Thursday, May 7, 2020

সৌদিতে অস্থির শ্রমবাজার : ঝুঁকিতে বাংলাদেশী শ্রমিকরা

মাহবুব ওয়াসেল:

করোনা ভাইরাস মহামারি রূপ নেওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়েছেন সৌদিতে কর্মরত বাংলাদেশীরা। দেশটির অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব, তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া ও সৌদিকরণ নীতির কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে সৌদির শ্রমবাজার। মধ্যপ্রাচ্যের বড় ওই শ্রমবাজারে প্রায় ২২-২৫ লাখ বাংলাদেশীর বাস, যাদের ৮৫ ভাগই বৈধ। তাদের বতাকা বা পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট রয়েছে। তারা নিয়মিত এবং বেশ ভাল বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু আচমকা সৌদি সরকারের নিজেদের নাগরিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে নেয়া সৌদিকরণের সিদ্ধান্তে বিদেশি শ্রমিকদের গণহারে ছাঁটাইর আশঙ্কায় দেখা দিয়েছে। আগামী কয়েক বছরে ১০ লাখ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠাতে পারে দেশটি। রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস সম্প্রতি এক চিঠিতে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২০৩০ সালের মধ্যে নিজ নাগরিকদের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ বিদেশি কর্মীর জায়গা পূরণ বা সৌদিকরণের নীতি রয়েছে দেশটির সরকারের। এ কারণে আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ বাংলাদেশী কর্মী সৌদি আরবে চাকরি হারাতে পারেন।’

এক সাক্ষাৎকারে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ সৌদি শ্রমবাজারে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা সংক্রান্ত রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। এবং বলেন, ‘গার্ড বা দারোয়ানের চাকরিতে সৌদি নাগরিকরা যেতেন না। হোটেলে ক্লিনিং বা বলদিয়ার চাকরিতে (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) তারা যেতেন কম। এখন দারোয়ান, ক্লিনারের কাজেও তারা বেশ যাচ্ছেন। প্রায় শতভাগই সৌদি নাগরিকদের দখলে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশীরা ওই চাকরি থেকে ছিটকে পড়ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈধদের চাকরিচ্যুতির ধকল সামলাতে হয়তো ৩-৫ বছর সময় মিলবে। কিন্তু দেশটিতে থাকা আড়াই থেকে ৩ লাখ আন-ডকুমেন্টেড বা অনিয়মিত বাংলাদেশী রয়েছেন। তারা হয়তো বৈধভাবেই দেশটিতে প্রবেশ করেছেন, কিন্তু কফিল বা নিয়োগকর্তার কাজ না করে অন্যত্র কাজে যাওয়াসহ নানা কারণে তারা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। বৈধ শ্রমিকরা যে কোম্পানীতে বা কফিলের অধীনে কাজ করেন তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানেই। অনিয়িমিতদের সেই সুবিধা নেই। ফলে তারা এখন অর্থ এবং খাদ্য কষ্টে। করোনা উত্তরণের পরপরই অনিয়মিত বা অবৈধ বাংলাদেশীদের বড় অংশকে নিজে থেকেই হয়তো দেশে ফিরতে হবে।’

এদিকে আল জাজিরার একটি প্রতিবদনে বলা হয়েছে, ‘গত সোমবার সৌদি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই করোনা সঙ্কটে অর্থনৈতিক মন্দা রুখতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে তাদের কর্মচারীদের ৪০ শতাংশ বেতন কমিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই সৌদির আলমারাই এবং নেসমার মতো বড় কয়েকটি কোম্পানি এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে।’

কর্মচারীদের বেতন কমানোর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সৌদির নেটিজেনরা। তারা বলছেন, দরিদ্র কর্মচারীদের বেতন না কমিয়ে মন্ত্রী এবং উচ্চ পদস্থ কমকর্তাদের বেতন কমানো হোক। সাংবাদিক মুহাম্মদ বিশি টুইটার বার্তায় বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামানো কোম্পানিগুলো এই সঙ্কটে ৪০ কিংবা ২০ শতাংশ কমতি পূর্ণ করতে পারে না?’

তবে এই সিদ্ধান্তের কারণেও বিপাকে পড়বে বাংলাদেশীরা। একদিকে তাদের ছাটাই হবার আশঙ্কা, অন্যদিকে বেতন কমে যাওয়ার দুশ্চিন্তা। সব মিলিয়ে অস্থির এক সময় যাচ্ছে সৌদির শ্রমবাজারে। নিজেদের নাগরিকদের বেকারত্ব ঘুচিয়ে তাদের কর্মক্ষম করে তোলার ভিশন নিয়েছে সৌদি আরব। প্রতিটি কোম্পানিতে অন্তত ৭০ শতাংশ থাকবে নিজ দেশের কর্মচারী। ফলে বিরাট ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশী শ্রমিকরা। করোনা সঙ্কটের পর বিশাল এই ধাক্কা সামলাতে পারবে বাংলাদেশ?

অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থায় সরকারকে অবিলম্বে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করা উচিত। রাষ্ট্রদূতের চিঠিতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য বিকল্প শ্রমবাজার অনুসন্ধানে আফ্রিকার দেশগুলোতে তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে কৃষি, একুয়াকালচার, প্রাণিসম্পদ ও বিভিন্ন কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ বাংলাদেশীকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হতে পারে।

The post সৌদিতে অস্থির শ্রমবাজার : ঝুঁকিতে বাংলাদেশী শ্রমিকরা appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/2zjWgVi

No comments:

Post a Comment