Monday, June 22, 2020

ভূরাজনীতি : চীন-ভারত দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের লাভ-লোকসান

মুসান্না মনসুর:

বর্তমানে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব নিয়ে যেসব কথা বাজারে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে তাতে ভূরাজনীতি বা geopolitics শব্দটা বারবার আসছে। তাই মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের ভূরাজনীতি জিনিসটা কী, সেটা বোঝার দরকার।

১.

১৮৯৯ সালে রুডল্‌ফ জেলেন (Rudolf Kjellen) নামের এক সুইডিশ ভদ্রলোক geopolitisk শব্দটা আবিষ্কার করেন। সুইডিশ হলেও জেলেন ছিলেন মূলত জার্মান জাতীয়তাবাদী। Geopolitisk জার্মান ভাষায় geopolitik হিসাবে অনূদিত হয়। ১৯২৪ সালে এই শব্দটা ইংরেজীতে geopolitics হিসাবে পরিচিতি পায়।

রুডল্‌ফ জেলেন যেই ব্যক্তি দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন তিনি হচ্ছেন ফ্রেডরিক র‍্যাটজেল (Friedrich Ratzel)। র‍্যাটজেল ছিলেন একজন জার্মান চিন্তক। তিনি জার্মানীর সম্প্রসারণবাদী (expansionist) পলিসিকে জাস্টিফাই করতে চাচ্ছিলেন। ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশনের তত্ত্ব তিনি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন। সোশ্যাল ডারউইনিজমের উপর ভিত্তি করে তিনি তার চিন্তা দাঁড় করান। তাঁর মতে, প্রতিটা রাষ্ট্র একটা জীবন্ত সত্ত্বা। এবং প্রতিটা জীবন্ত সত্ত্বার মতই রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে হলে একটা নির্দিষ্ট টেরিটরি দখল করতে হবে। এই টেরিটরিকে তিনি lebensraum (লেবেনস্রম) হিসাবে অভিহিত করেন। অর্থাৎ, রাষ্ট্র টিকে থাকার জন্য দুর্বল রাষ্ট্রকে গিলে খাবে এবং ধীরে ধীরে টেরিটরি বৃদ্ধি করতে থাকবে। ঠিক যেভাবে ডারউইন বলেছিলেন সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট, তেমনি র‍্যাটজেলের মতে সবল রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রের উপর রাজত্ব করবে এটাই স্বাভাবিক। র‍্যাটজেলের মতে বড় রাষ্ট্রের দুর্বল রাষ্ট্রকে গিলে খাওয়ার এটা একদম বৈজ্ঞানিক, স্বাভাবিক, এবং দরকারি প্রক্রিয়া। বরং এই প্রক্রিয়ায় বাঁধা দেওয়াটাই অবৈজ্ঞানিক, অস্বাভাবিক, ও প্রতিক্রিয়াশীলতা। এইভাবে র‍্যাটজেল জার্মানীর সম্প্রসারণবাদী পলিসিকে শুধু বৈধতাই দেন না বরং এটাকে একেবারে খাঁটি বিজ্ঞানসম্মত তকমাও দেন।

র‍্যাটজেল ও জেলেনের এই চিন্তা পরবর্তীতে হিটলারের নাৎসি জার্মানীর দর্শন লুফে নেয়। জার্মান মেজর জেনারেল কার্ল হশোফার (Karl Haushofer) ১৯২৪ সালে জার্নাল অব জিওপলিটিক্স প্রকাশ করা শুরু করেন এবং জিওপলিটিক্সের চিন্তাকে জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দেন। র‍্যাটজেলের লেবেনস্রমের ধারণার অনুকরণে নাৎসি জার্মানী বলা শুরু করে যে জার্মানির জন্য আরও টেরিটরি দরকার। পোল্যান্ড , চেকোস্লাভাকিয়াসহ ইউরোপজুড়ে জার্মানীর সামরিক আগ্রাসনকে জিওপলিটিক্সের দোহাই দিয়ে জাস্টিফাই করা হয়। বলা হয় এটা একদমই বৈজ্ঞানিক ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বরং এর বিরোধিতা করাটাই অবৈজ্ঞানিক ও প্রতিক্রিয়াশীল।

২.

