Thursday, July 9, 2020

খুলছে হেফজখানা : যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

রাকিবুল হাসান:

করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা দেশের হাফিজিয়া মাদরাসা এবং হেফজখানার শিক্ষা কার্যক্রম আবার খুলে দেয়া হচ্ছে। আগামী ১২ জুলাই থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালুর অনুমতি দিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুমতির কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হাফেজিয়া মাদরাসা/হেফজখানাও বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কোরান মুখস্ত করার এসব প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন অধ্যাবসায়ের আবশ্যকতার কথা উল্লেখ করে এর কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে হাফেজিয়া মাদরাসা/হেফজখানার কার্যক্রম আগামী ১২ জুলাই থেকে চালু করার অনুমতি দেওয়া হলো। এসব প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম পরিচালনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি আবশ্যিকভাবে অনুসরণ করতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তেই হেফজখানা খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মাদরাসার কর্তৃপক্ষগণ। শুরু হয়ে গেছে গেছে তোড়জোড়। কিভাবে সর্বোচ্চ সচেতনতা বজায় রাখা যায়, তার বন্দোবস্ত করছেন তারা।

মুঠোফোনে কথা হয় মাদানীনগরে অবস্থিত মারকাযুশ শায়খ ইদরিস লিল উলুমিল ইসলামিয়ার পরিচালক মাওলানা মুফতি ইলিয়াস খানের সঙ্গে। মাদরাসার হেফজখানাকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত করার কাজে ব্যস্ত তিনি। কিভাবে কী করছেন জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘মাদরাসা খোলার আগেই পুরো মাদরাসাকে আবার জীবানুনাশক স্প্রে ছিটিয়ে, সেভলন দিয়ে ধুয়ে প্রস্তুত করবো। ছাত্ররা এসে যেন নিরাপত্তা বোধ করে। মাস্ক,হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখবো।’

ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার পরিকল্পনা কিভাবে করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা ইলিয়াস খান বলেন, ‘এখন শুধু হেফজখানা খুলছে। কিতাবখানা খুলছে না। সুতরাং মাদরাসার বিরাট একটা অংশ ফাঁকা। ছাত্রদের মাঝে নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেসব রুম ব্যবহার করবো। যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই তাদের বসানো হবে, ঘুমাতে দেয়া হবে। এরমধ্যে কারো যদি সর্দি, জ্বর, কাশি ইত্যাদি সিম্পটম দেখা দেয়, তাকেও আলাদা করে ফেলবো। সেই ব্যবস্থাপনাও রাখছি।’

ছাত্রদের খাবার এবং গার্ডিয়ানদের সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদেরকে মাদরাসায় ঢুকানোর পর আর বের হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। তেমনি শিক্ষকদেরও। তাদের কিছু প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট একজন থাকবেন, তিনি গিয়ে নিয়ে আসবেন। বাবুর্চিকে যেহেতু বাজারে যেতে হবেই, তাকে পূর্ণ আলাদা করে রাখা হবে। আমাদের পরামর্শ থাকবে—অন্তত ঈদের আগ পর্যন্ত কোনো গার্ডিয়ান যেন ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে না আসেন। তবুও যদি কেউ আসে, তাকে মাদরাসায় ঢুকতে দেয়া হবে না। ছাত্রকেও তিনি বাইরে নিয়ে যেতে পারবেন না। তিনি গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে তার সন্তানের সঙ্গে কথা বলবেন।’

মাদরাসার কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে কঠোর হবার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মাসিহুল্লাহ। হেফজখানার ছাত্রদের কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘সবাইকে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রত্যেক ছাত্র একসঙ্গে অনেকগুলো মাস্ক নিয়ে মাদরাসায় ঢুকবে। মাদরাসা থেকে তাদেরকে বের হতে দেয়া যাবে না। হেফজখানার শিশুরা একে অপরের সঙ্গে দুষ্টুমি করে, খেলাধুলা করে, হৈ-হল্লা করে। এটা কমাতে হবে। ক্লাসে বসা, ঘুমানো ইত্যাদি বিষয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।’

ছাত্রদের খাবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক হেফজখানায় বড় একটি চারপাঁচজনকে খেতে দেয়া হয়। এমনটা এখন করা যাবে না। ছাত্র বেশি হলে খাবারের শিফট করা যেতে পারে। ধরুন, দুপুরের খাবার তিন শিফটে ভাগ করা হলো। এক শিফটে ১০ জন, দ্বিতীয় শিফটে ১০ জন, তৃতীয় শিফটে ১০ জন। তাহলে নিরাপদ দূরত্বও বজায় থাকলো, খাবারেও সমস্যা হলো না। মাদরাসায় জায়গায় জায়গায় রাখতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। টয়লেট থেকে বের হতে, অজু করতে এগুলো ব্যবহার করতে হবে। যিনি বাবুর্চি থাকবেন, তাকে অবশ্যই অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।’

তবে শিশু এবং বাচ্চাদের করোনায় আক্রান্ত হবার হার কম বলেই উল্লেখ করেছেন ডা. মাসিহুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘শিশুদের করোনাক্রান্ত হবার হার খুবই কম। তবুও যদি তাদের সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে আলাদা করে ফেলতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে।’

শিক্ষার প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে হেফজখানা খুললেও ছাড় দেয়া যাবে না স্বাস্থ্য সচেতনতায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য—শিশুরা যেহেতু স্বাস্থ্যসচেতন কম, তাই পূর্ণ দায়িত্বটা নিতে হবে মাদরাসার শিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষের। ছাত্রের সংখ্যা অনুযায়ী সাজাতে হবে পরিকল্পনা। তবেই সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়ে উঠবে।

The post খুলছে হেফজখানা : যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/3e6HtMA

No comments:

Post a Comment