Tuesday, July 14, 2020

খুলেছে হেফজখানা : যেভাবে চলছে কার্যক্রম

রাকিবুল হাসান:

সরকারি অনুমতি পাওয়ার পর ১২ জুলাই থেকে খুলেছে দেশের হেফজখানাগুলো। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবাই যথাসম্ভব চেষ্টা করছেন। কারো জ্বর, সর্দি কিংবা কাশির সিম্পটম পাওয়া গেলে আলাদা করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রয়োজন হলে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তবে কয়েকটি মাদরাসার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো সব অভিভাবকরা আশ্বস্ত নন। কেউ কেউ আরও কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তবেই সন্তানকে মাদরাসায় পাঠাতে চান।

কথা হয় জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসার হেফজখানার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা জাবেদ হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেক অভিভাবক এখনো পূর্ণ আশ্বস্ত নন। তারা আর কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করে তারপর সন্তানকে মাদরাসায় পাঠাতে চান। এমন একটা সময় মাদরাসা খুলেছে, যখন ঈদের বাকি মাত্র দশ-পনেরো দিন। দূর থেকে যারা আসছে, তাদের গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। মাদরাসায় আসা, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া, ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে আসা—সব মিলিয়ে বিরাট খরচ। তাই অনেক অভিভাবক একসঙ্গে ঈদের পরেই সন্তানকে মাদরাসায় দিবেন।’

ফরিদাবাদ মাদরাসায় স্বাস্থ্যবিধি কিভাবে মানা হচ্ছে জানতে চাইলাম। হাফেজ জাবেদ হাসান বললেন, ‘স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটারাইজার জায়গায় জায়গায় রাখা আছে। ছাত্ররা ব্যবহার করছে। খাবার আগে-পরে আমরা স্প্রে করছি। কাউকে বাইরে যেতে দিচ্ছি না। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসে বসাচ্ছি, ঘুমুতে দিচ্ছি। কারো কিছু দরকার হলে আমাদেরকে এসে বলে, আমরা লিখে রাখি। পরে কাউকে পাঠিয়ে সবার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে আসি। কারো মধ্যে সর্দি, জ্বরের লক্ষণ দেখতে পেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। আজ সকালে একজন ছাত্রকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। তার জ্বরের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল।’

কোনো কোনো অভিভাবক আশ্বস্ত হতে না পারলেও আশ্বস্ত হতে পারা অভিভাবকের সংখ্যা কম নয়। তারা মাদরাসাকেই নিরাপদ মনে করছেন। উম্মুল কুরা খুলনার পরিচালক মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মতভাবেই আমরা মাদরাসাকে প্রস্তুত করেছি। অভিভাবকদের বলে দিয়েছি—মাদরাসার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দেখে যদি আশ্বস্ত হন, তাহলে ফরমে স্বাক্ষর করে সন্তানকে দিয়ে যেতে পারেন। অনেকেই নিজ হাতে স্বাক্ষর করে সন্তানকে দিয়ে যাচ্ছেন।’

কেমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কথা বলছেন? মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম বললেন, ‘প্রতিদিনই আমরা তাপমাত্রা পরীক্ষা করছি। সপ্তাহে একবার ডাক্তার দেখাবো। স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটারাইজার তো আছেই। যেহেতু মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদে ডাক্তারও আছেন, তাই তার পরামর্শ মতোই করছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে খরচ একটু বেশি করতে হচ্ছে। করতে হলেও আমরা করে যাব। ছাত্রদেরকে নিয়ে আমরা অবহেলা করবো না।’

প্রাইভেট হেফজখানাগুলোতে এখনো তেমন ছাত্র-উপস্থিতি নেই। খরচে বিভিন্ন ফর্দের কথা চিন্তা করে অভিভাবকগণও একটু পিছিয়ে আছেন। একবারে ঈদের পরেই সন্তানকে মাদরাসায় পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন অনেকে। মিরপুরে অবস্থিত মাদরাসাতুল মারওয়ার পরিচালক মাওলানা মাঈনুদ্দিন ওয়াদুদ বলেন, ‘প্রাইভেট মাদরাসাগুলো চলে ভাড়া বাড়িতে। তাই ছাত্রদের খাবার খরচের পাশাপাশি আবাসন ফি দিতে হয়। অনেক অভিভাবক মনে করছেন, ঈদের বাকি আর কদিন। এখন মাদরাসায় সন্তান পাঠালে ফি পরিশোধ করতে হবে। তাই তারা মাদরাসায় সন্তান পাঠাচ্ছেন না। আমরা মাদরাসার ফি-বেতন অর্ধেক করে দিয়েছি।’

অন্যদের মতো মাওলানা মাঈনুদ্দিন ওয়াদুদও তার মাদরাসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। তিনি ঈদের আগে বাইরের কারো সঙ্গে ছাত্রদের দেখা করা নিষেধ করে দিয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেবল আবাসিক ছাত্রদেরই মাদরাসায় রাখছেন। অনাবাসিক কাউকে মাদরাসায় আসার অনুমতি দিচ্ছেন না। তবে হেফজখানাগুলো খুলে যাওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন অনেক অভিভাবক। তাদের ভাষ্য—দীর্ঘদিন ছুটি থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা কুরআন হেফজ ভুলে যাচ্ছিলো। মাদরাসা খুলে যাবার কারণে ভুলে যাওয়ার বিপদ কাটবে।

The post খুলেছে হেফজখানা : যেভাবে চলছে কার্যক্রম appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/30ety1R

No comments:

Post a Comment