ফাতেহ ডেস্ক:
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ায় গুলিতে নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় গত ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণে থেমে আছে বিচারকাজ।
সিনহা হত্যার দুই দিন পর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করেছিল চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস অনুসন্ধানের প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ জমা দেয়।
হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জনকে আসামি করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলার পরদিন ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
প্রথমে মামলাটি র্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আহমদকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তার পরিবর্তে র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত।
হত্যায় সংশ্লিষ্টতা পেয়ে পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে মামলার আরেক আসামি টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও গ্রেফতার করা হয়। পর্যায়ক্রমে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম তাদের রিমান্ডে নেন।
রিমান্ডের আসামিদের স্বীকারোক্তিতে আরও চার আসামিকে মামলায় যুক্ত করা হয়। এরপর ১৪ আসামিকে র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদের মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
চার মাস তদন্ত শেষে ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালের ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন এই মামলার একমাত্র পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেব। চলতি বছরের ২৭ জুন মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনপূর্বক সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।
মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলো- বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুল করিম, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব, মো. আবদুল্লাহ এবং সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
চলতি বছরের ২৭ জুন সব আসামির উপস্থিতিতে মামলার অভিযোগ গঠন করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। এর আগে মামলা তদন্তকালীন সময়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ও কনস্টেবলসহ এক হাজার ৫০৫ পুলিশকে বদলি করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সারা দেশের মতো কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্বাভাবিক কার্যক্রম না চলায় নির্ধারিত দিনে মেজর সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, মামলার সাক্ষী ৮৩ জন। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সাক্ষ্যগ্রহণসহ অন্যান্য বিচারপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই মামলায় বাদী পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পিছিয়ে নেওয়া হয় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন।
The post এক বছরেও শেষ হয়নি মেজর সিনহা হত্যার সাক্ষ্যগ্রহণ appeared first on Fateh24.
from Fateh24 https://ift.tt/3C2Q1B4
No comments:
Post a Comment