মুনশী নাঈম:
হেমন্তে গাছের হলুদ পাতা যেমন ঝরে যায়, তেমনি আমাদের দেয়াল থেকে ঝরে গেল আরেকটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। টুপ করে খসে পড়ল জীবন থেকে আরও একটি বছর। ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টাই। লালকালি দিয়ে দাগানো তারিখগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। তখন আমার পুরো দেয়ালটাই হয়ে যায় একটি ভিডিও প্রজেক্টর। সেখানে ভেসে উঠতে থাকে বহুল আলোচিত, আলোড়িত, আন্দোলিত দুই হাজার বিশের তথ্যচিত্র। কখনও মুগ্ধতা, কখনও বেদনা, কখনও প্রবল শোক স্পর্শ করে যায়।
২০২০ সাল আমাদের হারানোর বছর। এ বছর আমরা অনেক আলেমকে হারিয়েছি। মাউতুল আলিম মউতুল আলম–একজন আলেমের মৃত্যু মানে একটি পৃথিবীর মৃত্যু। ক্যালেন্ডারের লাল দাগ দেয়া তারিখগুলো আমাদেরকে আরবি বহুল শ্রুত এই প্রবাদকথাটি মনে করিয়ে দেয়। এই লেখায় তুলে ধরা হলো এই বছরে গত হওয়া ২৫ জন মনীষী আলেমের কথকতা।
১. আল্লামা আশরাফ আলী রহ.
১৯৪০ সালের ১ মার্চ কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম আলহাজ্ব মাওলানা মুফিজুদ্দীন রহ.।
শিক্ষার সূচনা পারিবারিক পরিবেশে। প্রাথমিক শিক্ষা পারিবারিকভাবে শেষ করে এলাকার প্রাচীন শিক্ষালয় মাযহারুল উরুম যশপুরে ভর্তি হন। এখানে ৫ বছর লেখা পড়া করে চলে যান কুমিল্লা শহরের ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা কাসেমুল উলুমে। সেখানে ২ বছর লেখা পড়া করেন। এরপর ঢাকার অন্যতম বিদ্যাপিঠ হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারায় ভর্তি হন। এখানেই দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। উচ্চস্তর হাদীস গবেষনণা এবং ইলমে কুরআনের উপর অধিকতর ব্যুৎপত্তি অর্জনের লক্ষ্যে সেকালের শ্রেষ্ঠতম হাদীস বিশারদ আল্লামা রাসূল খান রহ. এবং আল্লামা ইদ্রীস কান্ধলভী রহ. এর দরসগাহ জামিআ আশরাফিয়া লাহোর পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে ধারাবাহিক দুই বছর অধ্যাপনা করেন।
কিশোরগঞ্জের জামিআ এমদাদিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি মুসলিম শরীফের প্রথম খন্ডের দরস দেন। এখানে তিনি ৯ বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর চলে আসেন ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায়। এখানে তিনি ৮ বছর শায়খে সানী ও নাযেমে তালিমাতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বড় কাটারা মাদরাসায়ও শিক্ষকতা করেন এবং তিরমিজী শরীফের দারস প্রদান করেন। আল্লামা আশরাফ আলী তার মায়ের কথায় কুমিল্লা জামিআ কাসেমুল উলুমে চলে আসেন। সেই থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জামিআর শায়খুল হাদীস ও সদরুল মুদাররিসীনের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সাল থেকে তিনি ঢাকার মালিবাগ মাদরাসায় হাদীসের দারস দিয়েছেন এবং মুহতামি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা মতিঝিল এজিবি কলোনীর খতীব ছিলেন দীর্ঘ কয়েক বছর। নিজ এলাকায় জামআি এমদাদিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকা, জামিআ ইসলামিয়া আরাবিয়া লালমাটিয়া, দারুল উলুম মিরপুর-৬, জামিয়া ইসলামিয়া বায়তুল ফালাহ ঢাকা, বনানী টি এন্ড টি মাদরাসা ও মিরপুর দারুস সালামসহ দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় তিনি বোখারী শরীফের দারস দান করেন। পাশাপাশি তিনি অনেক মাদরাসার মজলিসে শূরার সভাপতি ও সদস্য হিসেবে বহু খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি, আল হাইয়াতুল উলয়া এর কো চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
কাসেমুল উলুম মাদরাসায় পড়াকালীন সময়ে তিনি আল্লামা আতহার আলী রহ. ডাকে সাড়া দিয়ে নেজামে ইসলাম পার্টির কর্মী হিসেবে কাজ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি নেজাম ইসলাম পার্টির কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি নেজামে ইসলাম পার্টিকে সুসংগঠিত করেন ও কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর সম্মিলিত জোটেও যোগদান করেন। সুলুক ও তরিকতের দিকে অধিক ঝুকে পড়ায় তিনি বেশ কিছু সময় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। পরবর্তীতে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. তাকে খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হওয়ার দাওয়াত দিলে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে যোগদান করেন এবং এক সময়ে নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন।
তিনি বেশ কিছু বই লিখে ও অনুবাদ করে লেখনীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কওমী মাদরাসা কি ও কেন, শহীদে কারবালা, গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়, শাহ ওয়ালী উল্লাহ রহ. এর চল্লিশ হাদীস ইত্যাদি।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি তাসাউফ চর্চায় আত্মনিমগ্ন। অধ্যয়নকালীন সময়ে আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা আল্লামা রাসূল খান রহ. এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন। দেশে চলে আসার পর পাকিস্তান আমলেই তিনি খেলাফত পান। রাসূল খানের ইন্তেকালের পর তিনি আল্লামা শাহ হাকীম আখতার রহ. এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং খেলাফত পান। সর্বশেষ আল্লামা শাহ আহমদ শফী দামাতবারকাতুহুম তাকে খেলাফত দেন। তিনি মানুষের আত্মসংশোধনের জন্য অসংখ্য মানুষকে বায়াত করেন এবং বেশ কয়েকজনকে খেলাফত দান করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শায়খুল হাদীস মাওলানা মামুনুল হক, প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুস সামাদ।
২০১৯ সালে ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১.৪০ মিনিটে এ মহান বুযুগ ঢাকা আজগর আলী হাসপাতালে ইহকাল ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। নিজ গ্রাম কুমিল্লা সদর দক্ষিণ অলিবাজার মাদরাসা মাঠে লাখো মানুষের অংশ গ্রহণে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.। পারিবারিক কবরস্থানে পিতার পাশেই সমাহিত করা হয়।
২. আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী রহ.
শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী ১৩৫৯ হিজরি মোতাবেক ১৯৩৮ সালে হবিগঞ্জের কাঠাখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শায়খ আব্দুন নূর রহ. (মৃত্যু ১ আগস্ট ১৯৯৯ সাল), মাতা মরহুম শামসুন নেসা রাহ.। তাঁর নানা হযরত মাওলানা আসাদুল্লাহ রাহ. ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম সারির এক মুজাহিদ ছিলেন।
পিতা-মাতার কাছেই শায়খুল হাদিস হবিগঞ্জী রাহ.’র পড়াশোনার হাতেখড়ি। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন তাঁর পিতার কাছে, কাটাখালী মাদরাসায়। এটি তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা। এরপর তিনি হবিগঞ্জের অদূরে রায়ধর গ্রামে ‘জামেয়া সাদিয়ায়’ ভর্তি হন। সেখানে তিনি তাঁর মামা হযরত মাওলানা মুখলিসুর রাহমান রাহ.’র কাছে আরবিব্যাকরণ ও আরবিভাষা রপ্ত করেন। তাঁর মামা ছিলেন শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি রাহ.’র ছাত্র। প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে তিনি জামিয়া আহলিয়্যা মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে চলে যান। সেখানে ফিক্হ, উসূলে ফিক্হ, তাফসির, উসূলে তাফসির, হাদিস, উসূলে হাদিস, মানতিক-ফালসাফাসহ ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার জ্ঞান অর্জন করেন। এখানে তিনি মুফতি ফায়যুল্লাহ রাহ.’র বিশেষ সান্নিধ্য লাভে ধন্য হন। তিনি হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ১৯৬০-৬১ সালে ‘দাওরায়ে হাদিস’ সম্পন্ন করেন।
দাওরায়ে হাদিস শেষ করে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখানে ‘জামেয়া আশরাফিয়া লাহোর’ এ দ্বিতীয়বার দাওরায়ে হাদিসে ভর্তি হন। সেটা ১৯৬১-৬২ সালের কথা। এরপর তিনি কানপুর চলে যান। সেখানে হাফিযুল হাদিস আব্দুল্লাহ দরখাস্তি রাহ. (মৃত্যু : ১৪১৫ হিজরি)’র কাছে তাফসিরের বিশেষ পাঠ গ্রহণ করেন। এরপর ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া করাচি’ মাদরাসায় শায়খুল হাদিস ইউসূফ বাননূরী রাহ.-’র সান্নিধ্যে যান। সেখানে তাঁর কাছে তিনি তিনটি কিতাবের বিশেষ দারস গ্রহণ করেন। সেগুলো হচ্ছে, সাহিহুল বুখারি, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ও তাফসিরুল কুরআন।
পাকিস্তান থেকে তিনি ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে পাড়ি জমান। ভারত-পাকিস্তান ভাগের জেরে দারুল উলূম দেওবন্দে তখন পাকিস্তানি ছাত্র ভর্তি বন্ধ ছিলো। শায়খুল হাদিস হবিগঞ্জী দা.বা. দেওবন্দে যখন পৌঁছেছেন, তখন ভতির্র সময়ও শেষ। এই দুই কারণে তিনি নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ভর্তি হতে পারেননি। তবে তৎকালীন মুহতামিম ক্বারি তায়্যিব রাহ.’র অনুমতিতে দারুল উলুম দেওবন্দে ‘খুসূসি দারস’ (বিশেষ পাঠ্য) গ্রহণ করেন। ওইসময় তিনি জামে তিরমিযি পড়েন শায়খ ইবরাহিম বলিয়াভি রাহ.’র কাছে। তাফসিরে বায়যাবি পড়েন হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান রাহ.’র কাছে। হযরত মাওলানা ক্বারি তায়্যিব রাহ.’র কাছ থেকে নেন হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার খুসূসি দারসও।
সহিহ বুখারির সাথে শায়খুল হাদিস হবিগঞ্জী রাহ.’র এক নিবিড় সর্ম্পক গড়ে উঠে। তিনি এ কিতাবটি পাঁচজন শায়খুল হাদিসের কাছে পড়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে বুখারির দারস প্রদানের অনুমতিও পেয়েছেন।
প্রথমবার পূর্ণরূপে পড়েছেন হাটহাজারী মাদরাসায় শায়খ আব্দুল কাইয়্যূম রাহ.’র কাছে। দ্বিতীয়বার পড়েছেন মুফতিয়ে আযম শায়খ ফায়যুল্লাহ রাহ.’র বাড়িতে। তৃতীয়বার পড়েছেন লাহোরে মাওলানা শায়খ ইদরিস কান্ধলভি রাহ.’র কাছে। চতুর্থবার পড়েছেন শায়খ ইউসুফ বানুরি রাহ.’র কাছে। পঞ্চমবার পড়েছেন দারুল উরুম দেওবন্দে শায়খ ফখরুদ্দিন আহমদ মুরাদাবাদি রাহ.’র কাছে। সাহারানপুরে শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রাহ.’র কাছেও বুখারির একাংশ পড়েছেন। এভাবে ‘খুসূসি দারস’ শেষে ১৯৬৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৯৬৪ সালে কুমিল্লার দারুল উলুম বরুড়া মাদরাসায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। ৬৪ সাল থেকে ৬৬ সাল পর্যন্ত তিন বছর এ মাদরাসায় হাদিস, তাফসিরসহ বিভিন্ন কিতাবের দারস দেন।
১৯৬৬ সালের শেষ দিকে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মুহতামিম হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব রাহ.’র নির্দেশে ময়মনসিংহের আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদরাসায় শায়খুল হাদিস হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিন বছর বালিয়া মাদরাসায় হাদিসের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯-৭১ সালের ১৬ ডিসম্বরের পূর্ব পর্যন্ত ময়মনসিংহের জামিয়া ইসলামিয়ায় দারসে হাদিসের খেদমত আঞ্জাম দেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে আসেন। এলাকাবাসীর অনুরোধে ও হযরত শায়খে রেঙ্গা রাহ.’র নির্দেশে হবিগঞ্জের জামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদরাসায় যোগদান করেন। ইন্তেকাল অবধি এ মাদরাসাতেই মুহতামিম ও শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা হযরতকে বুখারির দারসের জন্য কবুল করে নিয়েছেন। আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদরাসা থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ প্রায় ৫৩ বছর থেকে সহিহ বুখারির দারস দিয়েছেন। ১৪৪০ হিজরির ২৮ রমজান থেকে তিনি জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ পান। ১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার তিনি জামেয়ায় প্রথম দরস প্রদান করেন।
শায়খুল হাদিস হবিগঞ্জী রাহ. জীবনের দীর্ঘ সময় বিভিন্ন মনীষার সান্নিধ্যে থেকে আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজেকে উচ্চতর আসনে উন্নীত করেন। আধ্যাত্মিক সাধনায় প্রথমে তিনি মুফতিয়ে আযম শায়খ ফায়যুল্লাহ রাহ.-’র কাছে বায়আত হন। তাঁর ইন্তেকালের পর শায়খুল ইসলাম মাদানি রাহ.’র কয়েকজন খলিফার সাথে পরামর্শ, ইস্তেখারা ও দিলের রুজহানের কারণে হযরত শায়খে রেঙ্গা রাহ.’র কাছে বাইয়াত হন। শায়খুল হাদিস হবিগঞ্জী তাসাউফের উপর দীর্ঘদিন রিয়াযত ও মুজাহাদা করেন। এরপর এক সময় হযরত শায়খে রেঙ্গা রাহ. তাঁকে ইজাযত প্রদান করেন।
শুধু দারস-তাদরিস ও তাযকিয়ায়ে নাফসই নয়, শায়খুল হাদিস হবিগঞ্জী রাহ. রাজনীতির ময়দানেও সমান অবদান রেখেছেন। আমৃত্যু তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসলামি আন্দোলনের এক অগ্রণী নেতৃপুরুষ হিসেবে তিনি সারা দেশে নন্দিত ও সমাদৃত ছিলেন। ইসলাম ও মুসলিম জাতির স্বার্থে তাঁর নেতৃস্থানীয় ভূমিকা সুবিদিত।
শায়খুল হাদিস হবিগঞ্জী রাহ. ময়মনসিংহের বিখ্যাত আলিম হযরত মাওলানা আরিফ রব্বানি রাহ. {মৃত্যু-১৯৯৭সাল}’র ৪র্থ কন্যা আইনুন নাহার লুৎফার সাথে ১৯৬৭ সালে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। শায়খের ৬ ছেলে ও ৪ মেয়ে। এক ছেলে শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। বাকি সবাই যোগ্য আলিম ও আলিমা হয়ে দ্বীনের বহুমুখী খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে:
১. تحذير الإخوان عن صحبة الأمارد والصبيان (ছোট বাচ্চাদের সাথে মিলামিশা করা থেকে সতর্কিকরণ): পুস্তিকার উপর মুফতি ফয়জুল্লাহ ও শাইখ কুরবান আলীর অভিমত লেখা আছে। মূল গ্রন্থটি উর্দূতে লেখা।
২. جواهر الأدب في لسان العرب : এটি আরবী ভাষায় কাছাকাছি বিভিন্ন শব্দের আভিধানিক পার্থক্যের উপর লিখিত গ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রায় আড়াইশ পৃষ্ঠার। মাওলানা তাহমিদুল মাওলার টীকা ও সম্পাদনায় গ্রন্থটি ছেপেছে মাকতাবাতুল আযহার।
৩. হয়রত লোকমান আ. এর সতর্কবাণী।
৪. হাফিযুল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ.এর জীবনী।
৫. দরসে হুজ্জাতুল্লাহ : হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা কিতাবের দরসের সংকলন। (অপ্রকাশিত)
৬. মনীষীদের স্মৃতিচারণ।
৭. تحرير الأسانيد: এটি হবিগঞ্জীর বিভিন্ন হাদীসের গ্রন্থের সনদ ও ইজাযতের উপর লিখিত। গ্রন্থটি সংকলন করেছেন মাওলানা তাহমিদুল মাওলা। (অপ্রকাশিত)
শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তিনি ৫ জানুয়ারী ২০২০ মৃত্যুবরণ করেন। একদিন পর উমেদনগর মাদ্রাসায় তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন তার বড় ছেলে মাসরুরুল হক। তার জানাযায় কয়েক লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
৩. মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের রহ.
চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফের মুহাদ্দিস মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের ২০ মে ইন্তেকাল করেন। প্রচারবিমুখ এই আলেম অত্যন্ত পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি মহেশখালীর অন্তর্গত কালাগাজির পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পাঁচ ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
১৯৮০ সালে পটিয়া মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। চার ছেলে ও দুই কন্যার জনক মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের কক্সবাজার খুরুশকুল মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে ৮ বছর শিক্ষকতা শেষে ১৯৮৮ সালে আল্লামা সুলতান যওক নদভীর আহবানে সাড়া দিয়ে দারুল মাআরিফে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এখানে ৩২ বছর শিক্ষকতা করেন। লেখক ও কবি হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। তাকে জামেয়া দারুল মাআরিফের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
৪. আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ.
আযহার আলী ১৯৪৭ সালের ২ জানুয়ারি কিশােরগঞ্জের শহীদি মসজিদ সংলগ্ন পৈতৃক বাসায় জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম আতহার আলি, তিনি নেজামে ইসলামী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পূর্ব বাংলা আইনসভার সদস্য ছিলেন।
তিনি স্বীয় পিতার কাছে শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন। পিতার খলিফা নিছার আলীর কাছে ধর্মীয় এবং মাস্টার আব্দুর রশীদের কাছে সাধারণ বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তার পিতার প্রতিষ্ঠিত আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায় হাফেজ নূরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে কুরআনের হেফজ শেষ করেন।
একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৬৪ সালে আব্দুল হক কাসেমির তত্ত্বাবধানে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তারপর পিতার নির্দেশে তিনি পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করেন । ১৯৬৭ সালে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের অধীনে কেন্দ্রীয় দাওরায়ে হাদীস ( মাস্টার্স ) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে : মুহাম্মদ ইউসুফ বান্নুরি, ওয়ালী হাসান টুকী, মুহাম্মদ ইদরিস মিরাঠী, আব্দুল্লাহ দরখাস্তী সহ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়া ১৯৬৬ সালে মিশর থেকে পাকিস্তানে আগত আতা সােলাইমান রিযক্ব আল মিশরী ও ইবরাহীম আব্দুল্লাহর কাছে তিনি কুরআনের ক্বেরাতের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর ১৯৬৮ সালে তিনি আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায় শিক্ষক হিসেবে যােগদান করেন । স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্যোগকালে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কিছুদিন ব্যবসা করেন। ১৯৭৫ — ৭৬ সালে জামিয়া ইসলামিয়া মােমেনশাহীতে শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৭৭ সালে পুনরায় আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায় যোগদান করেন। ১৯৭৯ সালে অত্র জামিয়ার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৮৩ সালে পরিচালক পদে উন্নীত হয়ে মৃত্যু অবধি এই দায়িত্বে ছিলেন।
এর পাশাপাশি তিনি শহীদি মসজিদের মুতাওয়াল্লী , ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন । তিনি নুরুল উলুম কুলিয়ার চর মাদ্রাসা ও জামিয়া ইসলামিয়া গাইলকাটা মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন । সেই সাথে তিনি পটিয়া মাদ্রাসা , ভাস্করখিল মাদ্রাসা , আব্দুলাহপুর মাদ্রাসা , বারইগ্রাম মাদ্রাসা , ইসলামপুর মাদ্রাসাসহ বহু মাদ্রাসার মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন।
তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি , আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের সদস্য , তানযীমুল মাদারিস (আঞ্চলিক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বাের্ড ) বৃহত্তর মােমেনশাহীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি , কিশােরগঞ্জ ইমাম ও উলামা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি , দাওয়াতুল হক কিশােরগঞ্জ ও দাওয়াতুল কোরআন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি আশরাফ আলী থানভীর খলীফা আবরারুল হক মক্কীর নিকট বায়আত গ্রহণ করেন । ২০০৪ সালে তার কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন। এছাড়াও তিনি যাদের কাছে খেলাফত পেয়েছেন : জাফর আহমদ উসমানীর খলীফা খাজা শামছুল হক, কিশোরগঞ্জ। আতহার আলির খলীফা আব্দুল মান্নান, সিলেট। আব্দুল ওয়াহহাবের খলীফা ফয়জুর রহমান, মােমেনশাহী। আসআদ মাদানীর খলীফা এহসানুল হক সন্দ্বীপি, চট্টগ্রাম।
তার প্রকাশিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে : তথাকথিত আহলে হাদীস ফিতনার জবাব, কিছু বিক্ষিপ্ত কথা, খুতবাতে শায়খ আনোয়ার শাহ, সমকালীন সমস্যাবলির শরয়ী সমাধান, স্মৃতির আয়নায় প্রিয় মুখ।
তিনি ১৯৭৬ ও ২০০০ সালে দুইবার হজ পালন করেন। ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়া , ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে শিক্ষা সফর করেন । ১৯৮৭ সালে ইরাকের তৎকালীন ধর্মমন্ত্রীর দাওয়াতে তিনি ইরাক সফর করেছিলেন । ১৯৯৪ সালে আবরারুল হক মক্কীর সান্নিধ্যে লাভের জন্য ভারত সফর করেছিলেন। ২০০০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ২০০৩ সালে শাহ হাকীম আখতারের ছেলে মাযহারের দাওয়াতে তিনি পাকিস্তান সফর করেছিলেন।
তিনি ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে ইবনে সিনা হাসপাতাল, ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন তার ছোট ছেলে আনজার শাহ তানিম। তার জানাযায় প্রায় ৫ লক্ষ লোক অংশগ্রহণ করে। জানাযা শেষে শোলাকিয়াস্থ বাগে জান্নাত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
৫. শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল হাই রহ.
