রাকিবুল হাসান:
সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ : ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে এই বাজেট উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু বিশ্লেষকগণ বলছেন, ঘোষিত বাজেটের ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমায় ধর্মীয় দিকটি একেবারেই গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়লেও কমেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। যা বিগত অর্থবছরে ছিল ১৮ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছর থেকে এবছর বরাদ্দ বাড়ানো তো হয়-ই নি, বরং কমানো হয়েছে ১৬ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। ধর্মীয় খাতে এমন আশঙ্কাজনক হারে বরাদ্দ কমানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লেখক অধ্যাপক ডা. আ ফ ম খালেদ হোসাইন। ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে তিনি বলেন, ‘করোনা সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ কমানোটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বরাদ্দটা ১৮ হাজার থেকে ১ হাজারে নেমে আসা অস্বাভাবিক। এটা হতেই পারে না।’
গুণী এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার মতোই, বরং তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় খাত। নীতি-নৈতিকতা ছাড়া একটা জাতি কখনো আলোর মুখ দেখতে পারে না। ধর্ম এই নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমায় ধর্মীয় খাতকে গুরুত্ব-ই দেয়া হয়নি। বিষয়টা খুব উদ্বেগজনক।’
ধর্মীয় খাতে বরাদ্দ এই টাকা খরচ করা হয় মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা ও জেদ্দার হজ অফিস, ওয়াকফ প্রশাসন এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টান ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টে। বরাদ্দ কমানোর কারণে এবার সব ক্ষেত্রেই সংকুচিত হয়ে যাবে খরচের মাত্রা। ফলে ধর্মীয় খাতে সেবার মান আরও খারাপ হবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা দানা বাঁধছে ধর্মীয় মহলে। করোনা সঙ্কটের কারণে প্রতিটি মসজিদেই সুরক্ষার প্রয়োজন বাড়ছে। প্রতিটি মসজিদেই দরকার সরকারের পক্ষ থেকে স্থায়ী কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা। আবার হজের বিভিন্ন সঙ্কট দূরীকরণেও দরকার বিশাল উদ্যোগ। এত কম বরাদ্দে কিভাবে ধর্মীয় সেবা নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ডা. আ ফ ম খালেদ হোসাইন ফাতেহকে বলেন, ‘ভ্যাট-ট্যাক্স সবাই দিচ্ছে। কলরেটসহ বিভিন্ন নিত্যব্যবহার্য জিনিসে বাড়ানো হয়েছে ভ্যাট। করোনা সঙ্কট কাটাতেই ভ্যাট বাড়াতে হয়েছে। তাহলে ধর্মীয় খাতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে কেন বরাদ্দ প্রায় ৮০ ভাগ কমিয়ে দেয়া হয়েছে? হয়তো বাড়ানো যেতো না; কিন্তু এমন অস্বাভাবিক হারে কমানোটা তো যুক্তিসঙ্গত নয়। সবার দাবি জানানো উচিত—ধর্মীয় খাতে যেন বরাদ্দ বাড়ানো হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি ধর্মীয় খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের দুই তৃতীয়াংশ। মোট বাজেটের ৭.২ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি অর্থ স্বাস্থ্য খাতে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকার মতো বেশি। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ১ শতাংশ।
The post রাষ্ট্রীয় বাজেটে বঞ্চিত ধর্মীয় খাতগুলো appeared first on Fateh24.
from Fateh24 https://ift.tt/2B652Hw
No comments:
Post a Comment