Friday, April 24, 2020

রোজা ও স্বাস্থ্য : ধর্ম ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যা

হুজাইফা মাহমুদ : 

হিজরি ক্যালেন্ডারের নবম মাস, রমজান মাস। এ মাসে পৃথিবীর সকল প্রান্তের ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা রোজা পালন করেন। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি ফরয বিধান। বিশেষ কিছু কারণ ও অবস্থা ব্যতীত প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলমানের উপর রোজা রাখা ফরয। ইসলামকে যদি পাঁচটি খুঁটির উপর দাঁড়ানো একটি ঘর হিসেবে কল্পনা করা হয়,তাহলে সেই ঘরের তৃতীয় খুঁটিটি হলো রমজান মাসের রোজা। এর গুরুত্ব বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। রোজা একই সাথে দৈহিক ও আত্মিক ইবাদাত।

এই ইবাদাতের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা,আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, এবং কোনরূপ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ব্যতীত আল্লাহর আদেশ মেনে নিয়ে তাঁর সামনে নিজের একান্ত আনুগত্যকে প্রকাশ করা। যে নফসের ধোঁকা ও প্ররোচনায় পড়ে আমরা ক্রমশ আল্লাহর নৈকট্যের নূর থেকে দূরে সরে যাই,সেই অবাধ্য নফসকে ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও জৈবিক চাহিদার সংযমে চূড়ান্ত দূর্বল ও পরিশুদ্ধ করে পুনরায় আল্লাহর নিকট থেকে নিকটতর হওয়ার সময় রমজান মাস।

এই একমাসের ইবাদাত আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তি, মানসিক দৃঢ়তা এবং সমাজিক শৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতি ঘটায়। সবধরনের পাপ থেকে বেঁচে থাকার স্পৃহা তৈরী করে। ইবনুল কায়্যিম রহঃ বলেন, রোজার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে তার পাশবিক ইচ্ছা ও জৈবিক অভ্যাস থেকে মুক্ত করা এবং জৈবিক চাহিদার মধ্যে সুস্থতা ও স্বাভাবিকতা প্রতিষ্ঠা করা।

সমকালীন ‘বৈজ্ঞানিক’ ব্যাখ্যার সূচনা

প্রশ্ন হলো, যেহেতু রোজা একটি ধর্মীয় ইবাদাত, যা কেবলই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আদায় করা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা কি এর সাথে স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের আলাপকে সম্পৃক্ত করবো কিনা — এর মৌলিক উত্তর হলো,না। কেননা ইবাদাত কোন শর্তের উপর নির্ভরশীল না। অকাট্যভাবে প্রমাণিত আল্লাহর কোন বিধান পালন করা সর্বাবস্থায়ই আমাদের উপর আবশ্যক। সেটা বাহ্যিকদৃষ্টিতে স্বাস্থ্যসম্মত হোক বা না হোক, বিজ্ঞান তাকে সমর্থন করুক বা না করুক। এবং প্রত্যেক মু’মিনের হৃদয়ে এই বিশ্বাস অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে থাকা উচিৎ যে,আল্লাহর কোন বিধান মানুষের ক্ষতির কোন কারণ হবেনা। এটি সর্বাবস্থায়ই কল্যাণকর।

স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান রোজার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবছরই আমাদেরকে এমন একটা অনর্থক বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয় যে, রোজা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর? দীর্ঘ একটা মাস এভাবে ধারাবাহিক রোজা রাখাটা বিজ্ঞানসম্মত কি না, এই প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা আধুনিক সময়ের একটি বিশেষ প্রবণতা। রেনেসাঁ পরবর্তী ইউরোপে যখন ধর্মের কর্তৃত্বকে রাষ্ট্র ও সামাজিক পর্যায় থেকে সংকোচন করে ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হলো, তখন তার জায়গা দখল করে নিয়েছে বিজ্ঞান,আরও নির্দিষ্ট করে বললে বস্তুবাদী বিজ্ঞান বা বস্তু-কেন্দ্রিক বিশ্ব বীক্ষণ।

