Friday, July 17, 2020

সীমিত আকারে হজ্ব : কার কী মন্তব্য?

রাকিবুল হাসান:

এবার হজ্বের চিত্রটা হবে একটু ভিন্ন। কোনো দেশ থেকে উড়বে না মক্কা-মদীনাগামী বিমান। কোনো বিমানবন্দরে ভাসবে না তালবিয়ার মধুর ধ্বনি। ভীড় থাকবে না কাবায়, হুড়োহুড়ি থাকবে না হাজরে আসওয়াদকে ঘিরে। মিনার মাঠ, মুজদালিফার ময়দান খালি থাকবে পুরোটুকোই। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর সীমিত আকারে পবিত্র হজ্ব আয়োজন করছে সৌদি সরকার। দেশটির হজ্ব মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়, শুধু সৌদি আরবে বসবাসরতরাই এবারের হজ্বে অংশ নিতে পারবেন। বিভিন্ন দেশের মুসলিম যারা বর্তমানে সৌদি আরবে বসবাস করছেন ওইসব সীমিত সংখ্যক হাজিদের নিয়েই এবারের হজ্ব অনুষ্ঠিত হবে।

সৌদি আরবে বসবাসরত সীমিত সংখ্যক হাজি নিয়ে হজ্ব আয়োজনের এ সিদ্ধান্তে বিভিন্নরকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলো। কেউ সৌদি আরবের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, কেউ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে, কেউ কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে তাদের সবার মন ও মননে ছেয়ে আছে দুঃখ, ভর করে আছে বিষাদ। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে সেই দুঃখ সমর্পণ করা ছাড়া তাদের আর কোনো গতি নেই।

সৌদির হজ্ব সীমিতকরণ সিদ্ধান্তে মুসলিম দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, তারা তাদের হাজিদের সঙ্গে কিভাবে বিষয়টির সুরাহা করেছে, নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।

বাংলাদেশ

সৌদির হজ্ব সীমিতকরণ সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা মহামারীর কারণে এবার বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ্বে অংশ নিতে না পারলেও নিবন্ধিতরা চাইলেই টাকা ফেরত দেয়া হবে।

হজ্ব এজেন্সিগুলো বলছে, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলেই টাকা ফেরত দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে এবং আবার হজ্বে যেতে আরো দু’বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে। যারা টাকা ফেরত নেবেন না, ২০২১ সালে হজ্বে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।

হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যেসব হজ্ব যাত্রীরা ২০২০ সালে নিবন্ধন করেছেন, তারা এ বছর হজ্বে যেতে পারবেন না। তবে ২০২১ সালে তারা সকলেই অগ্রাধিকার প্রেক্ষিতে যেতে পারবেন।

এবার বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত ৬১ হাজার ১৪২ জনের কাছ থেকে বিমান ভাড়া , মুয়াল্লেম ও নিবন্ধন ফি বাবদ জনপ্রতি ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৪২ টাকা হিসেবে মোট ১ হাজার ১১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। তবে সরকারিভাবে নিবন্ধিত ৩ হাজার ৪৫৭ জনের কাছ থেকে প্যাকেজ অনুসারে পুরো টাকাই নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

তুরস্ক

সৌদির হজ্ব সীমিতকরণ সিদ্ধান্তের পর তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, এ বছর লটারিতে যারা হজ্বে যাবার অনুমতি পেয়েছে, তাদের এই অনুমতি বহাল থাকবে। নিবন্ধনের জন্য দেয়া তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া হবে। ২০২১ সালে এ বছরের নিবন্ধিত হাজিরা অগ্রাধিকার পাবে কোনো তদবির ছাড়াই।

হজ্বে যাবার জন্য তুরস্কে আবেদন জমা পড়েছে এক মিলিয়ন। লটারি করে তাদের মধ্যে ৮৩ হাজার ৪৩০ জনকে বেছে নিয়েছিল তুরস্ক।

মরক্কো

তুরস্কের মতোই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মরক্কো। দেশটির হজ্ব ফর রয়্যাল কমিশন জানিয়েছে, লটারিতে এ বছর যারা হজ্বে যাবার অনুমতি পেয়েছিল, তাদের এই অনুমতি বহাল থাকবে। নিবন্ধনের জন্য দেয়া তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া হবে। ২০২১ সালে এ বছরের নিবন্ধিত হাজিরা অগ্রাধিকার পাবে কোনো তদবির ছাড়াই।

