Tuesday, July 14, 2020

করোনায় দেশে ১২ আর উপসর্গ নিয়ে ৯ সাংবাদিকের মৃত্যু: দ্য টেলিগ্রাফ

ফাতেহ ডেস্ক:

নভেল করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে ১২ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। এ ছাড়া আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ভাইরাসটির উপসর্গে।

এ নিয়ে করোনাকালে দেশে অন্তত ২১ জন সাংবাদিকের প্রাণ গেল। স্থানীয় সূত্রে এ খবর দিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির মতে, দেশের স্বাস্থ্যপেশায় জড়িতদের তুলনায় সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের মৃতের সংখ্যা অনেক কম। তবে এ পরিসংখ্যান বলে সাংবাদিকতা পেশায় ভাইরাসটি বড় ধরনের আঘাত হেনেছে।

সামনের সারিতে থেকে মহামারির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবকে এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

ঢাকার স্বেচ্ছাভিত্তিক গ্রুপ আওয়ার মিডিয়া, আওয়ার রাইট জানায়, পুরো দেশে ৫৭৪ জন সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

যুমনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার আখলাকুস সাফা জানান, করোনাকালে সব ধরনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে এপ্রিলে কভিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দেয় তার শরীরে।

তিনি বলেন, যখন কভিড টেস্ট করাই আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, এখনো একই অবস্থা। কাজ করতে গিয়ে শুরু থেকেই মাস্ক এবং গ্লোবসের মতো সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব ছিল।

এ ছাড়া তার অফিসে অল্প দূরত্বে বসে তাদের কাজ করতে হয়ে। এতে এই সাংবাদিক ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন, আরও মানুষকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারেন তিনি।

সাংবাদিক সাফা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে অফিসের ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট প্রস্তুতির অভাব ছিল।

এ ছাড়া সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রত্যক্ষদর্শী হওয়া থেকে শুরু করে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় মানসিক চাপের মধ্যে যেতে হয় তাকে।

তবে যমুনা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকন (৪৭) করোনায় মারা যান। তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা রিনা এবং ছেলেও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হন।

সুলতানা রিমা বলেন, যারা কাউকে হারিয়েছেন তারাই এই বেদনা বুঝতে সক্ষম। সন্তানকে নিয়ে আমি তার দাফনের সময় থাকতে পারিনি, যেহেতু আমরাও আক্রান্ত।

পরিবারের একমাত্র উপর্জনকারী ব্যক্তি হারিয়ে ভবিষ্যত নিয়ে তিনি এখন চিন্তিত।

সাংবাদিক খোকনের স্ত্রী বলেন, ঘরভাড়া, খাওয়াদাওয়াসহ পরিবারের অন্যান্য খরচ আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কিছু মানুষ আমার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট নয়। সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবের জন্য ব্যবস্থাপনাকেই আমি দায়ী করছি।

এদিকে সময়ের আলো কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের অনেক কর্মী ঘর থেকে কাজ করছিলেন এবং সংবাদ সংগ্রহে থাকা প্রতিবেদকদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) দিতে চেষ্টা করেছেন তারা।

পত্রিকাটির নিউজ কোঅর্ডিনেটর আলমগীর হোসাইন বলেন, ওই সময় অফিসিয়াল পিপিইর অভাব ছিল। মাঠ পর্যায়ে থাকা কর্মীদের জন্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে আমরা কিছু পিপিই পেয়েছিলাম।

তিনি জানান, তারা প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থে এত বিপজ্জনক হয়ে উঠবে সেটি তারা বুঝতে পারেননি।

আলমগীর বলেন, আমরা কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারি সেটি খোকনের মৃত্যুর আগে বুঝেনি। এমনকি খোকন নিজেও বুঝতে পারেননি যে, তার মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে। এটি আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা আমাদের সহকর্মীকে হারিয়েছি।

আওয়ার মিডিয়া, আওয়ার রাইট এর কোর্ডিনেটর আহমদ ফয়েজ জানান, নিয়োগকর্তাদের উচিত ছিল আরও গুরুত্বের সঙ্গে সাংবাদিকদের দায়িত্ব নেয়া, যেহেতু হাসপাতালসহ অন্যান্য জায়গায় সামনের সারিতে থেকে সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন তারা।

বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ১৮৬ জন সাংবাদিক করোনা মহামারিতে মারা গেছেন। জেনেভাভিত্তিক প্রেস এমব্লেম ক্যাম্পেইন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

পেরুতে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে মারা গেছে ৩৭ জন সংবাদকর্মী। এরপর ব্রাজিলে মারা গেছেন ১৬ জন।

The post করোনায় দেশে ১২ আর উপসর্গ নিয়ে ৯ সাংবাদিকের মৃত্যু: দ্য টেলিগ্রাফ appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/2Zoe8cm

No comments:

Post a Comment