যাই হোক, নাৎসি জার্মানী শুধু টেরিটরি দখলই করে নাই। বরং বর্ণবাদ ও গণহত্যার মত জঘন্য ধারণাও নাৎসিবাদে প্রোথিত ছিল। র‍্যাটজেলের জিওপলিটিক্স শুধু সামরিক আগ্রসানের বৈধতা দিয়েছিল। কিন্তু নাৎসি জিওপলিটিক্স বর্ণবাদেরও বৈধতা দেয়। এবার জিওপলিটিক্স নামক pseudo-science একটু বেশিই মাত্রা অতিক্রম করে ফেলায় একাডেমিক পরিসরে একে ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করা হয়। পরে স্নায়ুযুদ্ধের আমলে ধীরে ধীরে জিওপলিটিক্স পুনর্জীবন লাভ করে।

ভূরাজনীতি বা জিওপলিটিক্সের জন্ম ও বিকাশের এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে জিওপলিটিক্স পুরাটাই একটা ভাঁওতাবাজি। জিওপলিটিকাল এনালিস্ট নামে ফেসবুকে কিংবা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনেও যাদেরকে দেখি তারা আসলে মোটেই বিশ্ব রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করেন না। বিশ্ব রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করা নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতিকে নিজের পছন্দমাফিক ঢেলে সাজানোর তাগিদ থেকেই তারা ভূরাজনীতি নামক ছদ্ম-সায়েন্স (pseudo-science) এর আড়াল নেন। তারা বলতে চান যে তাদের বিশ্লেষণ ও প্রস্তাবনা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক। একইভাবে র‍্যাটজেল আর হিটলারের জার্মানীও বলত জার্মানী আস্তে আস্তে অন্য সব রাষ্ট্রকে গিলে খাবে এটাও সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক একটা প্রক্রিয়া।

ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক নামক ফটকাবাজদের চালবাজিটা হচ্ছে তারা প্রায়ই self-fulfilling prophecy সামনে নিয়ে আসেন। self-fulfilling prophecy হচ্ছে এমন ভবিষ্যদ্বাণী যেটা আসলে সত্য না কিন্তু মানুষ ওটাকে সত্য মনে করে এমনভাবে কাজ করে যে সেটা সত্যে পরিণত হয়। যেমন ধরা যাক, কোন এক খুব জনপ্রিয় অর্থনীতিবিদ বললেন সামনেই অর্থনৈতিক ধ্বস নামবে, কাজেই মানুষ যেন তাদের সঞ্চয় ব্যাংক থেকে তুলে নেয়। এরপর সব মানুষ যখন তাদের সঞ্চয় ব্যাংক থেকে তুলে নিল, তখন আসলেই অর্থনৈতিক ধ্বস নামলো। এমনিতে মনে হতে পারে অর্থনীতিবিদের কথাই তাহলে সত্যে পরিণত হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে মানুষ অর্থনীতিবিদের ভবিষ্যদ্বাণীকে বিশ্বাস করে ঐ অনুযায়ী আচরণ করেছে জন্যই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছে। মানুষ যদি তার ভবিষ্যদ্বাণীকে থোড়াই কেয়ার করত তাহলে ভবিষ্যদ্বাণীটা সত্য হত না। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণও অধিকাংশ সময়ই এইরকম। বিশ্লেষকরা অনেক কিছু বলেন যেটা হয়ত প্রায়ই সত্য হয়। সত্য হয় কারণ মানুষ ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথামত আচরণ করে সেটাকে সত্য বানায়। এইসব বিশ্লেষকদের ভাঁওতাবাজিটা ধরতে পেরে যদি মানুষ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতো তাহলে এইসব বিশ্লেষকদের প্রতিটা কথা মিথ্যা প্রমাণিত হত।

৩.

