ফাতেহ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে আরও কঠোর হচ্ছে সরকার। এখন থেকে মাস্ক না পরলে সর্বোচ্চ জরিমানা করা হবে। এভাবে দেখা হবে ৭ থেকে ১০ দিন। এরপরও মাস্ক না পরলে কারাদণ্ডের বিধান কার্যকর করা হতে পারে। এছাড়া অক্সফোর্ডের তিন কোটি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বিতরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
এর আগে গত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, সপ্তাহখানেক দেখা হবে। তারপর জরিমানা বাড়ানো হবে। এরপর থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
গতকাল খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এখন থেকে বেশি জরিমানা এবং কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের “শক্ত অবস্থানে” যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আগেই আমরা বলেছি, এ সপ্তাহ থেকে আরেকটু স্ট্রং অ্যাকশনে যাব। আমার মনে হয়, ঢাকার বাইরে কিছুটা পজিটিভ। ডিসিরা বলছেন, জেলা সদরে মানুষ মোটামুটি কেয়ারফুল হচ্ছে। ঢাকা শহরে বোধহয় এখনো পুরোপুরি কেয়ারফুল হয়নি, তবে মোটামুটি একটা বার্তা যাচ্ছে যে ফাইন হয়ে যাবে, ফাইন দিতে হবে ৫০০ টাকা। বলে দিয়েছি, এখন থেকে ম্যাক্সিমাম ফাইন করো, না হলে আমরা আরও ইনস্ট্রাকশন দেব, বলেছি সর্বোচ্চ জরিমানা করতে।’
তারপরও মাস্ক না পরলে কী হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তারপরে জেলে যেতে হবে আর কী করবে না যদি শোনে। আমরা তো ঝুঁকি নিতে পারি না, আমাদের যতটুকু সম্ভব করতে হবে, আমরা বলে দিয়েছি।’
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে বাসার বাইরে সব জায়গায় সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে সরকার। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে প্রতিদিনই মানুষ মারা গেলেও নানা অজুহাতে এখনো অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে : ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া অক্সফোর্ডের তৈরি করোনাভাইরাসের তিন কোটি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘অক্সফোর্ডের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সেরাম ইনস্টিটিউট।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর অক্সফোর্ডের তৈরি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ভ্যাকসিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিন কোটি ডোজ বিক্রির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, সেরাম ইনস্টিটিউট এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর অর্থ বিভাগ ভ্যাকসিন কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থনৈতিক ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠাবে।’
ভ্যাকসিন কারা পাবে জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা গাইডলাইন আছে। প্রথম কারা পাবে, দ্বিতীয় ধাপে কারা পাবে সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটা প্রোগ্রাম ডেভেলপ করছে। ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, পুলিশ, প্রশাসনের লোক যারা মাঠে চাকরি করছে, তারপর বয়স্ক লোক, শিশু এরকম একটা প্রটোকল আছে। মানুষকে এ ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেওয়া হবে। টাকা সরকার পে করে দিচ্ছে। তিন কোটি ভ্যাকসিন ফ্রি দেওয়া হবে।’
ভ্যাকসিন বিতরণ নিয়ে কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সরকার কত টাকায় ভ্যাকসিন কিনছে জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘ক্রয় চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।’
অন্যান্য ভ্যাকসিনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আরও অনেকগুলো ভ্যাকসিনের বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যোগাযোগ রাখছে। এখনই বলা যাচ্ছে না কোনটা বেশি ইফেকটিভ হবে। আমাদের এক নম্বর কন্ডিশন হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মানতে হবে।’
চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের টিকার ট্রায়াল হওয়ার কথা ছিল, সেটি কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা রিজেক্ট করিনি। ওরা একটা টাকা চাচ্ছে। সরকার এখনো দেয়নি বা রাজি হয়নি। আমরা সেটা এখনো বাতিলও করিনি। প্রথমে টাকা চায়নি, পরবর্তীতে টাকা চাচ্ছে।’
৯৯৯ নম্বরে মিথ্যা তথ্য দিলে শাস্তি : জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করলে শাস্তির বিধান রেখে এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ৯৯৯ অপারেট করার জন্য পুলিশের একটি আলাদা ইউনিটও গঠন করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে সেবা পাওয়ার বিষয়টি আরও কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। জনজীবনের সফলতা ও সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করে ইমার্জেন্সি সার্ভিস পলিসি ৯৯৯ তথা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপত্তা, জীবন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বির্নিমাণে জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংকটাপন্ন মানুষকে যাতে সহায়তা করা যায়, দুর্ঘটনা ও অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়। অপরাধের শিকার কোনো ব্যক্তি বা সম্পদ উদ্ধার করা যেন সহজ হয়। দুর্ঘটনায় নিপতিত মানুষকে যাতে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা এবং জানমালের উদ্ধারসহ দ্রুততম সময়ে যাতে দুর্গতদের হাসপাতালে পাঠানো ও সেবা দেওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নামে একটি ইউনিট গঠিত হবে। এতে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা যিনি জাতীয় জরুরি সেবার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হবেন। ৯৯৯ নম্বরে যদি কেউ মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয় তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে অভিহিত হবে। কেউ যদি না বুঝে এ কাজ করে সেটা কনসিডার করা হবে। তবে ইচ্ছা করে যদি কেউ চিট করতে চায় “দ্যাট উইল বি পানিশ্যাবল”। সেজন্য রেসপেকটিভ আইন প্রযোজ্য হবে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার শাস্তি পেনাল কোডে আছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কে কোথা থেকে কল করছে, সেটা টোটালি ডিটেক্টের ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং কেউ সহজে ফলস কল করতে যাবে না। জরুরি সেবার যে নম্বরগুলো আছে যেমন ৩৩৩, ১০৯ এগুলো সব ইন্টার অপারেটিভিটি হয়ে যাবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘জরুরি সেবার যেকোনো একটা নম্বরে কল করে যদি কেউ বলে এখানে ডাকাত পড়েছে ওখানে অটোমেটিক্যালি কানেকটেড হয়ে যাবে।’
নীতিমালার ফলে এটা এখন আরও অরগানাইজড ওয়েতে হবে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সবার সঙ্গে ইন্সট্যান্ট একটা কমিউনিকেশন সিস্টেম থাকবে।’
বালু উত্তোলনে নীতিমালা হচ্ছে : মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে একটি নীতিমালা হচ্ছে। এজন্য ভূমি সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যে কেউ ইচ্ছেমতো বালু উত্তোলন করতে পারবেন না। নির্ধারিত ঠিকাদার নির্ধারিত পরিমাণ বালু উত্তোলন করতে পারবেন। কোথায় কোথায় বালুমহাল থাকবে, সেটিও চিহ্নিত করে দেওয়া হবে।
The post মাস্ক না পরলে জেল appeared first on Fateh24.
from Fateh24 https://ift.tt/2VhT8Bj
No comments:
Post a Comment