যখন থেকে বস্তুবাদী বিজ্ঞানের উত্থান ঘটলো, তখন থেকে ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ধর্ম ছেড়ে আসা মানুষরা ধর্মের বিকল্প হিসাবে বিজ্ঞানকে আঁকড়ে ধরেছেন। কারণ তাদের এমন একটা অবলম্বন প্রয়োজন ছিলো। ফলে বিজ্ঞান হয়ে উঠলো সেসব ধর্মত্যাগীদের আশ্রয়।ধর্মকে অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক আখ্যা দিয়ে “যুক্তিপূর্ণ” বিজ্ঞানের অনুসারী হতে লাগলেন সবাই। ক্রমেই বিজ্ঞান হয়ে উঠলো রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ের একটি বিপুল শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। তার যাবতীয় সীমাবদ্ধতা ও অক্ষমতা সত্ত্বেও জীবন ও জগতের যাবতীয় বিষয়-আশয়ে কর্তৃত্ব খাটানোর মাধ্যমে একধরণের অপবিজ্ঞান চর্চার সূচনা করেছে। মানুষের ধর্মীয় আচার-আচরণ,আকীদা,বিশ্বাস,ইহকাল ও পরকাল নিয়েও বিজ্ঞান তার খবরদারি প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেছে। অথচ নিশ্চিতভাবেই এই বিষয়গুলো বিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়ের আওতায় পড়েনা।

রোজা : বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক

ধর্ম ও বিজ্ঞানের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ, তারা উভয়ে কি একে অপরের শত্রু নাকি বন্ধু, পারস্পরিক সম্পৃক্ততা বজায় রেখে তারা একই সাথে চলতে পারবে কিনা, এটা এক বিস্তৃত অধ্যয়ন ও আলোচনার বিষয়। কিন্তু বর্তমানের ডমিন্যান্ট বস্তুবাদী বিজ্ঞান যে ধর্মকে পুরোপুরি খারিজ করে দিয়ে ধর্মকে তার বিপরীত মেরুতে শত্রুর অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে, এটা একেবারে স্পষ্ট ব্যাপার। ঐশী ধর্মকে বাতিল করে বিজ্ঞান নিজেও একটা ধর্মীয় ও ভাববাদী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। এর নিজস্ব আকীদা বিশ্বাস আছে, মতবাদ ও আদর্শ আছে। সুতরাং যে বিজ্ঞান সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়, সেটা প্রকৃত অর্থে বিজ্ঞান নয়, বরং এটা হলো বিজ্ঞানবাদ ; আর দশটা মতাদর্শের মতোই একটা মনগড়া মতাদর্শ।

বস্তুবাদী বিজ্ঞানের এই বিপুল উত্থানের ফলে ধার্মিক এবং অধার্মিক, উভয় দলের ভেতর থেকেই বিজ্ঞান প্রশ্নে তৈরী হয়েছেন প্রান্তিক ভাবাপন্ন দুই দল লোক। একদল মনে করেন, বিজ্ঞান এবং ধর্ম পাশাপাশি চলতে পারে না। ধর্মের পুরো ব্যাপারটাই অবৈজ্ঞানিক এবং অযৌক্তিক। তারা যথাযথ বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে ধর্মের ক্রিটিক করেন। আরেক দল মনে করেন, ধর্মের কোন ব্যাপারই বিজ্ঞান বহির্ভূত নয়। ধর্মের প্রতিটি বিশ্বাস এবং রীতিনীতিতে আধুনিক বিজ্ঞানের একেবারে নতুনতম গবেষণা ও আবিষ্কারের প্রতিফলন ঘটেছে। তারা কুরআন ও হাদীসকে ‘মডার্ন সাইন্সের’ মৌলিক উৎস গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করেন।

আদর্শিক দিক দিয়ে এই উভয় দলই এক, তারা বিজ্ঞানকে একটি অনিবার্য ও ধ্রুব ব্যাপার হিসেবে দেখেন। তারা উভয়েই জগতের সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে বিজ্ঞানকে মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেন। সুতরাং কোরআন ও হাদীসকে বিজ্ঞানসম্মত এবং বিজ্ঞানঅসম্মত করার উভয় এপ্রোচই নানানভাবে ত্রুটিপূর্ণ ; ধর্ম ও বিজ্ঞান উভয়ের জন্যই।

রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা সাধারণত এই দু’টি দলকেই বিতর্করত দেখি। একদল এটা প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন যে, রমজান মাসের রোজা একটি চরম অবৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের বিবেচনায় স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। অপরদিকে বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে যারা যৌক্তিক বানাতে চান, তারাও উঠে পড়ে লাগেন যে, রোজা কোনভাবেই বিজ্ঞান বহির্ভূত কোন ব্যাপার না এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের বিবেচনাতেও এটি অনেক উপকারী।