চীন-ভারত দ্বন্দ্ব নিয়ে পড়তে এসে ভূরাজনীতি ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণ জিনিসটাই যে আসলে একটা ধাপ্পাবাজি তা নিয়ে এত বিস্তারিত আলাপ হয়ত অনেকের ভাল লাগবে না। কিন্তু ভারত ও চীনের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের করণীয় বুঝতে হলে এই জিনিসগুলি বোঝা খুব জরুরী।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ দখল করার নিমিত্তে ২০০১ সালে ভারত বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবসময়ই ভারত হস্তক্ষেপ করে এসেছে। ভারতের কংগ্রেস হচ্ছে সফ্‌ট হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করে আর বিজেপি করে হার্ড হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি। উভয় দলই কট্টর বাংলাদেশ ও ইসলামবিদ্বেষী। অন্যদিকে চীন ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের সব দলের সাথেই সুসম্পর্ক মেনে চলেছে এবং আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেনি।

কিন্তু ২০১৩ সালে শাহবাগে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতির ভারসাম্য চিরতরে বদলে যায়। ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং ২০১৫ সালের ব্যর্থ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ যে balance of power বা balance of terror বজায় রাখত তা ধ্বংস হয়ে যায়। বিএনপির পতন ঘটে। দেশজুড়ে মারাত্মক বিরাজনীতিকরণ পরিলক্ষীত হয়। এতে করে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষমতার ভরকেন্দ্র রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাত থেকে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের হাতে চলে যায়। এমতাবস্থায় চীন তার ঐতিহাসিক নিরপেক্ষতা ও আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে নাক না গলানোর নীতি বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতা কাঠামোর সাথে হাত মেলায়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনা রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরে এসে রেকর্ড বিনিয়োগ করে যান। দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পর বাংলাদেশ চীনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতা। বাংলাদেশের নৌবাহিনী চীন থেকে দুইটা সাবমেরিন কেনে। এসবের নিরিখে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক হোঁচট খায়।

বাংলাদেশে চীন ও ভারতের এই দ্বৈরথের একটা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট আছে। আমেরিকাকে হটিয়ে চীন নয়া বিশ্ব মোড়ল হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। চীনকে ঠেকানোর জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় তাই আমেরিকা ভারতকে নিজের দারোয়ান হিসাবে ঠিক করেছে। ভারতের মাধ্যমে আমেরিকা চীনকে আটকে দিতে চায়। অন্যদিকে চীন চায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করতে। কারণ মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে তেল আসে তা খুবই সরু মলাক্কা প্রণালী হয়ে চীনে প্রবেশ করে এবং যেকোন সময় আমেরিকা এটা বন্ধ করে দিতে সক্ষম। তাই ভারত মহাসাগরে চীনের এক্সেস (access) দরকার।

ভারতের হঠকারি পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক ভারসাম্য একেবারে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে চীন বাংলাদেশে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। ভারতের ঘৃণ্য রাজনীতির জন্য বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে মারাত্মক ঘৃণা করে। সেই তুলনায় চীনের প্রতি এদেশের মানুষ সহানুভূতিশীল। তাই বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোও ভারতের ওপর নির্ভর করার বদলে চীনের ওপর নির্ভর করা বেহতর মনে করে। তাছাড়া ভারত একটা দরিদ্র দেশ। অন্যদিকে চীনের আছে প্রচুর টাকা। ভারত বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ করতে পারবে না। চীন সেটা পারবে।

এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে চীন একচেটিয়াভাবে ক্ষমতাসীনদের সমর্থন দেয়। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বাংলাদেশস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত সর্বপ্রথম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। নির্বাচনের আগে ইন্দো-মার্কিন অক্ষ পড়ে মহাফাপড়ে। একদিকে তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়ে বিরোধী দলের মাজা ভেঙ্গে দিয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরাও চীনের পক্ষে ঝুঁকে গেছে। ২০১৭ সালে তারা তৎকালীন বিচারপতি এস কে সিনহাকে দিয়ে জুডিশিয়াল ক্যু করিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর চক্রান্ত করে। কোটা আন্দোলন ও সড়ক আন্দোলনের পক্ষ নেয়। ভারতের কথিত ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা শুরু করেন এবং কেউ কেউ “সব ডিম এক ঝুড়িতে না রেখে” বিএনপি ও তারেক জিয়ার সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করার দিকেও ভারতকে মনযোগী হতে বলেন।

