রেকর্ডে একটি বার্তা পাঠান তাবলীগের আলমি শূরার মুরুব্বি মাওলানা যুবায়ের আহমাদ। বার্তায় তিনি বলেন, করোনা প্রকোপের কারণে আপাতত তাবলীগের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তারপর একে একে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব জামাত ফিরিয়ে আনা হয়। একটি সূত্র ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, ‘এখন আলমি শূরার কোনো জামাত কোথাও কাজ করছে না। সরকারের প্রথম ঘোষণার পরই সব জামাত ফিরিয়ে আনা হয়।’

পরবর্তীতে মসজিদে শর্তসাপেক্ষে নামাজের অনুমতি দেয়া হলেও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে তাবলীগের কার্যক্রমে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাবলীগের আলমি শূরার সাথীগণ বন্ধ রাখেন সবকিছুই। গাশত, মসজিদের পাঁচ কাজ, তালিমসহ আরও যত দৈনন্দিন আমল। তবে সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোথাও কোথাও জামাত বের করার চেষ্টা করছে তাবলীগের সাদপন্থী একটি দল।

তাবলীগ-সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ফাতেহকে নিশ্চিত করেছে, তাবলীগের সাদপন্থী সাথীদের মধ্যে দুটি ভাগ হয়ে গেছে করোনাভাইরাসে নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে। একদল বলছে—যতই মহামরি আসুক, তাবলীগের কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। এ দলটি বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাবার কথাও জানিয়েছে। আরেকটি দল বলছে—সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে তাবলীগের কাজ বন্ধ রাখতে হবে। এ দলটিও চিঠি দিয়ে তাদের সাথীদের জানাচ্ছে এ সময়ে জামাত বের না করতে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও কলের রেফারেন্সও দিয়েছে সূত্রটি।

আলমি শূরার সাথীদের তাবলীগি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মুরুব্বিগণ। তারা বলছেন, যেহেতু মসজিদে তাবলীগের কার্যক্রম চালানো এখন সম্ভব নয়, তাই ব্যক্তিগতভাবে কাজটি চালিয়ে যেতে পারেন সাথীগণ। এক্ষেত্রে যারা কুরআন পড়তে পারেন না, কিংবা শুদ্ধ করে পড়তে পারেন না, তারা তাদের গ্রামের কেনো মাদরাসা ছাত্রের কাছে কুরআন শুদ্ধ করে নিতে পারেন। মাদরাসা ছাত্ররাও এখন অবসর। এতে দীর্ঘ সময় মসজিদের সঙ্গে জুড়ে না থাকার কারণে সৃষ্ট উদাসীনতা কিছুটা কমবে।

তাবলীগে সাল (১ বছর) লাগানো এক সাথী, মাওলানা রেদওয়ানুল হক ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, লকডাউনের এই অবসরে অনেকেই কুরআন শিখে ফেলেছেন। লকডাউন যখন শুরু হয়, লন্ডনে পিএইচডি করা বড় একজন ডাক্তার বললেন, তিনি কুরআন শিখবেন। আলিফ-বা-তাও পারতেন না তিনি। তার ছোট ছেলে মাদরাসায় নাজরানা পড়তো। তিনি দু মাসেই তার ছেলের কাছে পড়ে পড়ে কুরআন শিখে ফেলেছেন। মেধা এবং আগ্রহ—দুটোর কারণে এত তাড়াতাড়ি তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন। মুরুব্বিগণ তাই এর প্রতি জোর দিচ্ছেন এখন।

সূত্রটি জানায়, ব্যক্তিগতভাবে কোনো তাবলীগের সাথী অনলাইনে দাওয়াতের কার্যক্রম চালালেও কেন্দ্রীয়ভাবে মুরুব্বিগণ কখনোই এমন করবেন না। কারণ তাবলীগের ঐতিহ্যবাহী মানহাজ এবং পদ্ধতি হলো—সশরীরে মানুষের কাছে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া। ফেস টু ফেস মেথডের আলাদা একটা গুরুত্ব এবং মহত্ত্ব আছে। তাই তাবলীগ তার ঐতিহ্যবাহী ধারা থেকে বের হবে না। অপেক্ষা করবে সুন্দর নিরাপদ একটি সময়ের। যখন কোনো ভয় থাকবে না, শঙ্কা থাকবে না। দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে মানুষ আবার বের হবে, মানুষের পিঠে পিঠে হাত বুলাবে। আবার তালিম হবে, গাশত হবে, শবগুজারি হবে। মুসল্লিদের চাঞ্চল্যে আবার মুখর হয়ে উঠবে সব মারকাজ, সব মসজিদ।

The post লকডাউনে বাধাগ্রস্থ জীবন : যেভাবে চলছে তাবলীগের কার্যক্রম appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/3hWsIPp

No comments:

Post a Comment