রোজা বিরোধীদের ব্যাখ্যা

রোজা বিরোধীরা কী বলেন ? তাদের মতে রোজা রাখা স্বাস্থ্যকর নিরোগ জীবনের জন্য ‘চরম ক্ষতিকর’। রোজার মাধ্যমে শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পানি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত রেখে দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যগ্রহণের ডিসিপ্লিনটিকে নষ্ট করা হয় এবং অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যার সূচনা ঘটে। তাছাড়া দীর্ঘক্ষণ খাদ্যগ্রহণ না করার কারণে ক্ষুধার চাহিদা খুব বেশি থাকে বলে মানুষ অতিভোজনে লিপ্ত হয়। এবং রমজান মাসে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ভাজাপোড়া ও মশলাবহুল খাবার বেশী খাওয়া হয়। খাদ্যাভ্যাসের এই ব্যাপক পরিবর্তনকে শরীর স্বাভাবিভাবে গ্রহণ করতে পারে না, ফলে শুরু হয় নানান রোগের উৎপাত।

রোজা রাখার কারণে কী কী শারীরিক সমস্যা ও রোগ হতে পারে, তার একটা তালিকাও তারা প্রণয়ন করেছেন। যেমন– পানিশূন্যতা এবং তার একাধিক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ক্লান্তি ও অবসন্নতা, রক্তচাপ কমে যাওয়া। হার্টবার্ন বা বুক জ্বলাপুড়া,পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রিক,বদহজম,পেটে সমস্যা,কোষ্ঠকাঠিন্য, করোনারি হার্ট ডিজিজ, ডিপ্রেশন, লিভার ডিজফাংশন, মাথাব্যথা, ওজন বৃদ্ধি ও ওজন কমার ফ্লাকচুয়েশন, ঘুমের অনিয়মের কারণে অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া। রমজানে মাসে সুগার কনজিউমিং বেশি হওয়ায় ডায়াবেটিস বাড়া সহ এমনকি কলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা পর্যন্ত আছে।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, রোজা রাখার কারণে এমন কোন রোগব্যাধি নাই যা আপনাকে আক্রমণ করবে না। যদি এসব কথাকে সত্য হিসেবে মেডিকেল সাইন্সের এম্পিরিক্যাল ফ্যাক্ট হিসাবে গ্রহণ করা হতো, তাহলে পৃথিবীর অর্ধেক মুসলমান কেবল রোজা রাখার কারণেই মৃত্যুবরণ করার কথা ছিলো। অথচ দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত একথা কেউ বলেনি যে,স্রেফ রোজা রাখার কারণে কেউ কোন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে পড়েছে বা কোন রোগ বাঁধিয়ে বসেছে।

রোজার ‘বন্ধুদের’ মতামত

এই উন্মাদ বিজ্ঞান পূজারীদের বিপরীতে অপর দলটি যা করেন তা হলো, রোজার পুরো ব্যাপারটিকেই মেডিকেল সাইন্সের একটি কোর ট্রিটমেন্টের অংশ বানিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ, রোজা কেবল বিজ্ঞানসম্মতই না, বরং অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল সাইন্সের গুরুত্বপূর্ণ একটি চিকিৎসা ব্যবস্থাও বটে। প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞ ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা রোজাকে একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। এজন্য রোজাকে তারা অটোফেজি (autophagy) বা মেডিক্যাল ফাস্টিংয়ের সাথে তুলনা করে দেখেন।

অর্থাৎ দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে শরীরের কোষ গ্রন্থিগুলোর নবায়ন হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ক্ষতিকর ফ্যাট বার্ন হয়, এছাড়াও এর আরও নানান উপকারিতা রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, মেডিক্যাল ফাস্টিং এবং ইসলামের রোজায় কিছু সাদৃশ্যের পাশাপাশি বেশকিছু পার্থক্যও রয়েছে। ১৯৯৪ সালে মরোক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কায় একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে বহু মুসলিম ও অমুসলিম মেডিকেল গবেষকগণ উপস্থিত হন।

সেখানে ৫০টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয় এবং রোজার বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত উপকারিতার কথা বলা হয় মেডিকেল সাইন্সের আলোকে। যেমন, ওজন কমাতে সাহায্য করে,শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে, ডায়াবেটিস রোগীরা খাবার নিয়ন্ত্রণ করার ফলে দেহে ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে, পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফ্যাট বা কোলেস্টেরল কমায়, এজিং প্রসেস ব্যাহত রাখে,কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়,ক্যান্সার কে প্রতিরোধ করে,ইত্যাদি।

