রাকিবুল হাসান:
করোনা প্রকোপের সঙ্গে বাড়ছে কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের অর্থ সঙ্কট। তিনমাস ধরে বেতন না পাওয়ায় সঙ্কটের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছেন তারা। যারা কেবল মাদরাসার বেতনের ওপরই নির্ভর ছিলেন, তীব্র হচ্ছে তাদের হাহাকার। কিন্তু এত দীর্ঘ সঙ্কটে এখনও শিক্ষকদের হাতে অর্থ সাহায্য তুলে দিতে পারেনি কওমি মাদরাসার শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।
গত এপ্রিলে সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশের কওমি মাদরাসার জন্য ঘোষণা করা হয় আর্থিক প্রণোদনা। কিন্তু বেফাক প্রণোদনা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ২৬ এপ্রিল অসুবিধাগ্রস্ত শিক্ষকদের সাহায্য করতে নিজেরাই একটি কল্যাণ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয় বেফাক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এর উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সারাদেশে অসংখ্য কওমি মাদরাসা। সেসব মাদরাসার সাময়িক অসুবিধায় পড়া শিক্ষকদের তালিকা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলার তালিকা বেফাকের হাতে এসেছে। সারাদেশে তালিকা সংগ্রহের কাজ এখনো চলমান। অফিস খুললে অনুদান কার্যক্রমটি ত্বরান্বিত হবে।
গত ৩১ মে খোলা হয়েছে সব অফিস-আদালত। বেফাকের অনুদান কার্যক্রমের অগ্রগতি জানতে চেয়েছিলাম বেফাক এবং হাইয়াতুল উলইয়ার উচ্চ কমিটির সদস্য মাওলানা মাহফুজুল হকের কাছে। ফাতেহ টুয়েন্টি ফোরকে তিনি জানালেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে অনুদান পাবার উপযুক্ত শিক্ষকদের পুরো তালিকা এসে এখনো পৌঁছায়নি। আমরা তাগাদা দিচ্ছি তালিকাগুলো যেন ঝটপট পাঠানো হয়। তালিকা দুএকদিনের ভেতর এসে যাবে। দু’তিনদিন পর বেফাকের মুরুব্বিদের একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে পরবর্তী কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
কল্যান তহবিলে কত টাকা জমা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘এখনো সঠিক অংকটা আমি জানি না। বৈঠকে বসলেই জানতে পারবো। বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে—অনুদান কিভাবে ডিস্ট্রিবিউট করা হবে।’
বেফাক থেকে অনুদান প্রত্যাশীদের ‘অনুদান ফরম (শিক্ষক)’ ফরম পূরণ করতে হচ্ছে। তবে ফরমের নিচে লিখে দেয়া হয়েছে, ‘মাদরাসা কর্তৃপক্ষ চাইলে বেফাক প্রদত্ত অনুদানকে বেতনের সাথে সমন্বয় করতে পারবে।’ অনুদান ফরমের এই ফুটনোট থেকে প্রশ্ন জাগে—বেফাক মাদরাসাকে অনুদান দিচ্ছে, নাকি শিক্ষকদের? ফরম থেকে বুঝা যায়, শিক্ষকদের অনুদান দেয়া হচ্ছে। ‘বেতনের সাথে সমন্বয়’ ফুটনোট থেকে বুঝা যায়, অনুদান দেয়া হচ্ছে মাদরাসাকে। মাদরাসা চাইলে শিক্ষককে এটা অনুদান হিসেবে দিতে পারে। আবার চাইলে বেতন হিসেবেও দিতে পারে।
প্রশ্নটির জবাবে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘অনুদানটাকে সমন্বয় করা হয়েছে। সব মাদরাসার আর্থিক সামর্থ্য এক না। কোনো কোনো মাদরাসা পরিস্থিতি ঠিক হলেও বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে পারবে না। তারা চাইলে বেফাকের অনুদানটাকে তাদের বেতন হিসেবে শিক্ষকদেরকে দিতে পারেন। আবার কোনো কোনো মাদরাসা বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে পারবে। তারা চাইলে বেতন হিসেবে না দিয়ে শিক্ষকদেরকে অনুদান হিসেবেই দিতে পারেন। দুটোর সমন্বয় করার জন্যই ফুটনোট যুক্ত করা হয়েছে।’
তবে কেন্দ্রীয় বোর্ডে তালিকা পাঠাতে মাদরাসাগুলোর এত সময় লাগার কারণটা অস্পষ্ট। মাওলানা মাহফুজুল হকের দাবি, ‘অনেকে ইমেইলে তালিকা পাঠিয়েছেন। হাতে লেখার কারণে তালিকা অস্পষ্ট। ফিরতি মেইলে নতুন করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।’ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছেন, বোর্ড পরিচালনা এবং মাদরাসা তদারকিতে তথ্যপ্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার করা হলে এই সমস্যাটা তৈরী হতো না। লকডাউনে পুরো বিশ্ব যখন অচল, প্রযুক্তির ব্যবহারেই বড় বড় সব কাজ সমাধা হচ্ছে। কওমি শিক্ষাবোর্ডকে এই ব্যাপারে আরও সতর্ক হবে। আরও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
যেভাবেই হোক, তৈরী হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। হাতে হাতে অনুদান পৌঁছতে সময় লাগবে আরও। অনুদানটুকু কেউ পাবে অনুদান হিসেবে। আবার কেউ পাবে বেতন হিসেবে। তবে যতদ্রুত পৌঁছানো যাবে, ততই উপকার হবে শিক্ষকদের।
The post চতুর্থ মাসে মহামারী: শিক্ষকদের কাছে এখনো পৌঁছেনি বেফাকের সাহায্য appeared first on Fateh24.
from Fateh24 https://ift.tt/30jTniQ
No comments:
Post a Comment