ফাতেহ ডেস্ক:
দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর আজ সোমবার থেকে ভারতে ধর্মীয় উপাসনালয়, হোটেল, শপিং মল ও রেস্তোরাঁগুলো খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই প্রক্রিয়াকে ভারতে ‘আনলক ১.০’-র অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে – তবে মন্দির-মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে বা মলে কেনাকাটায় যাওয়ার সময় নানা নতুন বিধিনিষেধও চালু করা হয়েছে।
ভারতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হল এমন একটা সময় যখন রোজ দেশে প্রায় হাজার দশেক নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন এবং পরিস্থিতি ক্রমেই আরও সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলছেন, অর্থনীতির চাকাকে আবার সচল করতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।
নতুন নিয়ম তিরুপতি, জামা মসজিদে
করোনাভাইরাস ঠেকানোর লকডাউনে গত আড়াই মাস ধরে বন্ধ ছিল অন্ধ্রের তিরুপতি – বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয় যে হিন্দু মন্দিরে।
দেশের সবচেয়ে ধনী এই মন্দির ট্রাস্ট সোমবার থেকে আবার দর্শনার্থীদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দিয়েছে, তবে প্রথম দুদিন শুধু স্থানীয় ভক্তরাই দর্শনের সুযোগ পাবেন।
তিরুপতি দেবস্থানম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ওয়াই ভি সুব্বা রেড্ডি বলছিলেন, “৬৫ বছরের বেশি বয়সী আর দশ বছরের কম বয়সীদের মন্দিরে আসতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।”
“দর্শনার্থীদের বলছি, আপনারা অনলাইনে আগে বুক করুন ও তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব নির্দেশিকা মেনেই এখানে আসুন। মাস্ক পরা ও দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, দর্শনের লাইনেও কাউকে বা কোনও কিছু ছোঁয়া চলবে না।”
দিল্লির সুপ্রাচীন জামা মসজিদের দরজাও আজ থেকে আবার মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে, তবে সেখানেও নামাজের জন্য নানা নতুন নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
জামা মসজিদের শাহী ইমাম আহমেদ বুখারির কথায়, “সরকারের নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে আমরা এখানে তার চেয়েও বেশি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি। আর দিল্লিতে এখন যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে, তাতে প্রবল আতঙ্ক তো আছেই। তবু সরকার যখন উপাসনালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েইছে, সেই অনুযায়ী আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি, বয়স্ক ও বৃদ্ধদের আসতে নিষেধ করছি।”
“মসজিদ থেকে কার্পেট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওজু বাড়ি থেকেই করে আসতে হবে এবং প্রত্যেককে নিজস্ব জায়নামাজ ও স্যানিটাইজারও আনতে বলা হচ্ছে।”
শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, আজ থেকে খুলে গেছে অনেক বন্ধ শপিং মলের তালাও।
ডিএলএফ শপিং মলসের শীর্ষ কর্মকর্তা পুষ্পা বেক্টর বলছিলেন, গুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসন তাদের মলের ভেতর বেশ কয়েকটি ‘স্ট্যান্ডঅ্যালোন স্টোর’ খোলার এবং খাবারের দোকানগুলোর ডেলিভারি ও টেকঅ্যাওয়ের অনুমতি দিয়েছেন।
“আটচল্লিশ থেকে বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে আরও মল খুলে যাবে, ইতিমধ্যে স্যানিটাইজেশন চলছে পুরোদমে এবং আমরাও সম্পূর্ণ প্রস্তুত”, জানাচ্ছেন তিনি।
রেস্তোরাঁগুলোকেও তাদের ধারণক্ষমতার অর্ধেক আসন নিয়ে খুলতে বলা হয়েছে, তবে আজ প্রথম দিনে শপিং মল বা রেস্তোরাঁয় ‘ফুটফল’ ছিল না বললেই চলে।
ধর্মস্থানগুলোতে অবশ্য ভক্তদের ভিড় ছিল ভালই। মধ্য দিল্লির ঝান্ডেওয়ালা মন্দিরে আসা ললিতা দেবী যেমন সেই ফেব্রুয়ারির পর আজ তিন মাস বাদে সেখানে এসেছিলেন।
আর তিনি এ ব্যাপারেও নিশ্চিত যে “সবাই সরকারের গাইডলাইনস মেনে চললে কোনও অসুবিধা হবে না, ভক্তরাও মাতারানির কৃপা পাবেন।”
করোনা রোগী বাড়লেও কিচ্ছু করার নেই
কিন্তু বড় সংখ্যায় জনসমাগম হয়, ভারতে সেই জায়গাগুলো এভাবে ‘আনলক’ করা হল এমন একটা সময়ে যখন শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় ভারত বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। রোজ নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে হাজার দশেক করে, কিন্তু সরকার লকডাউন আর বাড়ানোর মতো অবস্থাতেই নেই।
ব্যাঙ্গালোরেন বাসিন্দা অধ্যাপক গিরিশ রামাইয়ার কথায়, “পরিস্থিতি যে আবার স্বাভাবিক হচ্ছে, মন্দির-মল-রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়া হচ্ছে এটা ভাল লক্ষণ।”
“অর্থনীতির ইঞ্জিনকে আবার চালু করতেই হবে, কারণ আমাদের অনেকগুলো দিন নষ্ট হয়ে গেছে।”
“দেশের স্বার্থেই আমাদের সব আবার খুলে দিতে হবে – ধীরে ধীরে, এবং যথাযথ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে”, বলছিলেন তিনি।
তবে ভারতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন যে দুটি রাজ্যে, সেই মহারাষ্ট্র ও তামিলনাডুতে এখনও মন্দির-মসজিদ বা মল-রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি মেলেনি।
নানা বিধিনিষেধ বহাল আছে বহু তথাকথিত ‘কন্টেইনমেন্ট জোনে’ও, অর্থাৎ যেখানে অনেক বেশি সংখ্যায় করোনা পজিটিভ রোগীরা আছেন। বিবিসি
-এ
The post করোনায় নামাজ নিয়ে পরামর্শ দিল্লির জামে মসজিদের appeared first on Fateh24.
from Fateh24 https://ift.tt/2zde0lB
No comments:
Post a Comment