২০২০ সালের ২৮ মার্চ সিলেটের বরেণ্য আলেম ও বাংলাদেশের প্রবীণ আলেমদের মধ্যে অন্যতম শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল হাই ইন্তেকাল করেন। নিজ বাড়ির পাশেই মারকাজু তালীমিন্নিসা বংশিবপাশা, আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ নামে একটি মহিলা দ্বীনী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। একই সাথে তিনি সিলেটের একাধিক মাদরাসার শায়খুল হাদীস ছিলেন।
২৮ মার্চ ১২ টা ৩০ মিনিটে এই বর্ষিয়াণ আলেম নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৮ বছর। তিনি পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তান সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন গুনাগ্রাহী ও ছাত্র রেখে যান ।
৬. আল্লামা আব্দুল মোমিন রহ. (শায়খে ইমামবাড়ি)
৮ এপ্রিল বুধবার রাতে ইন্তেকাল করেছেন উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর খলিফা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি ও জামেয়া দারুল কোরআন সিলেটের শায়খুল হাদিস, প্রখ্যাত বুযুর্গ পীরে কামেল আল্লামা শাহ আব্দুল মোমিন (শায়খে ইমামবাড়ি)।
৮ এপ্রিল রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ গৃহে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯৯ বছর। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন তিনি বিভিন্ন শারিরীক অসুস্থতায় ভুগেছেন।
৭. মুফতি ড. আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী রহ.
৮ এপ্রিল বুধবার বাদ মাগরিব ইন্তিকাল করেছেন, ইসলামী অর্থনিতিবিদ, শায়খুল হাদিস, মুফতি ড. আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী। তিনি কর্মজীবনে ঢাকা ইসলামপুর তাতিবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। এছাড়াও তিনি ঐতিহ্যবাহী মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস ছিলেন। এবং তিনি জামালুল কুরআন মাদরাসা গেন্ডারিয়ায় বুখারীর দরস দিতেন । তিনি ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফির শীর্ষস্থানীয় খলিফাদের মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়াও তিনি সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও ট্রাস্ট ব্যাংক শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন ।
৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুর্মিটোলা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর।
৮. মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী রহ.
১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় ইন্তেকাল করেছেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ মাওলানা সৈয়দ মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী (মির্জাপুরের পীর সাহেব)।
মৃত্যুকালে মরহুমের বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে ও দীর্ঘদিন শারিরীক অসুস্থতায় ভুগে তিনি ইন্তেকাল করেছেন।
৯. মাওলানা আবদুর রহীম বুখারী রহ.
১৬ এপ্রিল ইন্তেকাল করেছেন মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুর রহীম বুখারী। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম আল্লামা মুফতি আব্দুল হালিম বোখারীর ছোট ভাই। আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ-এর পরিদর্শক ও চকরিয়া ইমাম বোখারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। দার্শনিক রাজনীতিবিদ খতীবে আজম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ. এর একান্ত শিষ্য, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা, পাণ্ডিত্যের অধিকারী আলেম ও সুবক্তা ছিলেন।
তিনি ১৬ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
১০. আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী রহ.
১৭ এপ্রিল ইন্তেকাল করেছেন, বিশ্ব নন্দিত মুফাচ্ছিরে কুরআন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির, বি-বাড়ীয়ার বেড়তলা জামিয়া রাহমানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী।
তিনি ১৭ এপ্রিল মাগরিবের পূর্বে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো আনুমানিক ৭০ বছর। মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি দেশ বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি দীর্ঘ সময় আমেরিকায় ছিলেন। তার বেশ কয়েকবার অপারেশন এবং কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিলো। সর্বশেষ গত কয়েক মাস ধরে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী বাংলদেশের একজন প্রখ্যাত ওয়ায়েজ। তিনি প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি দাওয়াতী ময়দানে কাজ করেছেন। দাওয়াতী কাজে সফর করেছেন ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ।
১১. শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী রহ.
বৃহত্তর সিলেট বিভাগের শীর্ষ আলেম মাওলানা আবদুল মুমিত (৭২) ঢেউপাশী ২৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মাওলানা আবদুল মুমিত দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তিনি সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ঢেউপাশা গ্রামের নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য সিলেট নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। প্রচারবিমুখ সাদাসিধে জীবনের অধিকারী এই আলেম হাদিসের দক্ষ শিক্ষক হিসেবে কওমি অঙ্গনের মাদরাসাগুলোতে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। বুধবার (২৯ এপ্রিল) দেশব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন বিবেচনায় পারিবারিকভাবে জানাজা শেষে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী ১৯৪৮ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ঢেউপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে বৃহত্তর সিলেটের শীর্ষ কওমি মাদরাসা গহরপুর থেকে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন। পারিবারিক জীবনে ৬ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী ছিলেন সবার বড়। তিনি ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক।
১২. আল্লামা আবদুল আলীম আল-হুসাইনী রহ.
১৮ মার্চ রাত ইন্তেকাল করেন নারায়ণগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী হাজীপাড়া মাদরাসার শাইখুল হাদীস ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দীন আল্লামা আবদুল আলীম আল-হুসাইনী। তিনি তিনি ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম, ইংরেজ খেদাও আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার, শাইখুল আরব ওয়াল আজম, সাইয়িদ হুসাইন আহমাদ মাদানী র. -এর দীর্ঘ আট বছর সান্নিধ্য পাওয়া একজন সুযোগ্য শাগরিদ ও হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমাদ শফী দা.বা. -এর সহপাঠী ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ১০৪ বছর।
দীর্ঘ ত্রিশ বছর যাবত দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় বুখারী শরীফের দরস দিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ মারকাযুল উলূম আল ইসলামিয়া হাজীপাড়া মাদরাসায় তের বছর যাবত শাইখুল হাদীস হিসেবে বুখারী শরীফের দরস দিচ্ছিলেন।
এদিন রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন।
১৩. মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি রহ.