এর পরে আরও অনেক জল গড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে তাকে নজিরবিহীনভাবে অবহেলা করে ভারত। NRC-CAAB বিতর্কে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি নতুন চূড়ায় আরোহন করেছে। এরই জের ধরে ভারতের সাথে একাধিক মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কও খুব দ্রুতই উন্নত হচ্ছে। পাকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসে নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে। করোনা মহামারি না হলে ডি-৮ সম্মলনে যোগ দিতে পাক উজিরে আজম ইমরান খান বাংলাদেশ সফরে আসতেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তানে খেলতে গেলে তাদের পাক প্রেসিডেন্টের বাসভবনে চায়ের দাওয়াত নিয়ে যাওয়া হয়। তুরস্কের সাথেও বাংলাদেশের সম্পর্ক উত্তোরত্তর ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী তুরস্কে গিয়ে বলেছেন শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় অসামান্য সাফল্যের জন্য তুর্কি রঈস রজব তাইয়েব এরদোগান এবং বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পাওয়া উচিত।

সবমিলিয়ে মনে হতে পারে চীন ও ভারতের এই দ্বৈরথে বাংলাদেশ চীনের পক্ষালম্বন করাই বাংলাদেশের জন্য ভাল। কংগ্রেস ও বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মুখে তাহলে এটা হবে মারাত্মক চপেটাঘাত। তবে বাস্তবতা এত সহজ না। আমাদের মনে রাখতে হবে স্বৈরশাসক এরশাদ তার ক্ষমতা সুসংহত করতে ইসলামের ব্যবহার করেছেন। কিছু রেওয়াতে আছে মেজর জলিল নিজের ধর্ষণ ও লুটপাট ঢাকতে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে দেশের মানুষের সহানুভূতি কুড়ানোর চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশে ভারত গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে বেসামরিক প্রশাসন, সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ব্যবহার করে। কিন্তু চীনের সাথে বাংলাদেশের সংযোগ অন্যরকম। বাংলাদেশে চীনা আধিপত্য যতই প্রতিষ্ঠা পাবে ততই বাংলাদেশী রাজনীতিতে অরাজনৈতিক শক্তির আধিপত্য স্পষ্ট হতে থাকবে। এই অরাজনৈতিক শক্তি নিজেদের দেশপ্রেমিক ও ইসলামপ্রেমী হিসাবে হাজির করবে অথচ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিনিয়ত ভুলণ্ঠিত করবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাত থেকে অদৃশ্য অরাজনৈতিক শক্তির হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়াটা এদেশের মানুষের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

ভারত ও চীনের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বাহানায় ঠিক এই চেষ্টাই চলছে। বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক দেশপ্রেম আর ইসলামপ্রেমের মুখোশ পড়ে রাজনীতির সামরিকায়ন করতে চাইছেন। একদিকে এরা ভারত বিরোধী ও ইসলামপ্রেমী কথা বলেন, অন্যদিকে এরা বিভিন্ন ইসলামী ঘরানার লোকের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরী করেন। আহমদ শফি, বাবুনগরী, আজহারীসহ সব ইসলামী ঘরানা ও ব্যক্তিত্বকে বিতর্কিত করে ফেলে ইসলামের একমাত্র ইজারাদার হিসাবে অদৃশ্য শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করছেন এনারা। বাংলাদেশের মানুষ ‘গান্ডু’ তাই বাংলাদেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র না – এই ধরণের বয়ানের প্রচলনও করার কোশেশ চালাচ্ছেন তারা। তারা বলতে চাইছেন ভূরাজনীতির দাবী হচ্ছে দেশের কর্তৃত্ব অদৃশ্য শক্তির হাতে যাক। এদের মতে অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতা গ্রহণই যেন বৈজ্ঞানিক, স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ঠিক যেরকম র‍্যাটজেল আর হিটলার বলতেন।

ভারত ও চীনের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের কোন ফায়দা তখনই হবে যখন এদেশের মানুষ যেকোন এক পক্ষকে গণতন্ত্রের পক্ষে আনতে পারবে। এমতাবস্থায় চীন যদি অদৃশ্য শক্তির পক্ষ না নিয়ে দেশের গণমানুষের পক্ষে দাঁড়ায় তাহলে একই সাথে কংগ্রেস-বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মোকাবেলা ও গণতন্ত্র উদ্ধার দুইটাই সম্ভব হবে। অন্যথায় বাংলাদেশী রাজনীতিতে চীনা হস্তক্ষেপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের জন্যও ভাল ফল বয়ে আনবে না।

The post ভূরাজনীতি : চীন-ভারত দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের লাভ-লোকসান appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/37Tc1zL

No comments:

Post a Comment