Friday, April 24, 2020

চীনের প্রতিবেশি ভিয়েতনামে কেন একজনও মারা যায়নি করোনায়

ফাতেহ ডেস্ক এমন একটি দেশের কথা ভাবুন, যার জনসংখ্যা সাড়ে নয় কোটির বেশি এবং চীনের সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘ স্থল সীমান্ত। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যবসা-বাণিজ্য, অনেক ধরণের যোগাযোগ।

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের মহামারিতে পুরো বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত তখন তাদের প্রতিবেশি এই দেশটির কী অবস্থা এবার কল্পনা করার চেষ্টা করুন।

দেশটির নাম ভিয়েতনাম। সেখানে আজ ২৩শে এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত মানুষের সংখ্যা: শূণ্য। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৬৮।

করোনাভাইরাসের মহামারি প্রথম ছড়িয়েছে যে চীন থেকে, তাদের প্রতিবেশি ভিয়েতনাম কীভাবে নিজেকে এভাবে সুরক্ষিত রাখলো?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভিয়েতনামের এই সাফল্যে বিস্মিত। তারা জানতে চাইছেন ভিয়েতনামের এই সাফল্যের কারণ। শিখতে চাইছেন ভিয়েতনামের উদাহারণ থেকে।

ভিয়েতনামের এই সাফল্যের কারণ বোঝার চেষ্টা করেছেন দুজন গবেষক: লন্ডনের কিংস কলেজের পলিটিক্যাল ইকনমির সিনিয়র লেকচারার রবিন ক্লিংগার-ভিড্রা এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথের পিএইচডি গবেষক বা-লিন ট্রান।

এই দুই গবেষক তাদের অনুসন্ধানের ফল প্রকাশ করেছেন গ্লোবাল পলিসি জার্নালে।

তারা ভিয়েতনামের এই সাফল্যের জন্য মূলত কয়েকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করছেন:

প্রথমত, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ভিয়েতনাম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিয়েছিলো। তাদের সব বিমানবন্দরে যাত্রীদের কঠোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালু করা হয়েছিল। বিমানবন্দরে এসে নামা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হতো এবং তাদেরকে একটি স্বাস্থ্য-ফর্ম পূরণ করতে হতো। সেই ফর্মে যাত্রীদের উল্লেখ করতে হতো তারা কার কার সংস্পর্শে এসেছে, কোথায় কোথায় গিয়েছে।

ভিয়েতনামে এধরণের কঠোর ব্যবস্থা এখনো চালু আছে। ভিয়েতনামের যেকোনো বড় শহরে ঢুকতে বা সেখান থেকে বেরোতে গেলে এসব তথ্য এখনো জানাতে হয়। কোন সরকারি দপ্তরে বা হাসপাতালে ঢুকতে গেলেও এসব তথ্য দিতে হয়।

কারো শরীরের তাপমাত্রা যদি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে তখন তাকে সাথে সাথে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। স্বাস্থ্য ফর্মে যারা ভুল তথ্য দিয়েছে বলে প্রমাণিত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এর পাশাপাশি প্রথম থেকেই দেশজুড়ে টেস্টিং এবং কনট্যাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা কারা এসেছিল) এর ব্যবস্থা নিয়েছিল ভিয়েতনাম। কোন এলাকায় মাত্র একটি সংক্রমণ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।

কঠোর কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা

ভিয়েতনামে দ্বিতীয় যে বিষয়টির ওপর জোর দেয়া হয়েছিল সেটা হচ্ছে টার্গেট করে করে কঠোর কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা চালু করা।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে যে সমস্ত ভিয়েতনামী নাগরিক বিদেশ থেকে ফিরেছে তাদেরকে আসার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে এবং কোভিড-নাইনটিনের জন্য টেস্ট করা হয়েছে। ভিয়েতনামে আসা বিদেশিদের বেলাতেও এই একই নীতি নেয়া হয়।

ভিয়েতনামে কোভিড-নাইনটিনের টেস্ট করাতে আসা মানুষ দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করছে
দেশের ভেতরেও একটি বড় নগরী থেকে আরেকটি বড় নগরীতে যেতে হলে সেখানে একই ধরণের কোয়ারেন্টিনের নীতি চালু রয়েছে।

বড় বড় শহরগুলোর মধ্যে যাতায়াত এখনো খুবই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। কেউ যদি কোন শহরের স্থায়ী বাসিন্দা না হন, তিনি যদি সেখানে ঢুকতে চান, তাকে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতেই হবে। এবং সেটা হতে হবে সরকার অনুমোদিত কোন একটি স্থাপনায়। এর খরচ তাদের নিজেকেই বহন করতে হবে।

ভিয়েতনামের সাফল্যের জন্য গবেষকরা তৃতীয় যে বিষয়টির উল্লেখ করছেন, সেটি হচ্ছে তাদের সফল কমিউনিকেশন। শুরু থেকেই সরকার এই ভাইরাসটি যে কতো মারাত্মক সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন এবং তাদের বার্তাটি ছিল স্পষ্ট।

কোভিড-নাইনটিন শুধু একটা খারাপ ধরনের ফ্লু নয়, তার চাইতেও মারাত্মক কিছু এবং জনগণকে তারা পরামর্শ দিয়েছিল কোনভাবেই যেন তারা নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে।

সরকার বেশ সৃজনশীল কিছু কৌশল নিয়েছিল জনগণের কাছে করোনাভাইরাসের বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য।

প্রতিদিন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে তথ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী বা গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের কাছে সব মানুষের মোবাইল ফোনে টেক্সট পাঠানো হতো করোনাভাইরাসের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে। এর পাশাপাশি সরকারি প্রচারণা তো ছিলই।

ভিয়েতনামের সব শহরে পোস্টার লাগানো হয়েছে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জনগণকে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে।

এই গবেষকরা বলছেন, ভিয়েনাম যেভাবে করোনাভাইরাসের মোকাবেলা করছে সেটি হয়তো উদারনৈতিক রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে যায় না, কিন্তু এটি ভিয়েতনামে কাজ করছে।

তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিটি আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কাজেই ভিয়েতনাম অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটা উদাহারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। সূত্র: বিবিসি

-এ

The post চীনের প্রতিবেশি ভিয়েতনামে কেন একজনও মারা যায়নি করোনায় appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/3axWl4W

No comments:

Post a Comment