১ মার্চ, ১৯৩৬। নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার অন্তর্গত পূর্ব সৈয়দ নগরে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি। বাবার নাম মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং মাতার নাম মোসা. জোবেদা খাতুন।
শিক্ষাজীবন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি এর বয়স যখন ছয় বছর, তখন তার মা-বাবা ইন্তেকাল করেন। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন তিনি। তার কোন আপন ভাইবোন ছিলো না। ছিলো না কোন আপন চাচাও। এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন ঐতিহ্যবাহী কুমরাদী ফাজিল মাদ্রাসার হেড মাওলানা সিরাজুল ইসলাম রহ. তাকে কুমরাদী ফাজিল মাদরাসায় ভর্তি করান। এক বাড়িতে লজিং থেকে শুরু হয় তার প্রাথমিক লেখাপড়া। লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য কারো কাছে হাত পাততেন না। প্রথমে সম্পত্তি বর্গা দিয়ে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে লেখা পড়া চালিয়ে যেতেন। পরবর্তীতে লেখাপড়া করার জন্য সম্পত্তি বিক্রি করে দেন।
কুমরাদী ফাজিল মাদরাসা থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে দাখিল, আলিম, ফাজিল পাশ করেন। উক্ত মাদরাসায় তার সাথে লেখাপড়া করতেন মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী, মাওলানা আব্দুল জলিল, মাওলানা আব্দুল আহাদ মোল্লা। ছাত্র জীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কুমরাদী মাদরাসার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং তৎকালীন জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া করতেন।
তারপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল পাশ করেন।
১৯৭০ সালে বিয়ে করেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামি। তার স্ত্রীর নাম খাদিজা বেগম। তাদের দুজনের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় দুই ছেলে, দুই মেয়ে। দুই ছেলে— মো. ওবায়দুল হক, মোহাম্মদ ফারুক। দুই মেয়ে—শাহিনা আক্তার, হালিমা আক্তার।
দৈনিক অবজারভার পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংবাদিকতা। তারপর দৈনিক শক্তি, পিপলস-সহ আরো বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। হাইস্পিড গ্রুপে স্টেনু গ্রাফার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় আশির দশকে বাংলাদেশ শাইখুল ইসলাম আল্লামা আতহার আলী রহ. এর হাতে গড়া উপমহাদেশের ইসলামি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগদান করেন।
সাংবাদিকতা ও কর্ম জীবন শেষে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিয়ে ইসলামি রাজনীতির অঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। এবং নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম ও ৭ টি ইসলামি রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেন। ইসলামী ঐক্যজোট গঠনকালে উলামায়ে দেওবন্দ আল্লামা আশরাফ আলী ধরমন্ডলী, শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, সৈয়দ মো. ফজলুল করিম, মুফতি ফজলুল হক আমিনি, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামি রহ. মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে মিনার প্রতীক নিয়ে সিলেট থেকে মাওলানা ওবায়দুল হক এমপি নির্বাচিত হন। মাওলানা নেজামি প্রথমে ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব এবং পরবর্তীতে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. যখন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে অমায়িক সুন্দর চরিত্রের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য হিসেবে তিনিও মহাসচিব নির্বাচিত হন। তারপর সৈয়দ মো. ফজলুল করিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনিও তার মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপিতে যোগদান করেন। তারপর ইসলামী ঐক্যজোট থেকে ৪ জন এমপি নির্বাচিত হন। মুফতী আমিনি রহ. যখন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তখন থেকে তার ইন্তেকাল পর্যন্ত ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব হিসেবে সুনামের সাথে ১ যুগেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলাম পার্টিকে সারা দেশে প্রতিষ্ঠা করেন। এবং ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বরে মুজাহিদে মিল্লাত মুফতি আমিনি রহ. ইন্তেকালের পর ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি হিসেবে আমৃত্যু এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্ণাঢ্য জীবনের শেষে ১৭ রমজান, ১১ মে, ২০২০ ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ৬ টা ৩৫ মিনিটে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, নেতা, কর্মী, ভক্তদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে মহান রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দেন।
১৪. আল্লামা শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব রহ.
তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম কওমি মাদ্রাসা আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরির মুহতামিম ও কওমি মাদ্রাসার সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি।
তিনি ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার অন্তর্গত জিরি ইউনিয়নের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা আব্দুল জাব্বার দারুল উলুম হাটহাজারীর শিক্ষক ছিলেন। সাত বছর বয়সে তার পিতা মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর চাচা শাহ আহমদ হাসান তার লালন পালন করেন। তার মায়ের নাম সালমা খাতুন।
তিনি ১৯৬৮ সালে আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। জামেয়া জিরিতে চার বছর তিনি আব্দুল ওয়াদুদ সন্দ্বীপির সান্নিধ্যে ছিলেন। তার কাছে সহীহ বুখারী ও সুনান আত-তিরমিজী অধ্যায়ন করেছেন। তার অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন জামিয়া জিরির ২য় মুহাদ্দিস আল্লামা ছালেহ আহমদ, আল্লামা আবুল খাইর, জামিয়া জিরির সাবেক পরিচালক মুফতি নুরুল হক, হাফেজ ফজল আহমদ, আল্লামা আহমদুল্লাহ কাসেমি সহ প্রমুখ।
শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর তিনি স্বীয় উস্তাদ আবদুল ওয়াদুদ সন্দীপির পরামর্শে আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরিতে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। জামিয়া জিরিতে কিছুকাল শিক্ষকতা করার পর কক্সবাজার মাছুয়াখালী মাদরাসায় বদলি হন। এই মাদ্রাসায় দুই বছর প্রধান পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর পুনরায় জামিয়া জিরিতে চলে আসেন।
১৯৮৭ সালে মুফতি নুরুল হক মৃত্যুবরণ করলে তিনি জামিয়া জিরির মুহতামিম নিযুক্ত হন। আমৃত্যু এই পদে ছিলেন। জামিয়া জিরিতে তিনি তাফসির বিভাগ , ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ এবং কেরাত বিভাগের সূচনা করেন। তিনি এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেন।
জামিয়া জিরির পাশে “শারজাহ চ্যারিটি হাসপাতাল” নামে একটি দাতব্য হাসপাতাল নির্মাণ করেন। তিনি “খানখায়ে আবরারিয়া” নামে একটি খানখাহ প্রতিষ্ঠা করেন। জামিয়া জিরির মসজিদ “মসজিদে ত্বোবা” তার আমলে নির্মিত হয়। তিনি ভিংরোল জামেয়াতুল উলুম সহ পাঁচটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি সারাবছর ওয়াজ-মাহফিলে অংশ নিতেন।
তার সহধর্মিণীর নাম লুৎফুন্নিসা বিনতে আব্দুস সামাদ। তার তিন ছেলে ও চার মেয়ে। ২য় ছেলে মাওলানা খোবাইব পিতার মৃত্যুর পর জামিয়া জিরির মুহতামিম নিযুক্ত হন।
আশরাফ আলী থানভীর খলিফা আবরারুল হক রহ. এর নিকট তিনি মদিনায় বায়আত গ্রহণ করেন। এর কয়েক বছর পর খেলাফত লাভ করেন। কামরুজ্জামান এলাহাবাদীর সাথেও তার আধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল।
২০২০ সালের রমজানে তিনি মসজিদে ইতেকাফ নিয়েছিলেন। ইতেকাফ শেষে অসুস্থতা বোধ করলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৪ মে দিবাগত রাতে হাসপাতালে সেজদারত অবস্থায় তিনি মৃৃৃৃত্যুবরণ করেন। পরদিন জুনায়েদ বাবুনগরীর ইমামতিতে জামিয়া জিরির মাঠে তার জানাযা সম্পন্ন হয়। তাকে মাকবারায়ে আহমদ হাসানে দাফন করা হয়।
১৫. মুফতি ওবায়দুল মাতিন রহ.
ঠাকুরগাঁও গোয়ালপাড়া জামেয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমীয়া দারুস সালাম কওমি মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা মুফতি ওবায়দুল মাতিন ৫২ বছর বয়সে ১২ মে ইন্তেকাল করলেন। এর আগে তিনি বাংলাহিলি আজিজিয়া মাদরাসায় প্রধান মুফতির দায়িত্ব পালন করেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে তিনি দাওরায়ে হাদিস এবং ইফতা সম্পন্ন করেন। খুলনার খালিশপুরের একটি মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে ২ বসর দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাহিলি আজিজিয়া আনোয়ারুল উলুম মাদরাসা, হাকিমপুর, দিনাজপুরে যোগ দেন। সেখানে তিনি মুহাদ্দিস ও মুফতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এর পর যোগ দেন ঠাকুরগাঁও, গোয়ালপাড়া দারুসসালাম মাদরাসায়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন।
১৬. আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ ইদ্রিস রহ.
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জামিয়া আরাবিয়া নাছিরুল উলুম নাজিরহাট বড় মাদরাসার মোহতামিম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইদ্রিস ২৭ মে, বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ৭৯ বছল বয়সী এই আলেম বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর মাদরাসার মাঠে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর ইমামতিতে মরহুমের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ২০০৪ সালে আল্লামা শাহ শামসুদ্দিনের রহ.-এর ইন্তেকালের পর থেকে নাজিরহাট মাদরাসার মোহতামিমের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ ইদ্রিস।
১৭. মাওলানা আনওয়ারুল হক চৌধুরী রহ.
