Thursday, May 14, 2020

করোনায় শিক্ষা বিপর্যয় : কওমি শিক্ষাবোর্ডের নেই বিকল্প পরিকল্পনা

রাকিবুল হাসান :

করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দুটি বিকল্প পরিকল্পনার কথা ভাবছেন স্কুল-কলেজের নীতিনির্ধারকরা। একটি হলো- করোনার আক্রমণ শেষ হলে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া। সকল ছুটি বাতিল করে নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস শেষ করা। অপরটি হলো- ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী বছরের (২০২১) ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করা।

স্কুল-কলেজের মতোই বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে কওমি মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম। সাধারণত এক রমজানের পর থেকে আরেক রমজান পর্যন্ত থাকে তাদের শিক্ষাবর্ষ। রমজানের আগেই অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু এবার বার্ষিক পরীক্ষা নিতে পারেনি কোনো কওমি মাদরাসা। তার ওপর রমজানের পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদৌ খোলা যাবে কিনা—এই নিয়ে তৈরী হয়েছে সংশয়। যদি রমজানের পর শিক্ষাবর্ষ শুরু না করা যায় করোনার কারণে, এর বিকল্প কোনো পরিকল্পনা করছেন কওমির শিক্ষাবোর্ড বেফাক?

কথা হয় কওমি মাদরাসার শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহ-সভাপতি এবং হাইয়াতুল উলয়ার অন্যতম সদস্য মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজুর সঙ্গে। বোর্ডের বিকল্প কোনো পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আসলে গঠনমূলক তেমন কোনো আলোচনা হচ্ছে না। আশা করছি রমজানের পর মাদরাসাগুলো খুলে দেয়া হবে। যদি না খুলে দেয়া হয়, তখন বিকল্প পদ্ধতি বের করতে হবে। তবে একেবারেই যে পরিকল্পনা হচ্ছে না এমন নয়। খণ্ড খণ্ডভাবে আলোচনা হচ্ছে—রমজানের পর মাদরাসা খুলতে না পারলে অনলাইনে ক্লাস করানো যায় কিনা। কিন্তু এতে অনেক সমস্যা। যিনি ক্লাস করাবেন তার যেমন নেট সার্ভিস লাগবে, তেমনি যে ক্লাস করবে তারও নেট সার্ভিস লাগবে। আর সবার জন্য নেট সার্ভিস সুলভ নয়।’

স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে তাদের নীতিনির্ধারকেরা বিস্তর আলাপ-আলোচনা করছেন। সুনির্দিষ্ট কাঠামো পেশ করছেন। ছাত্ররা অবগত থাকছে, কখন তাদের কী হবে। কিন্তু কওমি মাদরাসা ছাত্রদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো কাঠামো নেই। তারা জানে না কখন মাদরাসা খুলবে।

এর কারণ কী—জানতে চাইলে মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু বলেন, ‘স্কুল-কলেজের শিক্ষাবোর্ড টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে আলাপ করছে, কনফারেন্স করছে। কিন্তু কওমি শিক্ষাবোর্ডে সেটা নেই। যে যার জায়গায় আবদ্ধ আছে। কারো সঙ্গে কারো তেমন যোগাযোগ নেই। পরস্পরের মধ্যে মতবিনিময় নেই। মতবিনিময় না হলে তো সুনির্দিষ্ট কাঠামো এবং প্রস্তাবনা উঠে আসবে না। ফলে ছাত্রদের সামনেও কোনো রূপরেখা, বিকল্প কোনো পরিকল্পনা পেশ করা যাচ্ছে না।’

কওমি মাদরাসার শিক্ষাবোর্ডে নীতিনির্ধারকদের পরস্পরের মধ্যে শিক্ষা-বিষয়ক মতবিনিময় না হওয়ার আরও একটি কারণ তুলে ধরেছেন বোর্ডের আরেক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বোর্ডে দায়িত্ব নিয়ে কেউ সভা ডাকবে, কনফারেন্স ডাকবে—এমন নেই। বরং প্রস্তাব তুললেই একজন আরেকজনের ওপর সোপর্দ করে দেন। ‘অমুককে জিজ্ঞেস করুন এবং অমুককে বলুন’ এর মতো শুভঙ্করের ফাঁদে পড়ে কিছু করা হয়ে উঠে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম—রমজানের পর মাদরাসা খুলে দিলে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কোনো প্রস্তুতি আছে মাদরাসাগুলোর? অকপটে তিনি বললেন, ‘সবাই মাদরাসা খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু কেউ বলছেন না—আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। মাদরাসা খুললে কারো সমস্যা হবে না। মাদরাসা খুলে দিন। প্রস্তুতি ছাড়াই যদি মাদরাসা খুলে, আর কেউ যদি আক্রান্ত হয়, পুরো দায়টা আসবে মাদরাসার ওপর। হয়রানি তখন চরমে পৌঁছবে। মাদরাসা খোলার আগে অন্তত কোন কাঠামোতে চললে স্বস্থ্যবিধি মানা যাবে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

কওমি মাদরাসার শিক্ষাবোর্ডে মূলত সঙ্কটকালীন শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে বিকল্প কোনো পরিকল্পনা নেই। ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে আশার প্রহর গুণছেন নীতিনির্ধারকেরা। ইতোমধ্যে কয়েকটি মাদরাসা তাদের নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। বিকাশ নম্বরে ভর্তি ফি পাঠিয়ে ভর্তি কনফার্ম করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত নয়। এভাবে যে মাদরাসা ভর্তি আহ্বান করেছে, এটা তাদের একান্ত সিদ্ধান্ত।

The post করোনায় শিক্ষা বিপর্যয় : কওমি শিক্ষাবোর্ডের নেই বিকল্প পরিকল্পনা appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/3fKYkqd

No comments:

Post a Comment