রোজা ও স্বাস্থ্যের সম্পর্কে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যাখ্যা

যেহেতু রোজা একটি আয়াসসাধ্য শারীরিক ইবাদাত, সুতরাং শরীরের উপর এর একটা প্রভাব যে পড়বে, এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। সেই প্রভাব বাহ্যিকভাবে ক্ষেত্রবিশেষে উপকারী এবং কখনো ক্ষতিকর, উভয়টাই হতে পারে। কিন্তু,যদি ইসলামের একেবারে মৌলিক কিছু ব্যাপার মাথায় রাখেন, তাহলে স্বাস্থ্যগত এই লাভ-ক্ষতির আলাপটি রোজার ক্ষেত্রে অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক। একজন মুমিন সর্বদা এই বিশ্বাস লালন করেন যে, আল্লাহ তার বান্দাদের উপর সাধ্যের অতীত কোন হুকুম চাপিয়ে দেন না। মানুষ পালন করতে সক্ষম নয়, এমন কোন বিধান আল্লাহ চাপিয়ে দেন নি।

দ্বিতীয়ত, ইসলামের প্রতিটি বিধান ইহকাল ও পরকালের জন্য সর্বাঙ্গীণ কল্যাণময়। আল্লাহর কোন বিধান পালন করতে গিয়ে বাহ্যত কোন অকল্যাণ বা ক্ষতির শিকারও যদি কেউ হয়, তবু এই বিশ্বাস ভেতরে রাখতে হবে যে, এর পেছনেও অন্তর্গত কল্যাণ নিহিত আছে। পার্থিব লাভ-ক্ষতির বিবেচনা না করেই মেনে নেয়ার নামই হলো আনুগত্য। রোজাও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক মিলে একযোগে বলতো যে,রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর,তারপরও আমরা আল্লাহর আদেশ পালন করতে গিয়ে রোজা রাখতাম। একইভাবে সমস্ত ডাক্তার চিকিৎসকগণ মিলে যদি বলে,রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো ও উপকারী, তারপরও আমরা রোজা রাখতাম কেবলই আল্লাহর জন্য, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য না।

সুতরাং রোজার যদি কোন বাহ্যিক ও পার্থিব উপকারিতা থেকে থাকে, তাহলে সেগুলো বলতে কোন দোষ নেই, কিন্তু অবশ্যই এই ব্যাপারটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, এই উপকারিতা বলতে গিয়ে রোজা যেন কেবলই একটি চিকিৎসার উপকরণ বা শারীরিক ব্যায়ামে পরিণত না হয়ে যায়। যেহেতু প্রত্যেক আমলের যথার্থতা নির্ণয় হবে নিয়তের মাধ্যমে, তাই আপনি যদি বেশী বেশী রোজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতার কথা আলোচনা করেন এবং এ ব্যাপারটাতেই বেশি জোর দেন, তাহলে রোজার মূল উদ্দেশ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন সেটা আর কেবল আল্লাহর জন্য রোজা হবে না, বরং এতে স্বাস্থ্যরক্ষার স্বার্থও যুক্ত হয়ে পড়বে। ।

একইভাবে, কোন বিজ্ঞানপাপী যদি এসে বলেন, রোজার অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । তাহলে আমরা বলবো, এই শরীর, স্বাস্থ্য ও জান-মাল সবটাই আল্লাহ কিনে নিয়েছেন পরকালে জান্নাতের বিনিময়ে। আর যারা আল্লাহর আদেশে তরবারি হাতে জীবন বিলিয়ে দিতে সামান্য দ্বিধাবোধ করেন না,তারা রোজার এই সামান্য শারীরিক ক্ষতিকে হাসিমুখে স্বাগত জানাবেন। অবশ্য রোজায় যদি কারো শরীর দুর্ঘটনাবশত বিশেষ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে তার ক্ষেত্রে রোজা না রাখার সুযোগ রয়েছে, বরং অনেক ক্ষেত্রে রোজা না রাখা জরুরী। এমন পরিস্থিতিতে সেটাই আল্লাহর আনুগত্য ; আল্লাহর নাফরমানী করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনুসরণ নয়।

The post রোজা ও স্বাস্থ্য : ধর্ম ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যা appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/2S6vyGt

No comments:

Post a Comment