বৃহত্তর সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেম, বালাগঞ্জের হজরত শাহ সুলতান রহ. মাদরাসা এবং মহিলা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আনওয়ারুল হক চৌধুরী ১ জুন, সোমবার ভোর ৪টা ৫০মিনিটে সুলতানপুরস্থ নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ওইদিনই দুপুরে সুলতানপুর মাদরাসা প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা আনোয়ারুল হক চৌধুরী সিলেটে নারী শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। প্রচারবিমুখ, সুন্নতের অনুসারী প্রথিতযশা এই প্রবীণ আলেম আমৃত্যু ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আপামর জনতার মাঝে দ্বীনের প্রচার-প্রসারে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন।
১৮. মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ বাশার রহ.
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ বাশার ৮ জুন রাত ১১টায় স্ট্রোক করে মিরপুরস্থ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ২ কন্যা রেখে গেছেন। মঙ্গলবার বাদ জোহর মরহুমের জন্মস্থান পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার বড়ইঘনিয়া গ্রামে জানাজার নামাজ শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
১৯. মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর রহ.
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুফতি নূরুল্লাহ রহ.-এর বড় ছেলে মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর ১০ জুন, বুধবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর নরসিংদী রায়পুরা পান্থশালা মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন। নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় অনেক দ্বীনি খেদমতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তিনি সুবক্তা হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ।
২০. মাওলানা আবদুল কুদ্দুস রহ.
১৩ জুন ইন্তেকাল করেছেন ঐতিহ্যবাহী টুমচর সিনিয়র মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ ও লক্ষ্মীপুর চক বাজার জামে মসজিদের সাবেক খতিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস রহ.। বাধ্যকজনিত কারণে সদর উপজেলার টুমচর গ্রামে তিনি তার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তিনি বিখ্যাত ওয়ায়েজ মাওলানা মুশতাকুন নবীর বাবা।
তিনি ১০ পুত্র, ৩ কন্যা ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। ঐতিহ্যবাহী টুমচর সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে মরহুমের জানাজার নামাজ শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
২১. মাওলানা আবুল হাসান রহ.
৫ জুলাই রোববার ইন্তেকাল করেছেন হেফাজতে ইসলাম কক্সবাজার জেলা সভাপতি, জোয়ারিয়ানালা মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আবুল হাসান। তিনি বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছিলেন।
২২. আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.
উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেমে দ্বীন, বাংলাদেশের ইসলামি শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন শাহ আহমদ শফী; যিনি আল্লামা শাহ আহমদ শফী বা আল্লামা শফী নামেও পরিচিত। একাধারে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা সমূহের শীর্ষ সংগঠন আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া এর চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি, হেফাজতে ইসলামের আমির, আল-জামিয়াতুল আহলিয়া মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী চট্টগ্রাম মাদ্রাসার দীর্ঘ দিনের সম্মানিত মহাপরিচালক। তিনি ১৯১৫ সালে, মাতান্তরে আনুমানিক ১৯২০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বরকত আলী ও মায়ের নাম মেহেরুন্নেছা।
শাহ আহমদ শফী রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায় তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসায় কিছুদিন লেখাপড়া করেন। তারপর তিনি হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে দীর্ঘদিন অধ্যয়ন করার পর ১৯৪১ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন এবং চার বছর অধ্যয়ন করেন। এ সময় তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসাইন আহমদ মাদানির সংস্পর্শে আসেন এবং তার কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষালাভ করেন।
দারুল উলুম দেওবন্দে তিনি শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানি রহ. কাছে বুখারি, শায়েখ ইবরাহীম বেলওয়াবি রহ. এর কাছে মুসলিম, শায়েখ এজাজ আলী রহ. এর কাছে আবু দাউদ, শায়েখ ফখরুল হাসান রহ. এর কাছে নাসায়ী, জহুরুল হক দেওবন্দী রহ. এর কাছে মুয়াত্তায়ে মালেক এবং শায়েখ আব্দুজ জলিল রহ. এর কাছে মুয়াত্তায়ে মুহাম্মাদ এর দরস গ্রহণ করেন।
আল্লামা আহমদ শফী ১৯৪৬ সালে দেওবন্দ থেকে ফিরে বাড়িতে যাননি। সরাসররি এসে উপস্থিত হন দারুল উলুম হাটহাজারীতে। মাদরাসার তৎকালীন মুহতামীম শাহ আবদুল ওহহাব সাহেব রহ. তাকে বললেন, ‘হাটহাজারী থাকবে?’ আহমদ শফী বললেন, ‘আপনি বললে থাকবো।’ তারপর তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষকতা শুরু করেন। হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম ছিল–পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হতো। আগে কোথাও শিক্ষকতা করেছে এমন। কিন্তু আহমদ শফী ছিলেন একমাত্র শিক্ষক, যার পূর্ব অভিজ্ঞতা তালাশ করা হয়নি। শিক্ষা শেষ করার পর সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
১৪০৭ হি./১৯৮৬ সালে মাদরাসার মজলিশে শুরা তাকে মহাপরিচালক বা মুহতামিম নিযুক্ত করে। পরবর্তীতে তিনি মাদরাসাটির শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও পান। তার পরিচালনার সময়ে তরতর করে উন্নতি হয় মাদরাসার। শিক্ষাগত এবং কাঠামোগত–দুটো ক্ষেত্রেই। তার পরিচালনার সময়েই মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষাচুক্তি হয়। এ চুক্তি অনুযায়ী হাটহাজারী মাদরাসার সার্টিফিকেট দিয়ে কেউ চাইলে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে।
২০০৮ সালে শাহ আহমদ শফী কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি কওমি মাদরাসাগুলোর সরকারি স্বীকৃতির দাবিতে অনুষ্ঠিত আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এর প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের (আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ) সমমান ঘোষণা করেন। তখন আইন অনুসারে কওমি মাদরাসার ৬টি বোর্ডের সমন্বয়ে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ গঠন করা হয়। এ বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও আহমদ শফীর উপর ন্যস্ত করা হয়।
