Sunday, June 28, 2020

মুরুব্বিদের অনুমোদনের অপেক্ষায় বেফাকের ত্রাণ তহবিল

রাকিবুল হাসান:

বেফাকের কার্যালয়ে কখনো মিটিং হচ্ছে, কখনো অনুষ্ঠিত হচ্ছে জরুরী সভা। বেফাক থেকে কখনো ঘোষণা আসছে সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যানের, কখনো আবার সিদ্ধান্ত আসছে আর্থিক অসুবিধাগ্রস্ত শিক্ষকদের ধৈর্যধারণের। তবে অসুবিধাগ্রস্ত এইসব কওমি শিক্ষকদের হাতে কবে বেফাকের অর্থিক অনুদান তুলে দেয়া হবে, নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না বেফাকের কোনো কর্মকর্তাই।

বেফাকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুদান সংক্রান্ত মিটিংয়ে বসা গুটিকয়েকজন ছাড়া অন্য কেউ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। বেফাকের শীর্ষ পর্যায়ের একজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বললেন, মিটিংয়ে যোগ দিতে না পারার কারণে অনুদান কবে এবং কিভাবে দেয়া হবে তা তিনি জানেন না।

এদিকে করোনা সংক্রমণে চলমান উদ্ভব পরিস্থিতিতে কওমি মাদরাসাসমূহের বিষয়ে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৭ জুন) ঢাকার কাজলায় বেফাকের কার্যালয়ে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বেফাকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়, বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে আর্থিক কষ্টে ম্রিয়মাণ শিক্ষক সমাজের প্রতি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যেন অনুগ্রহ পূর্বক দয়ার্দ্র আচরণ করেন। তাদের চাহিদা ও সমস্যার প্রতি সদয় দৃষ্টি প্রদান করেন। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা যেন শিক্ষকদের বেতন আদায়ে বিশেষ যত্নবান হন। অপরদিকে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত মাদরাসার শিক্ষক সমাজও যেন ধৈর্যধারণ করেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে রূঢ় আচরণ না করেন।

সর্বশেষ এই জরুরী সভাতেও আলোচনায় আসেনি বেফাকের আর্থিক অনুদানের প্রসঙ্গ। বেফাকের কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ আশরাফি ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘শনিবারে বেফাকের সর্বশেষ সভায় অনুদান সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি। কবে এ বিষয়ে মিটিং হবে, তাও জানি না।’

বেফাকের অনুদান সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় বেফাক এবং হাইয়াতুল উলইয়ার উচ্চ কমিটির সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হকের সঙ্গে। ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে তিনি বললেন, ‘প্রায় সাড়ে সাত হাজার মাদরাসা থেকে ‘অনুদান ফরম’ এসে পৌঁছেছে আমাদের হাতে। এতগুলো মাদরাসায় অনুদান বিতরণের কাজটা সহজসাধ্য নয়। বেফাকের পক্ষ থেকে যে কল্যান তহবিল গঠন করা হয়েছিল, তাতে খুব সামান্যই অনুদান জমা পড়েছে। এটা দিয়ে সবাইকে অনুদান দেয়া যাবে না। তাই বেফাকের নিজস্ব ফান্ড থেকেও বিরাট একটা অংক যোগ করতে হবে। যেহেতু বেফাক থেকে এতবড় একটা এমাউন্ট দিতে হচ্ছে, তাই বিষয়টি মুরুব্বিদের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।’

মুরুব্বিদের অনুমোদন কবে মিলবে তা-ও অনিশ্চিত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মাওলানা মাহফুজুল হক। ঈদুল আজহার আগে কওমি শিক্ষকদের হাতে অনুদান তুলে দেয়া যাবে কিনা তাও নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। তবে বলেছেন, ‘মুরুব্বিরা অনুমোদন দিলেই আমাদের বৈঠক হবে। কোন মাদরাসায় কত টাকা করে অনুদান দেয়া হবে, তা বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে। বৈঠকের আগে সুনিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না। বৈঠকের পরই অনুদান বিতরণ তৎপরতা শুরু হবে।’

তবে বেফাকের এই আর্থিক সহায়তাকে শিক্ষকদেরকে দেয়া অনুদান মানতে নারাজ অনেক শিক্ষক। তারা বলছেন, বেফাক থেকে অনুদান প্রত্যাশীদের ‘অনুদান ফরম (শিক্ষক)’ ফরম পূরণ করতে হচ্ছে। তবে ফরমের নিচে লিখে দেয়া হয়েছে, ‘মাদরাসা কর্তৃপক্ষ চাইলে বেফাক প্রদত্ত অনুদানকে বেতনের সাথে সমন্বয় করতে পারবে।’ অনুদান ফরমের এই ফুটনোট থেকে প্রশ্ন জাগে—বেফাক মাদরাসাকে অনুদান দিচ্ছে, নাকি শিক্ষকদের? ফরম থেকে বুঝা যায়, শিক্ষকদের অনুদান দেয়া হচ্ছে। ‘বেতনের সাথে সমন্বয়’ ফুটনোট থেকে বুঝা যায়, অনুদান দেয়া হচ্ছে মাদরাসাকে। মাদরাসা চাইলে শিক্ষককে এটা অনুদান হিসেবে দিতে পারে। আবার চাইলে বেতন হিসেবেও দিতে পারে।

প্রশ্নটির জবাবে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘অনুদানটাকে সমন্বয় করা হয়েছে। সব মাদরাসার আর্থিক সামর্থ্য এক না। কোনো কোনো মাদরাসা পরিস্থিতি ঠিক হলেও বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে পারবে না। তারা চাইলে বেফাকের অনুদানটাকে তাদের বেতন হিসেবে শিক্ষকদেরকে দিতে পারেন। আবার কোনো কোনো মাদরাসা বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে পারবে। তারা চাইলে বেতন হিসেবে না দিয়ে শিক্ষকদেরকে অনুদান হিসেবেই দিতে পারেন। দুটোর সমন্বয় করার জন্যই ফুটনোট যুক্ত করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশের কওমি মাদরাসার জন্য ঘোষণা করা হয় আর্থিক প্রণোদনা। কিন্তু কওমি মাদরাসার শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ প্রণোদনা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ২৬ এপ্রিল অসুবিধাগ্রস্ত শিক্ষকদের সাহায্য করতে নিজেরাই একটি কল্যাণ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয় বেফাক।

The post মুরুব্বিদের অনুমোদনের অপেক্ষায় বেফাকের ত্রাণ তহবিল appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/2YF5xla

No comments:

Post a Comment