ডা.রিফাত আল মাজিদ।।
ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন কভিড-১৯ নিয়ে জটিলতা চরম মাত্রা ধারণ করেছে। খোদ বিজ্ঞানী মহলে মতানৈক্য বাড়ছে, সাথে WHO’র ভাঁড়ামো তো আছেই। এই পরিস্থিতে পরামর্শের জন্য কাদের উপর নির্ভর করবেন সেটা জানা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মোটাদাগে বলে নেই, এই মুহূর্তে ‘ফিল্ড’ এ যেসব ডাক্তাররা আছেন তাদের পরামর্শ মেনে চলা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। ব্যাখ্যা করছি কেনো এটা বেশি ইম্পরট্যান্ট।
কোরোনায় শতভাগ কার্যকর এমন কোনো প্রতিষেধক এখনো পাওয়া যায়নি, আদৌ যাবে কিনা সেটা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্দিহান। তবে ডিজিজ মোডিফায়িং কিছু ড্রাগ এর নাম শোনা যাচ্ছে এবং এদের কার্যকারিতা, আংশিক হলেও, পরিলক্ষিত হচ্ছে। সমস্যা হলো, কোনো ড্রাগেরই কোরোনার ক্ষেত্রে মুড অফ অ্যাকশন জানা সম্ভব হচ্ছে না। আর এই একটি কারণেই, সাথে সাইড ইফেক্ট ইস্যু, বিজ্ঞানীদের ও WHO’র তরফ থেকে প্রতিটা ড্রাগের বিরুদ্ধে হয় সতর্কবাণী অথবা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।
আমি পার্সোনালি, পরিস্থিতি বিবেচনায় WHO বা কিছু বিজ্ঞানীদের এই অতিসতর্কতা আরোপের বিরোধী।
প্রথম কারণ, এখন আমাদের হাতে সময় খুব কম। ড্রাগ কোন সিগন্যাল বা এনজাইম ইনহিবিট করে, প্লাজমা কন্সেন্ট্রেশন ঠিক আছে কিনা, আগে দেখতে হবে সেল লেভেল, এর পরে ইনভিভো লেভেলে কাজ করে কিনা, তারপর ক্লিনিকাল ট্রায়াল, এরপর দেখা যাবে এটার অনুমোদন দেয়া যায় কিনা ইত্যাদি সব ‘স্ট্যান্ডার্ড’ প্রসিজার ফলো করার এখন কি পারফেক্ট সময়? অবশ্যই না, আমরা জানি এসব স্টেপস খুবই ইম্পরট্যান্ট, কিন্তু আমাদের বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
দ্বিতীয় কারণ, আমরা সবাই বুঝতে পারছি, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ‘পারফেকশন’ খোঁজা বোকামি। প্রশ্ন আসতে পারে, এই সামান্য বিষয় সায়েন্টিস্টরা বা WHO কি বুঝতে পারে না? উত্তর হলো, অবশ্যই পারে এবং ভালোভাবে পারে। বিজ্ঞানীদের মাঝে জেনুইনলি কিছু ভালো মানুষ আছে, বাকি অধিকাংশই পুঁজিবাদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত বিজ্ঞানীরা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টাকায় গবেষণা করে। বায়োমেডিকেল সাইন্স নিয়ে গবেষণা করে আর বিভিন্ন বায়ো-ফার্মা থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে গবেষণা করেনা এমন বিজ্ঞানীর উদাহরণ নাই বললেই চলে।
স্বভাবতই আপনি যার নুন খাবেন তার গুন্ গাইবেন। বিজ্ঞানীরা গবেষণার শুরুতেই ‘বায়াসড’ হয়ে যান, আগেই ঠিক করেন কোন রেজাল্ট তিনি আশা করছেন, এতে কি হচ্ছে? আমরা এখন অহরহ দেখছি ডাটা ফ্যাব্রিকেটে করে পেপার পাবলিশ করতে। নিজের আশানুরূপ রেজাল্ট সহ পেপার পাবলিশ না করলে ‘ফান্ডিং’ অফ হয়ে যাবে, ল্যাব চলবে না। আরো ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, অনেক বিজ্ঞানীদের নিজস্ব বায়ো-ফার্মা কোম্পানি আছে অথবা শেয়ার আছে, তারা যেকোনো মূল্যে চাইবে গবেষণার ফলাফল যেনো তাদের মনের মতো হয়। বিষয়টি অনেক বিস্তৃত এতো সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা কঠিন, সময় পেলে ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ এ নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা বা বই লেখা যেতে পারে।
এতো কথা বলার উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই কিছুটা আচঁ করেত পেরেছেন। সুতরাং হসপিটালে রোগীদের উপর কোরোনায় কোনো ড্রাগ কাজ করলেও সেটা যদি বিজ্ঞানী বা WHO দ্বারা রিজেক্টেড হয় সেটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। হয়তো সেই বিজ্ঞানী বা তার ফান্ডিং পার্টনার কোনো ‘বায়ো-ফার্মা’ চাচ্ছে তাদের কোনো ‘প্রোডাক্ট’ যেনো সবার আগে ফ্রন্টলাইনে চলে আসে আর তারা বিলিয়ন ডলার মুনাফা লাভ করে। সামান্য ২০-১০০ টাকার ওষুধে অবস্থার উন্নতি হলে তাদের তো বিরাট লস, এটাও বুঝতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতে ফিল্ড লেভেলে কাজ করা ডাক্তারদের কেনো বিজ্ঞানীদের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি? একজন বিজ্ঞান গবেষণার ছাত্র হয়েও আমি মনে করি, করোনা নিয়ে ডাক্তারদের ব্যবসা করার সুযোগ বিজ্ঞানীদের থেকে অনেক কম, ডাক্তাররা যা করছে সেটা বড় ধরণের স্বার্থ ছাড়াই করেছে। তারা যেটা অবজার্ভ করে সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেনুইন। এই কারণে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা যদি কোনো ড্রাগের ভালো ইফেক্ট অবজার্ভ করে এবং রোগীদের প্রেস্ক্রাইব করে আমি মনে করি সাধারণ মানুষদের সেটা ফলো করা উচিত। কোন বিখ্যাত বিজ্ঞানী বা এপিডেমিওলোজিস্ট কি বললো সেদিকে না তাকানো, জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার, এটি কোনো ছেলে খেলার বিষয় নয়।
তবে একই সতর্কতা আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি, ডাক্তারদের পরামর্শ ছাড়া সেলফ-মেডিকেশন ভয়ঙ্কর একটা অন্যায় কাজ। যেকোনো ওষুধ নেয়ার আগে ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করুন, লম্বা সময় নিয়ে কথা বলুন, সবকিছু খুলে বলুন, এমন যেন না হয় ১-২ মিনিট কথা বলেই একটা প্রেসক্রিপশন নিয়ে চলে আসলেন।
পরিশেষে মহান রবের দরবারে অবিরত দুআ করতে থাকুন, দিনশেষে মহামহিম রব যেটা চাইবেন সেটাই হবে।
-এ
The post করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ appeared first on Fateh24.
from Fateh24 https://ift.tt/2Ydcngb
No comments:
Post a Comment