২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আহমদ শফীর পদত্যাগ এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে মাদরাসা থেকে বহিষ্কারসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে দারুল উলুম হাটহাজারীর ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। দুপুর থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়, রাত্রে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরদিন আহমদ শফী পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশে সর্বাধিক প্রভাব রাখা আলেমদের একজন ধরা হয় আল্লামা শফীকে। দেশে অনসৈলামিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ও নাস্তিকদের শাস্তির দাবিতে তাঁর ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশে সর্বাধিক প্রভাব তৈরি করে। তিনি ১৯ জানুয়ারি ২০১০ সালে হাটহাজারী মাদরাসার এক সম্মেলনে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে দেশে নাস্তিক্যবাদী তৎপরতায় মুসলিম জনসাধারণের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেলে একটি খোলা চিঠি লিখে জাগরণ সৃষ্টি করেন আল্লামা আহমদ শফী । ৬ এপ্রিল ২০১৩ সালে তাঁর নেতৃত্বে ইসলাম ও মহানবী সা.-এর কটূক্তিকারীদের বিচারের দাবিতে ঢাকায় বৃহত্তম সমাবেশ হয়। অতঃপর ৫ মে ঢাকাসহ পুরো দেশ অবরোধ করা হয়।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অনেকদিন। ভারতে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদ, ফারাক্কা বাঁধ নির্মানের প্রতিবাদ, তাসলিমা নাসরীন খেদাও আন্দোলনসহ সরকারের ফতোয়া বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে তৎকালীন সময়ে আল্লামা শফি ছিলেন প্রথম সারিতে।
স্ত্রী ফিরোজা বেগমের সঙ্গে পারিবারিক জীবন গড়েন আল্লামা আহমদ শফী। দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ পাখিয়ারটিলার মাদরাসার পরিচালক। ছোট ছেলে মাওলানা আনাস হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। মেয়েদের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে পাত্রস্থ করেছেন।
আল্লামা শফী ছিলেন ঊর্দু, ফার্সি, আরবি ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষায় একজন সুদক্ষ পণ্ডিত। তিনি বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে ৯টি বই রচনা করেছেন।
তার রচিত বাংলা বইগুলো হলো–হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, ইসলাম ও রাজনীতি, ইজহারে হাকিকত, মুসলমানকে কাফির বলার পরিণাম, সত্যের দিকে করুণ আহ্বান, ধূমপান কি আশীর্বাদ না অভিশাপ, একটি সন্দেহের অবসান, একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া, তাবলিগ একটি অন্যতম জিহাদ, ইছমতে আম্বিয়া ও মিয়ারে হক, সুন্নাত-বিদআতের সঠিক পরিচয়, বায়আতের হাকিকত।
তার রচিত উর্দু বইগুলো হলো–আল বয়ানুল ফাসিল বাইনাল হককে ওয়াল বাতিল, আল হুজাজুল ক্বাতিয়াহ লিদাফয়িন নাহজিল খাতেয়াহ, আল খায়রুল কাসির ফি উসুলিত তাফসির, ইসলাম ওয়া ছিয়াছত, তাকফিরে মুসলিম, চান্দ রাওয়েজাঁ, ফয়ুজাতে আহমদিয়া, সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফয়জুল জারি ও মিশকাতুল মাসাবিহের ব্যাখ্যাগ্রন্থ।
১৯ আগস্ট ২০০১ সালে ওমরা পালনকালে হারামাইন শরিফাইনের মহাপরিচালক শায়খ সালেহ বিন আল হুমাইদ পবিত্র কাবার গিলাফের একটি অংশ উপহার প্রদান করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় সিরাত কমিটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁকে ‘শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। এ ছাড়া দেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন তাঁকে নানা সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে শাহ আহমদ শফী বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
পরদিন হাটহাজারী মাদ্রাসায় তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন তার বড় ছেলে ইউছুফ মাদানি। স্থান সংকুলান না হওয়ায় তার লাশ ডাকবাংলোতে নিয়ে আসা হয়। পুরো হাটহাজারীর সব প্রবেশ পথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিতে প্রশাসন বাধ্য হয়। ৪ উপজেলায় ১০ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ এবং ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়। জানাযা শেষে তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে দাফন করা হয়। মিডিয়া এটিকে বাংলাদেশের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জানাযা বলে অবহিত করে।
২৩. মাওলানা আবুল কাশেম রহ.
১৮ অক্টোবর রোববার ইন্তেকাল করেছেন ফেনী জেলা হেফাজতে ইসলামের আমীর ও জহিরিয়া মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল কাশেম। রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
মাওলানা আবুল কাশেম জীবদ্দশায় ফেনী পৌর ইমাম কমিটির সভাপতি ছিলেন। এর আগে দীর্ঘদিন তিনি ফেনী কোর্ট মসজিদের খতিব ছিলেন।
২৪. আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহ.
১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারী মোতাবেক ১৮ আষাঢ় ১৩৫৩ বঙ্গাব্দ রোজ শুক্রবার বাদ জুমআ কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি বাবা-মায়ের কাছেই প্রাথমিক শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করেন। তার বাবা পাড়ার অন্যান্য ছেলেদের সাথে প্রথমে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। বাড়ির পাশেই ছিলো স্কুল। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এ স্কুলেই তিনি পড়াশুনা করেন।
তারপর তিনি চড্ডার পাশের গ্রামে কাশিপুর মাদরাসায় ভর্তি হোন। এখানে মুতাওয়াসসিতাহ পর্যন্ত পড়েন। তারপর বরুড়ার ঐতিহ্যবাহী মাদরাসায় ভর্তি হোন। সেখানে হেদায়া পর্যন্ত পড়েন। বর্তমান সময়ের অন্যতম রাহবার আল্লামা তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জী সাহেবের কাছে খুসুসীভাবে এ সময় তিনি দরস লাভ করেছেন। (তাঁকে উস্তাদের মর্যাদায় সর্বদা দেখেন তিনি)
বাবার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও তাঁর অগাধ প্রতিভার ফলে উচ্চ শিক্ষার জন্য তখন বিশ্ববিখ্যাত বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দে পাড়ি জমান। কিন্তু ভর্তির নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পারায় সাহারানপুর জেলার বেড়ীতাজপুর মাদরাসায় ভর্তি হোন। সেখানে জালালাইন জামাত পড়েন।তারপর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও ইলমী পিপাসাকে নিবারণের জন্য ভর্তি হোন দারুল উলুম দেওবন্দ এ। দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে তাঁর মেধার স্বাক্ষর প্রতিফলিত হতে থাকে। ধারাবাহিক সফলতা তাঁর পদচুম্বন করতে থাকে।
এখানে তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠ আলেম আল্লামা ফখরুদ্দীন মুরাদাবাদী রহ. এর কাছে বুখারী শরীফ পড়েন। মুরাদাবাদী রহ. এর অত্যান্ত কাছের ও স্নেহভাজন হিসেবে তিনি সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ফলে অল্প সময়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাকমীল জামাত পড়ার পর আরো তিন বছর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডিগ্রি অর্জনে ব্যাপৃত থাকেন। এ সময় তাকমীলে আদব, তাকমীলে মাকুলাত, তাকমীলে উলুমে আলিয়া সমাপ্ত করেন।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দা.বা. তার ছাত্র জীবনে তখনকার সময়ের যুগশ্রেষ্ট উস্তাদদের কাছে দরস নেয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন হলেন মাওলানা সায়্যিদ ফখরুদ্দীন মুরাদাবাদী, মাওলানা মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী, মাওনানা শরীফুল হাসান, মাওলানা নাসির খান, মাওলানা আব্দুল আহাদ, মাওলানা আনজার শাহ, মাওলানা নাঈম সাহেব, মাওলানা সালিম কাসেমী রহ.সহ বিশ্ববরেণ্য ওলামায়ে কেরামের কাছে তিনি দরস লাভ করেন
দীর্ঘ ২৭ বছর যাবৎ অর্জিত জ্ঞানকে প্রচারের নিমিত্তে তার উস্তাদ মাওলানা আব্দুল আহাদ রহ. এর পরামর্শে হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতুবী রহ. এর প্রতিষ্ঠিত মুজাফফরনগর শহরে অবস্থিত মুরাদিয়া মাদরাসায় অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। মুরাদিয়া মাদরাসায় ১ বছর শিক্ষকতা করার পর মাতৃভূমির টানে ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
