Tuesday, June 9, 2020

কবরের জায়গা সংকটে ইতালির মুসলমানরা

ফাতেহ ডেস্ক:

ভূ-মধ্য সাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইতালি। অন্য জনগোষ্ঠীর মতো প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়েও অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু গোরস্থানের জায়গা সংকট তাদের শোকের পরিমাণটা যেন বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েক গুন।

ইমাম ও মুসলিম কমিউনিটির নেতারা কর্তৃপক্ষের কাছে আরও বেশি ইসলামিক কবরস্থানের জায়গা চাচ্ছেন। দেশটির যেসব সমাধিস্থল রয়েছে সেখানে মুসলমানদের জন্য বাড়তি জায়গাও চাওয়া হয়েছে।

মিলানের একটি মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ টিসিনা এএফপিকে বলেন, “মহামারি সময়ের অভিজ্ঞতাটা আমরা অনুভব করতে পেরেছি। তবে এটা কখনো কখনো আরও গভীর, যখন কিছু পরিবার তাদের মৃত স্বজনকে কবর দেওয়ার জায়গা পায় না। কেননা শহর অঞ্চলের সমাধিস্থানগুলোতে মুসলিমদের জন্য কোনো অংশ বরাদ্দ নেই।”

ইতালিতে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর বেশির ভাগই উত্তরের শহরাঞ্চলের। দেশটিতে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার। অবশ্য গত কিছুদিন ধরে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে গত কয়েক মাস ধরে আকাশ পথসহ সব জায়গায় লকডাউন জারি করে ইতালি সরকার। ফলে কভিড-১৯ বা অন্য কোনো কারণ কোনো মুসলমান মারা গেলে আগের মতো তাদের মাতৃভূমিতেও পাঠানো যায়নি।

এসব মৃত মুসলমানদের ইতালিতেই কবর দিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ভালো সাড়া মেলে না। তাছাড়া ইতালিতে খোলা জায়গারও অভাব রয়েছে।

ইতালিতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪.৩ শতাংশ। তাদের বেশির ভাগেরই বাস দেশটির উত্তর দিকে। তাদের ৫৬ শতাংশই বিদেশি নাগরিকত্বধারী, যাদের অনেকেই এসেছেন উত্তর আফ্রিকা বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে।

তবে এই করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে যেসব মুসলমানের মৃত্যু হয়েছে তাদের কতজন ইতালিয়ান বা কতজন বিদেশি নাগরিক এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।

মিলানের উপকণ্ঠে ব্রুজ্জানোর একটি সমাধিক্ষেত্রের পাশে দাঁড়িয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী প্রায় ৫০ বছর বয়সী মুস্তাফা মুলাই। রোমান ক্যাথলিকদের এই সমাধিক্ষেত্রে মুসলিম সেকশনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া নিজের স্ত্রীকে দাফন করেছেন তিনি।

মুসলমান হয়েও রোমান ক্যাথলিকদের সমাধিক্ষেত্রে স্ত্রীকে কবর দেওয়া নিয়ে মুস্তাফা বললেন- “এটা হয়তো সৃষ্টিকর্তারই ইচ্ছা ছিল।”

মুস্তাফার জন্ম মরক্কোয়। ইতালিতে বাস করছেন ৩২ বছর ধরে। জানান, পায়ের একটি ছোট অস্ত্রোপচারের জন্য মিলানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তার স্ত্রীকে, সেখানেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

যে জায়গাটায় মুস্তাফার স্ত্রীকে কবর দেওয়া হয়েছে সেখানে চিহ্ন হিসেবে কোনো সমাধিপ্রস্তর রাখতে দেওয়া হয়নি। কেবল আয়তক্ষেত্রের মতো একটি বেড়া দেওয়া হয়েছে, অল্প দিনেই তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

ইতালিতে মুসলমানদের দাফন ব্যবস্থা জটিলই বটে। করোনার আগে কেউ মারা গেলে মৃতদেহগুলো তাদের আসল দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতো অথবা দেহগুলো দিনের পর দিন মর্গে ফেলে রাখা হতো। অনেক ক্ষেত্রে কবরের জায়গা খোঁজার আগ পর্যন্ত মৃতদেহ ঘরেই রাখতে হতো।

যদিও ইসলামি রীতি অনুযায়ী, কারও মৃত্যু হলে যত দ্রুত সম্ভব মৃতদেহ কবর দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

-এ

The post কবরের জায়গা সংকটে ইতালির মুসলমানরা appeared first on Fateh24.



from Fateh24 https://ift.tt/3hcP27i

No comments:

Post a Comment