ইরান

সৌদির হজ্ব সীমিতকরণ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ইরানের হজ্ব ও ওমরা ফাউন্ডেশন। এই সিদ্ধান্তকে তারা ‘অনুচিত’ বলে মন্তব্য করেছে।
এক বিবৃতিতে ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ইসলামি দেশগুলো অপেক্ষা করছিল সৌদি করোনার প্রেক্ষিতে তাদের সঙ্গে কথা বলবে। করোনা মোকাবেলায় তাদের পরামর্শ, আইডিয়া, চিন্তাভাবনাগুলো শুনবে। তাদের পরামর্শগুলো আমলে নিয়ে পরিকল্পনা করবে।

ইরান হজ্ব ফাউন্ডেনশনের প্রধান আলী রেজা রশিদিয়ান আগে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, এই বছর হজ্ব আয়োজন সম্পর্কে ফাউন্ডেশনের চিঠি এবং মেইলের কোনো জবাব দেয়নি রিয়াদ।

মিশর

হজ্ব সীমিতকরণ সিদ্ধান্তের জন্য সৌদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মিশরের প্রধানমন্ত্রী। শুকরিয়া জানিয়ে বলেছেন, সৌদির সিদ্ধান্ত মাকাসেদে শরিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই মুহূর্তে জীবন রক্ষাকেই গুরুত্ব দিতে হবে।

মিশরের সামাজিক সংহতিমন্ত্রী নেভিন আল কাবাজ বলেছেন, এ বছর যারা হজ্বের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে না। আগামী হজ্বে তারা অগ্রাধিকার পাবে।

রাশিয়া

সৌদির হজ্ব সীমিতকরণ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়ার ইফতা কাউন্সিল।

এক বিবৃতিতে রশিয়ার মুফতি কাউন্সিলের উপ-চেয়ারম্যান রওশন আবিয়াসভ বলেছেন, গ্র্যান্ড মুফতি শেখ রাফেল আইনুদ্দিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার ইফতা কাউন্সিল সৌদির হজ্ব সীমিতকরণ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে। এ বছর হজ্বে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা হাজিদের আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মিশর, ইন্দোনেশিয়া

মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের নগারিকদের এবছর হজ্বের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার অনুমতি দেবে না বলে জানিয়েছে আগেই। হজ্ব পালন করতে গিয়ে নাগরিকদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া থেকে প্রতিবছরই বহু মানুষ হজ্ব করতে সৌদি আরবে যান। এবছর মালয়েশিয়ার আনুমানিক ৩০ হাজার মানুষের হজ্ব করতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলিমের দেশ ইন্দোনেশিয়া আগেই জানিয়েছে তারা এবছর তাদের নাগরিকদের হজ করতে যাওয়ার অনুমতি দেবে না।

আগামী বছরের অপেক্ষা

সৌদির হজ্ব সীমিতকরণ সিদ্ধান্ত বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মুসলিমের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে। সবাই অপেক্ষা করছিলো বাইরের দেশ থেকে অল্প হলেও হাজিদের হজ্ব করতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। টাকা জমা দিয়ে তুলে নিতে হচ্ছে সেই টাকা। হজ্বের প্রসঙ্গ এলে যেন ভাইরাসের ভয় কেটে যাচ্ছে, সাহস বেড়ে যাচ্ছে। রিয়াদে বসবাসরত জর্দানের নাগরিক আহমদ আল খুরি আল জাজিরাকে বলছিলেন, ‘হজ্ব বাতিল না করলেও পারতো। করোনা ভাইরাসটির গতিপ্রকৃতি আগের তুলনায় অনেক বেশি বোঝা যাচ্ছে। এটা চিকিৎসাযোগ্য।’

তবে বিশ্ব মুসলিমরা তাদের যাবতীয় হতাশা, দুঃখ, নিদারুণ কষ্ট সমর্পণ করছে আল্লাহ তায়ালার কাছে। ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ইয়াহইয়া আল জাজিরাকে বলছিলেন, ‘এ বছর হজ্বে যেতে পারবো না। কিছু করার নেই। এটাই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে। তার কাছেই নিবেদন করছি সবকিছু।’

বাংলাদেশের আখলাকুর রহিম ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘হজ্বে যাবার জন্য টাকা দিয়েছি। চাইলে টাকা তুলতে পারি। কিন্তু টাকা তুললে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে। তাই টাকা তুলিনি। আগামী বছর হজ্বে যাব।’

The post সীমিত আকারে হজ্ব : কার কী মন্তব্য? appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/399IClM

No comments:

Post a Comment