দেশে এসে সর্বপ্রথম শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার নন্দনসার মুহিউস সুন্নাহ মাদরাসায় শায়খুল হাদীস ও মুহতামীম পদে যোগদান করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় যোগদান করে চারবছর সুনাম ও সুখ্যাতির সাথে শিক্ষকতা করেন। এ সময় তিনি অনেক মেহনতী, যোগ্যতাসম্পন্ন ও দেশদরদী ছাত্র তৈরি করেছিলেন।
ফরিদাবাদে দীর্ঘদিন পর্যন্ত দারুল ইকামার দায়িত্ব পালন করেন। তারপর ১৯৮২সালে চলে আসেন কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ রহ. প্রতিষ্ঠিত জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে। এখানে অত্যান্ত দক্ষতার সাথে তিরমিজি শরীফের দরস দান করেন। এখানে ৬ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৮৮ সাল থেকে অধ্যাবধি পর্যন্ত অত্যান্ত যোগ্যতা ও মেহনতের সাথে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা এবং ১৯৯৮ সাল থেকে অধ্যাবধি জামিয়া সুবহানিয়ার শায়খুল হাদীস ও মুহতামীমের দায়িত্ব আঞ্জাম দিচ্ছেন।
২০২০ সালের ৩ অক্টোবর তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সাথে তিনি আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর পূর্বে তিনি হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ছিলেন।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেব কিশোর বয়স থেকেই ইবাদাত প্রিয়। ইসলামী বিধিবিধানের প্রতি তার ঝোঁক বরাবর অবাক করার মতো। এ বৃদ্ধ বয়সে হুইল চেয়ার দিয়ে চলাচলকারী এ মানুষটি যেভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে নামাজ আদায় করেন তা যে কাউকে বিস্মিত করে।
তিনি শায়খুল হাদীস যাকারিয়া রহ. এর কাছে প্রথমে বায়আত হোন। তার সাথে রমজানে ইতেকাফ করেন। তখন তিনি মুরাদিয়া মাদরাসায় অধ্যাপনা করাতেন।
তার ইন্তেকালের পর মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. এর হাতে পুনরায় বায়আত হোন। এরপর ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন। মালিবাগ জামিয়ায় ইতেকাফ করেন। ইয়ারপোর্ট মাদরাসায় অবস্থান কালে তার কাছ থেকেই ১৯৯৫সালে খেলাফত লাভ করেন।
আল্লামা কাসেমী একজন দেওবন্দী মাসলাকের আলেম। সর্বদা সুন্নাতের অনুসরণ ও আকাবির আসলাফের দেখানো পথে চলেন। সাদাসিধে জীবন তার ঐকান্তিক ব্রত। রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীসের খেদমাত আর সমাজে ইলমে দ্বীন পৌঁছে দেয়ার জন্য সর্বদা মগ্ন থাকেন এ রাহবার। কালক্রমে তিনি এখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত। তার কাছে হজার হাজার মানুষের মুরীদ হওয়ার চাহিদা এবং অনেক পীড়াপীড়ির পরও তিনি বিষয়টিকে এড়িয়ে যান। কাউকে মুরীদ বানাতে আগ্রহী দেখানোতো অনেক দূরের বিষয়। তবে তার কাছে কেউ মুরীদ হতে এলে তিনি মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. এর জানেশ্বীন মুফতি ইব্রাহীম আফ্রিকী দা.বা. এর কাছে পাঠিয়ে দেন।
প্রচারবিমূখ এ আধ্যাত্মিক রাহবার আল্লামা কাসেমী তেমন কাউকে খেলাফত দেননি। তিনি খেলাফত লাভ করেছেন প্রায় ২০ বছর পূর্বে। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে মাত্র ৩ জন আলেমকে খেলাফত দিয়েছেন। তারা হলেন গাজীপুরের মাওলানা মাসউদুল করীম, সৈয়দপুরের মাওলানা বশির আহমদ ও মানিকনগরের মাওলানা ইছহাক।
রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি আকাবিরদের রেখে যাওয়া সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে যুক্ত। ১৯৭৫ সাল থেকেই তিনি জমিয়তের একনিষ্ঠ সক্রিয় কর্মী। স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘকাল জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মরহুম মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী রহ. এর নেতৃত্বে সকল আন্দোলনে শরীক থাকতেন। জমিয়তে তাঁর মাধ্যমেই যোগদান করেছিলেন। ১৯৯০ সালে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের গত ৭ নভেম্বর ২০১৫ ইংরেজী রোজ রবিবার জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে মহাসচিবের দায়িত্ব পান। এবং নিজস্ব মেধা, দক্ষতা ও পরামর্শের মাধ্যমে এ দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশের আলোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন খতমে নবুওয়াত আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখেন। এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানের আলোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর সম্মানিত সভাপতির দায়িত্বভার তাঁর উপর ন্যস্ত করা হয়। তিনি অত্যান্ত সূচারুরুপে অতীতের সকল দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন। বর্তমানেও প্রচুর শ্রম ও মেধা খাটিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সবগুলো ইস্যুতে চমৎকারভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি যেসব বিষয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তাতে সফলতা তার পদচুম্বন করেছে।
মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহ. পারিবারিক জীবনে ২ ছেলে মাওলানা যুবায়ের হুসাইন ও মাওলানা জাবের কাসেমী এবং দুই মেয়ের জনক ছিলেন।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ১৩ ডিসেম্বর বেলা ১ টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমে জানাযা শেষে টঙ্গীতে তার প্রতিষ্ঠিত সুবহানিয়া মাদরাসায় তাকে দাফন করা হয়।
২৫. মাওলানা রশীদ আহমাদ (লাকসামের হুজুর)
রবিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল পোনে ৪ টায় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন চাঁদপুরের জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানী মাদরাসার শাইখুল হাদীস, সুপ্রসিদ্ধ বক্তা হযরত মাওলানা রশীদ আহমাদ (লাকসামের হুজুর)। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর।
মাওলানা রশীদ আহমদ ছিলেন একজন দেশবরেণ্য আলেম ও প্রসিদ্ধ ওয়ায়েজ। কর্মজীবনে তিনি পুরান ঢাকার নয়াবাজার মসজিদে আয়শার খতীবের দায়িত্বও পালন করেছেন।
চাঁদপুরের উজানী মাদরাসায় প্রায় ৩০ বছর শিক্ষকতা করেছেন তিনি। উজানী মাদরাসার আসাতিযা-ত্বলাবা ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষের অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর ইখলাসপূর্ণ ও দরদমাখা বয়ান মানুষকে দারুণ প্রভাবান্বিত করতো।
আলবিদা
এই চলে যাওয়ার ধারা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। একজন আলেম চলে যাওয়া মানে মাথার ওপর থেকে একখণ্ড শীতল মেঘ সরে যাওয়া। একটি ঝলমলে প্রদীপ নিভে যাওয়া। এক এক করে বাংলাদেশ হারাচ্ছে তার ধর্মীয় অভিভাবক। আলো ও ছায়ার বটবৃক্ষ। শূন্যতা গ্রাস করছে, হাহাকার বাড়ছে। উল্লেখিত আলেম ছাড়া আরও অনেক আলেম, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনকে আমরা হারিয়েছি।
আমাদেরই প্রয়োজনে-কল্যানে তাদের বেঁচে থাকাটা খুব দরকার। দোয়ায় প্রার্থনায় তাদের বেঁচে থাকার মিনতি হয়ে উঠুক আমাদের কান্না, আমাদের অশ্রু। যারা চলে গেছে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে, তাদের মাগফেরাতের জন্য আমাদের হাত উঠুক মহামহিমের দরবারে। তার দরবার হতে, কেউ ফেরে না খালি হাতে।
The post ‘মাউতুল আলম’ : এ বছর যে আলেমদের আমরা হারিয়েছি appeared first on Fateh24.
from Fateh24 https://ift.tt/38pEgXI
No comments:
Post a Comment