রাকিবুল হাসান :
দেশজুড়ে ঘোষিত লকডাউনের কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশের ‘প্রায় ৫০ হাজার’ প্রাইভেট কওমি মাদরাসা। বিগত মাসের বিল্ডিং ভাড়া এবং শিক্ষকদের বেতন দিতে পারেননি অনেকেই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা এবং উৎকণ্ঠায় দুলছেন তারা।
গত ২৯ এপ্রিল ২০২০ ইং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এর মধ্যস্থতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে চট্টগ্রাম প্রাইভেট মাদরাসা এসোসিয়েশন। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশের নুরানি মাদরাসা, হিফজখানা ও এতিম খানাসহ প্রায় ৫০ হাজার প্রাইভেট কওমি মাদরাসা বন্ধ রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করছে প্রায় ৫০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। তাদের পড়ালেখার সীমাহীন ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। তাছাড়া ভাড়া ঘর/বিল্ডিংয়ে পরিচালিত সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের বেতন-খোরাকী নির্ভর এসব প্রাইভেট কওমি মাদরাসা বিগত ২ মাস যাবৎ বন্ধ থাকায় মাদরাসার বিল্ডিং ভাড়া এবং শিক্ষক কর্মচারীর বেতন প্রদানে সম্পূর্ণ অপারগ হয়ে পড়েছে। বেতন না পেয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা অর্থনৈতিক মহা সংকটে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের এই ৫০ হাজার প্রাইভেট কওমি মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে প্রায় ১০ লক্ষ শিক্ষক ও কর্মচারী বেকার হওয়ার পাশাপাশি প্রায় ৫০ লক্ষ শিক্ষার্থীর পড়া লেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিরাট আশংকা তৈরি হয়েছে।’
কথা হয়েছিল মাদানীনগরে অবস্থিত মারকাযুশ শায়খ ইদরিস লিল উলুমিল ইসলামিয়ার পরিচালক মাওলানা ইলিয়াস খানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘মাদরাসা বন্ধ। অনেক ছাত্র বেতন দেয়নি। তবুও নিজেদের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের গতমাসের বেতন পরিশোধ করেছি। সমস্যা প্রকট; আমরা চেষ্টা করে যাব যতটুকু সম্ভব শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করার।’
অন্যদিকে শত নিরাশার মাঝেও আশায় বুক বাঁধতে চাচ্ছেন কামরাঙ্গীরচরে অবস্থিত উম্মুর কুরা ক্যাডেট মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম। কিন্তু তিনি আশার বাণীতেও লুকোতে পারলেন না নিরাশার দীর্ঘশ্বাস। মুঠোফোনে বললেন, ‘সাধারণত মাসের পাঁচ তারিখের আগেই আমি বেতন পরিশোধ করে দেই। এবার শিক্ষকদের গত মাসের বেতন অর্ধেক করে দিয়েছি। শিক্ষকরাও মেনে নিয়েছেন। জানি না কতদিন দিয়ে যেতে পারবো। যতটুকুই দিচ্ছি, ঋণ করে দিচ্ছি। মাদরাসার বিল্ডিং ভাড়া দিতে পারিনি এখনো। আশা করছি, সব ঠিক হয়ে যাবে অচিরেই।’
লকডাউন আরও দীর্ঘ হলে মাদরাসার ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে জানতে চাইলাম। তিনি খানিক নরম কণ্ঠে বললেন, ‘এভাবে আরও কয়েকমাস চললে মাদরাসা ছেড়ে দিতে হবে। আর রমজানের পরও যদি খুলে, তাহলে অর্থনৈতিক একটা ধাক্কা আমাদের সামলাতে হবে। কারণ তখন অনেক ছাত্রই বেতন দিতে পারবে না। শিক্ষকদের বকেয়া বেতন, জমে থাকা বিল্ডিং ভাড়া—সব পরিশোধ করতে গিয়ে নাকাল হতে হবে আমাদের।’
অর্থনৈতিক সংকটে নাকাল অপেক্ষাকৃত নতুন প্রাইভেট মাদরাসাগুলোও। মাদরাসা গুছিয়ে উঠার পর সঙ্গে সঙ্গেই এই করোনার ধাক্কা বেশামাল করে দিচ্ছে তাদের। কুমিল্লায় অবস্থিত মাদরাসাতুল মুত্তাক্বীনের পরিচালক ক্বারী মাওলানা ইব্রাহীম সাইফি জানালেন, ‘লকডাউন শুরু হওয়ার চারমাস আগে মাদরাসা শুরু করেছি। সবকিছু গুছিয়ে উঠতেই করোনার ধাক্কা। গতমাসে মাদরাসার বিল্ডিং ভাড়া দিতে পারিনি। অস্বচ্ছল শিক্ষকদের অর্ধেক বেতন দিয়েছি। যতটুকু দিয়েছি, ঋণ করেই দিয়েছি। এভাবে কতদিন চলবে, আল্লাহ মালুম।’
বাংলাদেশের মূলধারার কওমি মাদরাসাকে প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। সংকটের এই সময়ে আলোচনা উঠছে প্রাইভেট মাদরাসাগুলো সরকারি প্রণোদনা চায় কিনা। নিজেদের উদ্যোগে কয়েকটি প্রাইভেট মাদরাসার পরিচালকগণ সরকারি প্রণোদনা চেয়েছেও। কিন্তু প্রাইভেট মাদরাসা এসোসিয়েশন বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, তারা সরকারি প্রণোদনা চায় না। বরং তাদের দাবি, সব ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাদরাসাগুলো রমজানের পর খুলে দেয়া হোক। একই ধরণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মাদরাসা ঐক্য পরিষদ।
The post মহামারী লকডাউন : সংকটে প্রাইভেট মাদরাসা appeared first on Fateh24.
from Fateh24 https://ift.tt/2WgtL2I
No comments:
Post a Comment